ট্রেনের ছাদে যাত্রী নেয়া বন্ধ: হাই কোর্ট
অনলাইন ডেস্ক: ঢাবি ছাত্র রনির আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা নিয়ে শুনানিতে ট্রেনের ছাদে যাত্রী নেয়া বন্ধ করতে বলেছেন হাই কোর্ট। কোনো যাত্রী ট্রেনের ছাদে পরিবহন করলে দায়িত্বরত রেলের কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা হবে।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ এই মৌখিক আদেশ দেন।
এছাড়া রেলের টিকেট কালোবাজারি বন্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রেলওয়েকে জানাতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান, রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক (অপারেশন্স) এ এম সালাউদ্দিন, পরিচালক (ট্রাফিক) নাহিদ হাসান খান এবং সহজ ডটকমের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জুবায়ের হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন এ সময়।
শুনানির সময় রেলের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, কেন ট্রেনের ছাদে লোক ওঠে? এটা কি পয়সা ইনকামের পথ? ট্রেন জাতীয় সম্পদ। ট্রেন কি আপনারা গ্রাস করতে চাচ্ছেন?
রেল কর্মকর্তা সালাউদ্দিন এ সময় বলেন, মাই লর্ড, ছাদে যাত্রী ওঠা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, তবু এটা আমাদের ব্যর্থতা।
এ সময় বিচারক বলেন, ছাদে বা দাঁড়িয়ে যারা যাচ্ছে, তারা কি টাকা দিচ্ছে না? এটা তো দুর্নীতি। আর ছাদে যাত্রী ওঠানো বন্ধ করতে পারছেন না- এই অসহায়ত্ব প্রকাশ করলে কি দেশ চলবে? এটা কোনো কথাই না। আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। অসম্ভব বলে কিছু নেই। এগুলো ঠিক হতে আর কতদিন সময় লাগবে? দেশ স্বাধীনের তো ৫০ বছর হয়ে গেছে।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, সব ক্ষেত্রে কিছু সিন্ডিকেটের কারণেই দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
এর আগে বুধবার (২০ জুলাই) সকালে রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে কমলাপুর রেলস্টেশনে ১২ দিন ধরে অবস্থান করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনির খোঁজ নিতে বলেছেন হাই কোর্ট।
হাইকোর্ট রনির অবস্থান কর্মসূচির কারণ জানতে চাইলে ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, রেলের টিকিটবাণিজ্য ও অনিয়মের প্রতিবাদে ওই ঢাবি শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।
এরপর আদালত বলেন, একজন ছেলে কমলাপুর রেলস্টেশনে দিনের পর দিন অবস্থান করছেন। ফেসবুক-ইউটিউব ভাইরাল হচ্ছে, পত্র-পত্রিকায় আসছে ও সবখানে আলোচনা হচ্ছে। সমস্যা সমাধান করা যায় কি-না, খোঁজ নিয়ে দেখুন।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) দুপুরে রেলের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদারকে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি নিরসনে ৬ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহিউদ্দিন রনি।
এর আগে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের বাইরে প্রধান সড়ক থেকে দুপুর ১২টা ২৮ মিনিটে তিনি রেল ভবনের দিকে লং মার্চ শুরু করেন।
রনির ৬ দাবি হলো-
টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সহজ ডটকম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। হয়রানির ঘটনায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ করতে হবে।
অনলাইনে কোটায় টিকিট ব্লক করা বা বুক করা বন্ধ করতে হবে। সেইসঙ্গে অনলাইন-অফলাইনে টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
যাত্রী চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ অন্যান্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক মনিটর, শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেলসেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে।
ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখ্য, রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা দূর করার দাবি-সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে কমলাপুর স্টেশনে ৭ জুলাই থেকে অবস্থান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি।