বিতর্কিত মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমা দুর্গাপুর থেকে পবায়
স্টাফ রিপোর্টার: দুর্গাপুর উপজেলার বিতর্কিত সেই মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুনের বদলির আদেশ হয়েছে। তিনি বদলী হয়ে পবা উপজেলায় যোগদান করবেন। এতেই আনন্দের বন্যা বইছে দুর্গাপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারিদের মধ্যে। অন্যদিকে পবা উপজেলায় তার যোগদানের কথা শুনে ওই অফিসের লোকজন আতংকিত হয়ে পড়েছেন। তবে এখনও তিনি দুর্গাপুর উপজেলায় অফিস করছেন।
জানা যায়, দুর্গাপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। সেসময় ওই উপজেলা গুলোতে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের শেষের দিকে তিনি তানোর উপজেলা থেকে দুর্গাপুর উপজেলায় যোগদান করেন। তিনি তানোর উপজেলায় প্রায় ৫ বছর চাকরি করেন। তার আগে তিনি চারঘাট উপজেলায় প্রায় ৬ বছর চাকরি করেন। চারঘাটে যাবার আগে ২০১০ সালের দিকে তিনি এই দুর্গাপুর উপজেলায় কয়েকমাস দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় দুর্গাপুরে হতদরিদ্রদের ঋনের টাকা বিতরন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে তার অফিসে মারপিটের ঘটনা ঘটে। সেই মামলা এখনও চলমান রয়েছে।
এদিকে চলতি বছর দুর্গাপুরে কিশোর-কিশোরী ক্লাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন পালন না করেই বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। গত ১৭ মার্চ দেশব্যাপী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন পালন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন করা হলেও সরকারের এই আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলন করে কিশোর-কিশোরী ক্লাব গুলোর মধ্যে বিতরণ করেননি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন। কিশোর-কিশোরী ক্লাবের দায়িত্বে থাকা জেন্ডার প্রমোটর ও প্রশিক্ষকদের সাথে কথা বলে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের আওতায় দুর্গাপুর উপজেলার ৮টি কিশোর-কিশোরী ক্লাবে গত ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন পালন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন করতে কেক ও ব্যানার বাবদ এক হাজার টাকা করে মোট ৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে ৮টি ক্লাবেই পৃথকভাবে কেক কাটার আয়োজন করার কথা থাকলেও কোনো ক্লাবেই কেক কাটা হয়নি। এমনকি কিশোর-কিশোরী ক্লাবে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টিও গোপন করে রাখেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন।
জানা গেছে, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) জয়ন্ত কুমার সিকদার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয়া হয় উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কাছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারী পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে ১৫ মার্চের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আইবাস কোড থেকে বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলন করে ক্লাব গুলোর মধ্যে এক হাজার টাকা করে বিতরণ করতে হবে। কিন্তু বরাদ্দকৃত ওই অর্থ উত্তোলন করা হলেও ক্লাব গুলোতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন পালনের জন্য বিতরন করেননি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন। অথচ অন্যান্য উপজেলার কিশোর- কিশোরী ক্লাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন পালন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন করতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
দুর্গাপুর পৌরসভা এলাকার কিশোর-কিশোরী ক্লাবের প্রশিক্ষক রাশেদ জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন পালন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন করতে কেক এবং ব্যানার বাবদ যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল তা তাঁদের দেয়া হয়নি।
এব্যাপারে জানতে চাইলে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর রাজশাহীর উপ পরিচালক শবনম শিরিন বলেন, বরাদ্দ কম থাকায় দুর্গাপুরের মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন কিশোর- কিশোরী ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে উপজেলা পর্যায়ে শিশু দিবসের অনুষ্ঠান করেছেন।
উল্লেখ্য, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন বিএনপি নেতা নাদীম মোস্তফার এক সময়ের সহচর পুঠিয়ার জিল্লুর রহমানের স্ত্রী বলে জানা গেছে।