ঢাকা | নভেম্বর ২০, ২০২৪ - ১১:২৬ অপরাহ্ন

জন্মদিন উদযাপনের কথা বলে হোটেলে নিয়ে হত্যা করেন স্বামী

  • আপডেট: Friday, August 12, 2022 - 9:13 pm

 

অনলাইন ডেস্ক: রাজধানীর পান্থপথের একটি আবাসিক হোটেলে চিকিৎসক জান্নাতুল নাইম সিদ্দিকাকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় তার স্বামী রেজাউল করিম রেজাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকার একটি মেস থেকে রেজাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব বলছে, ২০১৯ সালে ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্রে রেজা ও নিহত জান্নাতুলের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরিবারের অগোচরে ২০২০ সালের অক্টোবরে বিয়ে করেন তারা। তবে স্বামী রেজার একাধিক নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের জেরে মনোমালিন্য ও বাগবিতণ্ডা হয়। এ কারণে স্ত্রীকে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন রেজা। এজন্য কয়েকদিন ধরেই ব্যাগে ধারালো অস্ত্র বহন করছিল রেজাউল।

এর মধ্যে আজ শুক্রবার ঘটা করে জান্নাতুলের জন্মদিন উদযাপনের কথা বলে ১০ আগস্ট স্ত্রীকে নিয়ে পান্থপথের ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্ট হোটেলে ওঠেন রেজা। সেখানে রেজাউলের সঙ্গে বিভিন্ন নারীর সম্পর্ক থাকার বিষয়টি নিয়ে আবারও তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়। ওই সময় রেজাউল তার ব্যাগ থেকে ধারালো ছুরি বের করে জান্নাতুলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করেন। পরে জান্নাতুলের গলা কেটে হত্যার কথা র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে গ্রেপ্তার রেজা।

শুক্রবার কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজধানীর পান্থপথের একটি আবাসিক হোটেল থেকে নারী চিকিৎসকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী, শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও জখমের চিহ্ন ছিল। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব- ২ এবং র‌্যাব-৭ এর যৌথ অভিযানে চট্টগ্রাম মুরাদপুর এলাকা থেকে আসামি রেজাউল করিম রেজাকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডের সময় রেজার পরিহিত রক্তমাখা গেঞ্জি, মোবাইল, ব্যাগ এবং ওই চিকিৎসকের ব্যবহৃত মোবাইল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার রেজা হত্যায় নিজের সংশ্লিষ্টতার দায় স্বীকার করেছেন।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার রেজা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেন। এমবিএ চলাকালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরমধ্যে তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। পরে ২০২২ সালে জুন মাসে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগদান করেন তিনি।

রেজা র‌্যাবকে জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিকিৎসক জান্নাতুলের সঙ্গে পরিচয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২০ সালে অক্টোবরে বিয়ে করেন তারা। পরিবারের অগোচরে বিয়ে হওয়ায় তারা স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থান করতেন।

বিবাহিত সম্পর্কের মধ্যেও রেজার একাধিক নারীর সঙ্গে প্রেম সম্পর্ক ছিল। তা স্ত্রী জেনে যাওয়ায় মনোমালিন্য ও বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। বৈবাহিক সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে জান্নাতুল স্বামী রেজাকে কাউন্সেলিং ও আলাপচারিতার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বিভিন্ন সময় বাগবিতণ্ডার মধ্যে স্ত্রীকে প্রতিবন্ধক ভাবতে শুরু করেন। স্ত্রীকে চিরজীবনের জন্য সরিয়ে দিতে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন রেজা। পরিকল্পনা অনুযায়ী বেশ কিছুদিন ধরেই স্ত্রীকে হত্যার জন্য কাঁধের ব্যাগে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঘুরছিলেন রেজা।

গত ১০ আগস্ট চিকিৎসক স্ত্রী জান্নাতুলের জন্মদিন উদযাপনের কথা বলে পান্থপথের ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্টে নামক আবাসিক হোটেল নিয়ে যান। সেখানে অবস্থানকালে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কথা কাটাকাটি, বাগবিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় রেজা তার ব্যাগ থেকে ধারালো ছুরি বের করে ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে রেজা আরও জানিয়েছেন, হোটেল থেকে বেরিয়ে প্রথমে মালিবাগে তার বাসায় যান। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বের হয়ে একটি হাসপাতালে গিয়ে তার নিজের হাতের ক্ষত স্থান সেলাই করে এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। পরে আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে চট্টগ্রামে গিয়ে মুরাদপুরে আত্মগোপন করেন। এছাড়াও তিনি কীভাবে এই হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে পারবে সে জন্য একজন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগও করেন। এরমধ্যেই র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হয় রেজা। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।