ঢাকা | ডিসেম্বর ২১, ২০২৪ - ৭:৫৫ অপরাহ্ন

মান্দায় পটাশের সঙ্কট চড়া দাম অন্য সারের

  • আপডেট: Wednesday, August 3, 2022 - 9:50 pm

মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি: চলতি আমনের ভরা মৌসুমে চলছে রাসায়নিক সারের চরম সংকট। এরই মধ্যে সরকারিভাবে ইউরিয়া সারে কেজি প্রতি দাম বাড়ানো হয়েছে ৬ টাকা করে। অন্যদিকে দ্বিগুন দামে কিনতে হচ্ছে এমওপি (পটাশ) সার। তবে ব্যবসায়ীদের দাবী চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় বাজারে এমওপি সারের সংকট তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি নওগাঁর মান্দা উপজেলার হাট-বাজারে সার নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এসব সংকট ।

অন্যদিকে বাজারে টিএসপি ও ডিএপি সারের কোনো সংকট নেই। এরপরও এসব সার সরকারি দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। সেচের মাধ্যমে চারা রোপণ ও সার সংকটের কারণেও এ মৌসুমে আমন ধানের উৎপাদনে ব্যয় বাড়ার আশঙ্কা করছে কৃষক।

কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবছর আষাঢ় মাস জুড়েই ছিল চৈত্রের কাঠফাটা রোদের দাপট। শ্রাবণ মাসের অর্ধেক সময় গেলেও বৃষ্টির দেখা মেলেনি। এ অবস্থায় বাড়তি খরচের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কৃষক সেচের মাধ্যমে আমন ধানের চারা রোপণ শুরু করেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সারের বাজার অস্থির হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক।

সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, আমনের ভরা মৌসুমে সংকটের অজুহাতে বাজারে হঠাৎ করেই লাগামহীন ভাবে বেড়ে গেছে এমওপি (পটাশ) সারের দাম। সরকারি ভাবে প্রতিবস্তা পটাশ সারের দাম নির্ধারণ রয়েছে ৭৫০ টাকা। কিন্তু খোলা বাজারে ১৩০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকায় মিলছে পটাশ। ইউরিয়ার দাম বাড়ানোর কারণে ৮০০ টাকা বস্তার সার এখন কিনতে হচ্ছে ১১০০ টাকায়।

মান্দা উপজেলা বিসিআইসি ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বলেন, উপজেলায় বিসিআইসি ডিলারের সংখ্যা ১৫ জন। জুলাই মাসে এসব ডিলারেরা ৯০ বস্তা করে এমওপি সারের বরাদ্দ পেয়েছেন। বরাদ্দকৃত সার পেতে বিএডিসির অনুকূলে পে-অর্ডার করা হলেও পুরো সার সরবরাহ করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, এখনও অর্ধেক সার বিএডিসির কাছে পাওনা আছেন ডিলারেরা। আগস্ট মাসের বরাদ্দ এখনও পাওয়া যায়নি। তবে বাজারে টিএসপি ও ডিএপি সারের সংকট নেই, বিক্রিও হচ্ছে সঠিক দামে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সময়মত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সেচ দিয়ে এরই মধ্যে ১০ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। জমিতে চারা রোপণের ১০ থেকে ২০ দিনের মধ্যে সারের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশী। উপজেলায় এবারে ১৪ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে আউশের চাষ করেছেন কৃষক।

উপজেলার নুরুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক আলম হোসেন বলেন, তিনি ১০ বিঘা জমিতে আমন চাষ করছেন। এজন্য তিন বস্তা পটাশসহ সমপরিমাণ অন্যান্য সারের প্রয়োজন হবে। প্রত্যেক প্রকার সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমন চাষ নিয়ে ঝুঁকিতে পড়েছেন তিনি।

উপজেলার এনায়েতপুর কৃষক অমল চন্দ্র সরকার বলেন, সেচ দিয়ে জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করতে হয়েছে। এক বস্তা পটাশ সার কিনেছি ১৩৫০ টাকায়। ইউরিয়া সার কিনতে হচ্ছে ১১০০ টাকায়। এতে আমন ধান উৎপাদনের ব্যয় বাড়বে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, চাহিদার অনুপাতে বরাদ্দ কম হওয়ায় বাজারে এমওপি সারের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে কিছুটা বেশি দামের কিনতে হচ্ছে এ সার। তবে অন্যান্য সারের কোনো সংকট নেই।

কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সেচ দিয়ে আমন রোপণের কাজ শুরু করেন কৃষক। অন্যদিকে ইউরিয়া সারের দাম বাড়ানোর ফলে আমন উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে তাঁদের। উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে এবার বাজারদরের সামঞ্জস্য না হলে কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়বেন।