ঢাকা | ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪ - ১০:৩৫ অপরাহ্ন

বনজঙ্গল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শিয়াল

  • আপডেট: Wednesday, July 27, 2022 - 10:45 pm

 

এসএম সাইফুল ইসলাম (নওগাঁ) থেকে: নওগাঁর রাণীনগরে বনজঙ্গলে মাঠে ময়দানে এখন আর শিয়ালের তেমন আনাগোনা চোখে পড়েনা। সূর্য ডোবার সাথে সাথে শোনা যায় না পরিবেশ বান্ধব শিয়ালগুলোর সেই চিরচেনা হুক্কা হুয়া, হুক্কা হুয়া ডাক।

শান্ত স্বভাব আর অতি চতুর চার পা বিশিষ্ট এই প্রাণীর অবাধ বিচরণ লোকালয়ে দিনে দিনে কমে যাওয়ায় এই ডাক এখন আর এই প্রজন্মের কানে তেমন শোনা যায় না। তারপরেও মাঝে মধ্যে বাড়ির পার্শ্বে ঝোপ-ঝাড়ে ক্ষুধার কারণে বের হলেও মানুষের আক্রমনাত্বক মনোভাবের কারণে তাড়া খেয়ে আবার ছুটতে হয় দূরে কোন নিরাপদ আবাসস্থলে।

গাছপালা ঝোপ-ঝাড় মানুষ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে পরিবেশের বিরুপ প্রভাবে গ্রামীন জনপদে নিরাপদ আবাসস্থল না থাকায় এই প্রাণীটি দিন দিন কমে যাচ্ছে।

তার পরও বন কর্মকর্তারা বলছে, শিয়াল নামে এই প্রাণীটি এখনো স্বাভাবিক পর্যায়ে আছে। তবে জনসাধারণদের সচেতন করা এবং প্রজননের মৌসুমে এই প্রাণীদেরকে নিরাপদ রাখতে পারলে খুব তাড়াতাড়ি আগের মতো এর বিস্তার ঘটানো সম্ভব। শুধু আইন করেই এই সমস্ত পরিবেশ বান্ধব প্রাণীদেরকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন শুধু মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করাতে হবে, যেন আমরা বুঝতে পারি আমাদের প্রয়োজনে এই প্রাণীগুলোর জন্ম।

সন্ধা রাতেই বনজঙ্গল ঝোপঝাড় ও গর্ত থেকে দল বেঁধে বের হয়ে টানা হুক্কা হুয়া ডাকে মাতিয়ে তোলে পুরো এলাকা। গ্রামগঞ্জে শিয়ালের এমন ডাকে আগের গৃহস্থ ও বাড়ির বধূরা মুরগির ঘর গোওয়াল ঘরের দরজা বন্ধ করে দিত। শিয়ালের সাধারণ বুদ্ধি এবং চতুরতা এতটাই বেশি যে বন জঙ্গেলে যেখানেই থাকুক না কেন কৌশলে লোকালয়ে প্রবেশ করে শিকার নিয়েই ফিরবে। এই মহুর্তে আমাদের দেশে দুই জাতের শিয়াল দেখা মেলে। যেমন পাতি শিয়াল ও খেঁক শিয়াল। এরা চতুর তবে ভীতু।

এদের আবাসস্থল বনাঞ্চল কেটে উজার করে দেয়ায় গ্রামে পুকুরের সংখ্যা ও কাশবন কমে যাওয়ায় শিয়াল গর্ত করে কবরস্থানের জঙ্গলে এবং গ্রামীন জনপদের বিভিন্ন ফসলাদি জমির আইল ধারে এদের বিচরণ অনেকটাই কমে গেছে। শিয়াল মাংস খেকো প্রাণী। তাই হাঁস, মুরগী, ছাগল, ভেড়ার পাশাপাশি ইদুর গুইসাপ, কাঁকড়াসহ মরা-পচা প্রাণী এমনকি মাটি খুঁড়ে মৃত দেহ বের করে খায়। এরা বেশি ভয় পায় কুকুর দেখে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগ রাজশাহীর বন্যপ্রাণী পরিদর্শক মোঃ জাহাঙ্গীর কবির বলেন, আমাদের দেশে দুই জাতের শিয়াল দেখা যায়। এরা আমাদের পরিবেশ বান্ধব প্রাণী। তবে শিয়াল শান্ত স্বভাবের কিন্তু চতুর। এই মহুর্তে দেশের সব জায়গায় শিয়ালের বিচরণ দেখা যায়। আবাসস্থল সংকটের কারণে প্রজনন মৌসুমে খাদ্য সংকটের কারণে মানুষ তাদেরকে বিরক্ত করায় কিছুটা রাগান্বিত হয়ে পড়ে। পরিবেশকে সুস্থ রাখতে এদের ভূমিকা অপরিসীম। তাই গ্রামের মানুদেরকে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থেই জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে এদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এরা পচা জীবজন্তু খেয়ে পরিবেশের স্বাভাবিকতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।