ঢাকা | জুলাই ২৬, ২০২৪ - ৮:৩০ পূর্বাহ্ন

শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীর যৌন হয়রানি অভিযোগ

  • আপডেট: Friday, July 29, 2022 - 11:01 pm

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বাটুপাড়া কারিগরি ও বাণিজ্যিক ইনস্টিটিউটের ‘ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং’ ট্রেডের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রলোভন ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে এক ছাত্রীকে তিন বছর থেকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী ওই স্কুলছাত্রী শিক্ষক মাসুদ হোসেন সরকারের এমন পৈশাচিক ঘটনার চিত্র তুলে ধরেন।

অভিযুক্ত ওই শিক্ষক উপজেলার মৌগাছি ইউনিয়নের বাটুপাড়া গ্রামের মৃত সিদ্দিক সরকারের ছেলে এবং ওই ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষের চাচাতো ভাই। শুধু ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীই না আরও ৮ থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী তার যৌনহয়রানির শিকার হয়েছে। ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী সংবাদ সম্মেলনে নিজেসহ ওইসব শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকের নানা প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টার কথপোকথনের রেকর্ডও শোনান। সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা-মা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে স্কুলছাত্রী বলেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আমি বাটুপাড়া কারিগরি ও বাণিজ্যিক ইনস্টিটিউটের ‘ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং’ ট্রেডে ভর্তি হয়। আমার বাবা একজন ভ্যানচালক ও দরিদ্র মানুষ বলে ওই শিক্ষক আমার এলাকার হওয়ায় বিভিন্ন রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তার আশ্বাস ছিল আমার উপর লোলুপ দৃষ্টি। তিনি আমাকে বিয়ের প্রলোভনও দেন। ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ২০১৯ সালের ১০ মে বিকালে শিক্ষক মাসুদ (সম্পর্কে চাচা) আমাকে তার বাসায় দুধ দিয়ে আসতে ফোন করেন। সরল বিশ^াসে সন্ধ্যার দিকে আমি তার বাড়িতে দুধ দিতে যাই। ওই সময় তার বাড়িতে কেউ ছিলো না। আমি তার বাড়িতে গেলে আমাকে তার ঘরে দুধ দিয়ে যেতে বলেন। ফাঁকা বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে আমি ঘরে ঢুকলে দরজা বন্ধ করে দিয়ে আমাকে কুপ্রস্তাব দেয়। তার মুখে এমন কথা শুনেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করি।

কিন্তু তার রোষানল থেকে আমি রক্ষা পাইনি। ওইদিনই আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের বিষয়টি বাড়িতে বললে সে ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করে রাখার কথা বলে। এমনকি ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয়ে বিষয়টি প্রথমে পরিবারকে জানাইনি। এভাবেই আমার সঙ্গে জোরপূর্বক তার বিকৃত যৌনাচার চলছিল। তিনি বলেন, ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করা শুরু করি। কিন্তু সেখানে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। আমার ঠিকানা যোগাড় করে ৯ সেপ্টেম্বর বিকালে গাজীপুরে এসে আমাকে ‘ব্লাকমেইলিং’ করে কক্সবাজারে নিয়ে যান তিনি। সেখানে তিনি বলেন, আমার সাথে তিন দিন হোটেলে থাকলে আগের সব ভিডিও ডিলিট করে দেবো। পাশাপাশি সে আমার সাথে কোনোদিন যৌনাচারে লিপ্ত হবে না বলে ওয়াদা করে। এক পর্যায়ে কক্সবাজারের একটি হোটেল তার সঙ্গে থাকতে বাধ্য হই। এরপর বাড়িতে চলে আসার পরও তিনি কোন ভিডিও ডিলিট করেননি। বাড়িতে ফিরে আসার ১৫ দিন পর শিক্ষক মাসুদ আবারও উত্ত্যক্ত শুরু করে। ধর্ষণের কুপ্রস্তাব দিয়ে পূর্বের ভিডিও অন্য কোথাও রেখে দেয়ার কথা বলে। আবারও সে পূর্বের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।

এরপর ২০২১ সালে আমার এসএসসি পরীক্ষার আগে হঠাৎ ফোন করে বলে মাসে ৩ বার তাকে ধর্ষণ করতে না দিলে এসএসসি পরীক্ষায় ফেলসহ নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখাতে থাকে। এমন ভয়-ভীতি এবং জোরপূর্বক ধর্ষণ করার অডিও রেকর্ড আমার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। পরে ২০২১ সালে আমি এসএসপি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। কিন্তু একটি বিষয়ে আমাকে ফেল করিয়ে দেয়। সর্বশেষ গত ৮ ফেব্রুয়ারি আমাকে ধর্ষণের ভিডিওসহ যত রকমের ডকুমেন্ট আছে সব মুছে ফেলার কথা বলে কৌশলে রাজশাহী শহরে নিয়ে আসে। সেদিন নগরীর নওদাপাড়া স্টার হোটেলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। কিন্তু ধর্ষণের ভিডিও ডিলিট না করায় রাগ করে বাসায় চলে যাই। সর্বশেষ ৮ জুন সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে আমবাগানের দিকে যাচ্ছিলাম। তখন মাসুদ তার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়ির দরজায় ওঁৎ পেতে থেকে আমার হাত থেকে মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে যায়।

আমি ফোন নেয়ার জন্য ঘরের দরজায় গেলে জোরপূর্বক ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। তখন চিৎকারে আমার ভাতিজা দৌঁড়ে এসে উদ্ধার করে। এরপর মাসুদ তার বাড়িতে গিয়ে তার ভাই-ভাতিজা, স্ত্রী, মেয়ে, ভাবিসহ সবাই এসে আমাকেসহ বাবা-মাকে পিটিয়ে আহত করে। আহত অবস্থায় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। আমি অসুস্থ হয়ে পড়ায় রাত দেড়টার দিকে রামেক হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি হয়ে চার দিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরি। এই ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) দ্বারস্থ এমনকি কলেজের অধ্যক্ষের নিকট বিচার চেয়েও পাইনি। বাধ্য হয়ে গত মাসে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন আদালত-২ এ মামলা করেছি।

অভিযুক্ত শিক্ষক মাসুদ হোসেন সরকারের নিকট মুঠোফোনে এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সকল অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেই ফোন কেটে দেন। তারপর গতকাল শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অসংখ্যবার ফোন করা হলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। এ ব্যাপারে জানতে বাটুপাড়া কারিগরি ও বাণিজ্যিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আরজেদ হোসেন সরকারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানওয়ার হোসেন বলেন, ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী আমার কাছে এসেছিলো। দিনের পর দিন ব্লাকমেইলিং করে তাকে যে ধর্ষণ করা হয়েছে এমন বেশ কিছু অডিও রেকর্ড ও ছবি আমাকে দিয়েছে। কিন্তু এগুলো যেহেতু ক্রিমিনাল কেইস। তাই ভুক্তভোগীকে থানায় কিংবা আদালতে মামলা করতে বলেছি। হয়তো সে ন্যায়বিচার পাবে। সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা-মা উপস্থিত ছিলেন।