ফকির আলমগীর সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন: বাদশা
সোনালী ডেস্ক: একুশে পদকপ্রাপ্ত উপমহাদেশের প্রখ্যাত গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীরের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, ফকির আলমগীর সারাটা জীবন গণসঙ্গীতের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের লড়াই চালিয়ে গেছেন। নতুন প্রজম্মকে এই লড়াইয়ে শক্ত হাতে হাল ধরতে হবে।
মৃত্যুবার্ষিকীতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির উদ্যোগে গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি কার্যালয় চত্বরে গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীরের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।
এ সময় পার্টির সাধারণ সম্পাদক জননেতা কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড আনিসুর রহমান মল্লিক, কমরেড কামরূল আহসান, কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা কমরেড আবুল হোসাইন, কমরেড অ্যাড. ফিরোজ আলম, কমরেড জোবায়দা পারভীন, কমরেড মোস্তফা আলমগীর রতন, কমরেড দীপঙ্কর সাহা দিপু, কমরেড সাব্বাহ আলী খান কলিন্স, কমরেড মুতাসিন বিল্লাহ সানি, কমরেড মুর্শিদা আখতার ছাড়াও ঢাকা মহানগর নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, প্রয়াত ফকির আলমগীরের সহধর্মিনী বেগম সুরাইয়া আলমগীর, ছোট ভাই ফকির সিরাজ, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেলিম, খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক প্রনব সাহা, আব্দুল মতিনসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ফকির আলমগীর ১৯৫৩ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা-আন্দোলনের স্মরণীয় দিনটিতে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে স্নাতক পাশ করে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এম. এ ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) পরবর্তীতে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন এর নেতা ছিলেন। ’৬৯ এ গণ আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ে রাজপথের লড়াইয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
গণসঙ্গীতে নিবেদিত এই শিল্পী ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও গণশিল্পী সংস্থার সদস্য হিসেবে ষাটের দশকে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে এবং ’৬৯-এর গণঅভ্যূত্থানে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে শিল্পী একজন শব্দ সৈনিক হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন। এ সময় তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক কামাল লোহানীর সাহচার্যে আসেন। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এ সময় তিনি গণসঙ্গীতজ্ঞ শেখ লুৎফর রহমান, কবি আবু বকর সিদ্দিক এর সান্বিদ্ধে আসেন। পাশাপাশি প্রচলিত ও প্রথাসিদ্ধ গানের বন্ধ্যা ভূমিতে দেশজ ও পাশ্চাত্য সঙ্গীতের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা গানে নতুন মাত্রা সংযোজন করেন। এই সময় তিনি বাংলার পপসংগীতের খ্যাত সম্রাট আযম খান, ফিরোজ সাঁই ও ফেরদৌস ওয়াহিদ মিলে বাংলা সঙ্গীতের নবউত্থান ঘটান। সঙ্গীত ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সান্নিধ্য তাকে করে তোলে আরো প্রতিশ্রুতিশীল, গণমূখী ও জনপ্রিয়। তিনি উপমহাদেশের বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ^াস, সলিল চৌধুরী, মুকুন্দ দাস সহ বিখ্যাত সঙ্গীত ব্যক্তিত্বের সন্ধিক্ষণে আসেন। একজন সাংস্কৃতিক দূত হিসেবে বিশে^র বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে সফলতার সঙ্গে তুলে ধরেন। তিনি মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও রাশেদ খান মেনন প্রমুখ নেতৃবৃন্দকে মনে প্রাণে ধারণ করতেন। শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচিতে প্রয়াত ফকির আলমগীরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে গণসংগীত পরিবেশন করা হয়।