ঢাকা | জুলাই ২৭, ২০২৪ - ৫:৫২ পূর্বাহ্ন

নরমাল ডেলিভারির আশায় ছোটাছুটি, রাস্তায় জন্ম নিল ফুটফুটে শিশু

  • আপডেট: Wednesday, July 27, 2022 - 1:34 pm

অনলাইন ডেস্ক: কারণে-অকারণে দেশে সিজারিয়ান অপারেশন বাড়ছে। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব যেন ভাগ্যের ব্যাপার। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বেড়ে চলেছে আতঙ্ক।

আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) গবেষণা বলছে, বাধ্য হয়ে সিজারিয়ান করানোর ফলে বড় রকমের অর্থনৈতিক চাপ তৈরি হচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর। অনেকেই খরচ যোগাতে বাধ্য হচ্ছেন ঋণ করতে। কেউ কেউ ভাঙছেন সঞ্চয়।

এবার সিজারিয়ানের খরচে পিষ্ট হওয়ার ভয়ে নরমাল ডেলিভারির আশায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ছোটাছুটি করে অবশেষে রাস্তায় সন্তান প্রসবের ঘটনা ঘটেছে বরগুনায়। দরিদ্র ওই প্রসূতির নাম রিমা বেগম। তার স্বামী মো. ইব্রাহীম একজন রিকশাচালক।

মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) গভীর রাতে শহরের পশু হাসপাতাল সড়কের সামনে রিমা একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান প্রসব করেন। এ ঘটনায় নবজাতক সুস্থ আছে। তবে প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে রিমার অবস্থা সংকটাপন্ন। তাকে জরুরি ভিত্তিতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

রাস্তায় সন্তান প্রসবের আগে স্বজনেরা রিমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে। মঙ্গলবার সকাল থেকে সেখানে স্বাভাবিক প্রসবের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। সন্ধ্যার পর তার প্রসব বেদনা শুরু হয়। গভীর রাত পর্যন্ত তিনি হাসপাতালে বসে কাতরাতে থাকেন। এ সময় কর্তব্যরত নার্সরা নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করেন। তবে রিমার সিজারিয়ান দরকার বলে মনে হচ্ছিল।

রিমার শাশুড়ির বরাত দিয়ে যুবলীগ নেতা আবু হানিফ দোলন আজ (বুধবার) বলেন, পরিবারটি সিজারিয়ান অপারেশনের খরচ নিয়ে ভয়ে ছিল। খরচ যোগানোর মতো আর্থিক সক্ষমতা তাদের ছিল না। সেই সঙ্গে ছিল চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর আস্থার সংকট। তারা সন্দেহ করছিল যে, প্রয়োজন না থাকলেও সিজারিয়ান করা হতে পারে।

বরগুনা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সোহরাব উদ্দিন বলেন, নরমাল ডেলিভারি না হওয়ায় নার্সদের পরামর্শে রিমাকে নিয়ে স্বজনরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। যাওয়ার আগে তারা হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক অথবা জরুরি বিভাগে কিছু জানাননি।

রিমাকে নিয়ে রাতেই আলরাজি ক্লিনিকে আসেন স্বজনরা। কিন্তু বরগুনা পৌরসভার বটতলা এলাকার ওই ক্লিনিকে তখন ডাক্তার ছিল না। সেখান থেকে রিমাকে পশু হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত শেফা ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বলে। শেফা ক্লিনিকে গেলে সেখানেও ডাক্তার পাওয়া যায় না। তখন গভীর রাতে সেখানে রিমার সাথে অসহায়ের মতো ছটফট করছিল পুরো পরিবারটি।

রাত তখন প্রায় ১২টা। যুবলীগ নেতা আবু হানিফ দোলন আলরাজি ক্লিনিকের সামনে দিয়ে বাসায় যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ক্লিনিকের ভেতরে দুই নারীর আহাজারি শুনে আমি এগিয়ে যাই। সেখানে তাদের কাছে সব জানতে পারি। রিমা তখন প্রসব বেদনায় ছটফট করছিলেন। ডক্টরস কেয়ার নামে আরেকটি ক্লিনিকে ফোন করে জানতে পারি সেখানে ডাক্তার আছে। প্রসূতিকে নিয়ে আমরা রাস্তায় নামি। এই রাস্তায়ই একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান প্রসব করেন রিমা।

পরে প্রসূতি ও নবজাতকে শেফা ক্লিনিকে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থা সংকটাপন্ন বিধায় তাকে তাৎক্ষণিক বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

শেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. জান্নাতুল আলম লিমা বলেন, আমি ডিউটি শেষে বাসায় গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর খবর পাই, পশু হাসপাতাল সড়কে এক নারী সন্তান প্রসব করেছেন এবং তাকে উদ্ধার করে আমাদের এখানে আনা হয়েছে। দ্রুত এসে ওই নারীকে দেখি। তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় অবস্থা গুরুতর ছিল। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেছি। তবে সদ্য প্রসূত নবজাতক সুস্থ আছে।

সোনালী/জেআর