শ্রাবণেও অনাবৃষ্টি, কৃষকের মাঝে হাহাকার
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি: নাটোরের লালপুরে আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণেও অনাবৃষ্টি আর খরায় ফসলের মাঠে কৃষকের মাঝে হাহাকার দেখা দিয়েছে। কাক্ষিত বৃষ্টির অভাবে আমনের বীজতলা পুড়ে গেছে। চারা রোপনের সময় পেরিয়ে যাওয়ায় কৃষকের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। দীর্ঘ অনাবৃষ্টি ও তাপদাহে জমি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। কৃষকেরা সেচযন্ত্র দিয়ে জমি তৈরি শুরু করেছেন।
কৃষকের বাড়ির আঙিনার চাল কুমড়ো আর ঝিঙে মাচায় সতেজ ডোগায় হলুদ ফুলের পরিবর্তে গাছ রোদে ঝিমিয়ে পড়েছে। মরিচের ফুল ঝরে যাচ্ছে। লেবুর গুটি শুকিয়ে পড়ে যাচ্ছে। খালবিলে পানি নেই। রোদে খেতের আখ ও পাট গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। ডোবানালায় পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া নিয়েও চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে পাট চাষিরা। অনেকে ভাড়ায় স্যালো দিয়ে সেচে পানিতে পাট জাগ দিচ্ছেন।
আট্টিকা-বেরিলাবাড়ি গ্রামের সাইদুর রহমান (৪২) বলেন, দুই বিঘা জমিতে বিরি-২৯ জাত ধানের চারা দিয়েছিলেন। বর্ষা মৌসুমে ধান লাগানোর জন্য বীজ তলায় ২০ কেজি ধানের বীজ বপন করেন। অতিরিক্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে না পেরে সম্পূর্ণ বীজতলা পুড়ে লাল হয়ে গেছে। অতিখরায় বীজতলা টেকাতে না পারায় ধান চাষ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
উপজেলার বিলমাড়িয়া গ্রামের পাটচাষি আবুল হোসেন বলেন, অনাবৃষ্টি-খরায় পাটগাছ মরে যাচ্ছে। দানা পরিপক্ব না হলেও পাট কাটতে হচ্ছে। পাট কেটে মাঠে ফেলে রেখেছিলেন। পানির অভাবে প্রতি বিঘা জমির পাটের জন্য ১ হাজার টাকা চুক্তিতে পুকুর ভাড়া করে পাট জাগ দিয়েছেন।
মাধবপুর গ্রামের কৃষক মাজদার রহমান বলেন, খরায় আমনের বীজতলা ও মাঠ পুড়ে গেছে। মাছচাষিরা পুকুর থেকে পানি তুলতে দিচ্ছে না। ধানের চারা রোপণের বয়স পেরিয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে এত দিনে ধান লাগানো প্রায় শেষ হয়ে গাছ শ্যামল বর্ণ ধারণ করত।
চাষী আলাউদ্দিন বলেন, এ বছরে ৪ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। পাটের ফলন বিঘা প্রতি ৬-৭ মণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চিন্তার মধ্যে রয়েছেন।
পদ্মা চরের কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেন, চাল কুমড়ো আর ঝিঙে মাচায় সতেজ ডোগায় হলুদ ফুলের পরিবর্তে গাছ রোদে ঝিমিয়ে পড়েছে। মরিচের ফুল ঝরে যাচ্ছে। লেবুসহ অন্যান্য সবজি গুটি শুকিয়ে পড়ে যাচ্ছে।
কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিন বিঘা জমিতে স্বর্ণা-৫ জাতের ধানের চারা রোপণ করেছেন। বৃষ্টির অভাবে ধানের চারা এবং গাছ মরতে বসায় ৪০০ টাকা বিঘা হারে পানি কিনে নিয়ে জমি চাষ ও ধানের চারা রোপণ করেছেন। এদিকে বোয়ালিয়া পাড়া বিলের তলদেশে অনাবৃষ্টিতে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়াই বিলে গরু ছাগলের চরণ ভূমিতে পরিনত হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আরিফুল জামান বলেন, এ বছর উপজেলায় ৭ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। পাট কাটার সময় বৃষ্টির অভাবে কৃষক পাট নিয়ে হতাশায় রয়েছেন। কৃষকদের রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে যেমন খরচ কম তেমনি পাটের মানও ভালো থাকে।
লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি রোপা আমন মৌসুমে হাইব্রিড, উফশী এবং স্থানীয় জাতের ধান রোপণের সময় চলছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ধানের বীজতলায় সম্পূরক সেচ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের। এতে কৃষকদের অতিরিক্ত খরচ গুনতে হবে।