দেড়মাস পর কলেজে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার, ফুলের মালায় বরণ
অনলাইন ডেস্ক: নড়াইলে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনার এক মাস ১৫ দিন পর বুধবার দুপুরে তিনি কলেজে আসেন। কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করে নেন।
এ সময় অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘ দেড় মাস পর কলেজে আসতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। অতীত ভুলে নতুন উদ্দমে কাজ শুরু করতে চাই প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে। তার বিপদের সময় পাশে থেকে সহযোগিতার জন্য সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
এসময় নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যপক আব্দুস সালাম হওলাদার, জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্যা মাহফুজ, জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের পরিচালক (আইন) সিদ্দিকুর রহমান, জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের পরিচালক (কলেজ মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন) রফিকুল আকবর, নড়াইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচিন চক্রবর্তী, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি/দায়িত্বপ্রাপ্ত) মাহমুদুর রহমান, বিছালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হেমায়েত হোসেন ফারুক, সাবেক চেয়ারম্যান আনিচুর রহমানসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ধিরে ধিরে কলেজে আসতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে কলেজের কার্যক্রম। গত ২৪ জুলাই কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে ১৮ জুন কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ এক মাস ৫দিন বন্ধ থাকার পর ২৪ জুলাই কার্যক্রম শুরু হয়। ২৫ জুলাই থেকে এইস এসসির ক্লাস শরু হয়। তবে কলেজের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করায় তারা কলেজে আসছে না।
শিক্ষকরা জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে কলেজের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। শিক্ষকরা নিয়মিত যথাসময়ে কলেজে উপস্থিত হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতংক থাকায় সকলে উপস্থিত হচ্ছেনা। আমরা চেষ্টা করছি কলেজ বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে।
পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেসবুক আইডিতে নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে লেখেন-প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রীরাম। এ পোস্ট দেয়ার পর গত ১৮ জুন সকালে কলেজে আসেন রাহুল। এরপর তার বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বললেও সে পোস্ট মোছেনি রাহুল। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানান। এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজের সব শিক্ষকদের পরামর্শে রাহুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা করেন।
এরই মধ্যে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোঁড়ে। ঘটনার সময় ২ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। এ সময় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ও কর্মকর্তাদের সামনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর গলায় জুতার মালা পরিয়ে কলেজ থেকে বের করে পুলিশেরে গাড়িতে তোলা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়।
অপরদিকে কলেজ শিক্ষককে হেনস্তার ঘটনায় সদর উপজেলার মির্জাপুর ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক(এসআই) মোরসালিন বাদী হয়ে ১৭০ থেকে ১৮০ জন আজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্তু ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি/দায়িত্বপ্রাপ্ত) মাহমুদুর রহমান।