ঢাকা | জুলাই ২৭, ২০২৪ - ৫:৩৯ পূর্বাহ্ন

নড়াইলে সাম্প্রদায়িক হামলা: দেড় শতাধিক হিন্দু নারী-শিশু বাড়িছাড়া

  • আপডেট: Monday, July 18, 2022 - 11:22 am

অনলাইন  ডেস্ক: নড়াইলে লোহাগাড়ার দীঘলিয়ার সাহাপাড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় স্থানীয় হিন্দুদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ কারণে এখানকার দেড় শতাধিক নারী-শিশু বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে ঘরের দরজায় তালা দিয়ে বসবাস করছেন। বর্তমানে ওই এলাকায় বিভিন্ন মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। র‌্যাবও টহল দিচ্ছে।

রাজনীতিকসহ বিশিষ্টজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এদিকে ফেসবুকে মহানবী (সা.)-কে কটূক্তির অভিযোগে ছাত্র আকাশ সাহাকে (২০) খুলনা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার তাকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন লোহাগড়ার আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোরশেদুল আলম। তদন্ত কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার এসআই মাকফুর রহমান ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন।

শনিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কটূক্তির ঘটনায় শুক্রবারই দীঘলিয়া গ্রামের কচি সরদার বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় আকাশের নামে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

ফেসবুকে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে আকাশের কটূক্তির অভিযোগে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় উত্তেজিত জনতা দীঘলিয়া বাজারে হিন্দুদের ৬টি দোকান ভাঙচুর করে। একটি মন্দিরে আগুন দেওয়াসহ তিনটি মন্দির ভাঙচুর করে। এ ছাড়া সাহাপাড়ার হিন্দুদের ৫টি বসতবাড়ি এবং এর আসবাবপত্র ভাঙচুর করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক তরুণ সাহা ও তার ভাই মকুমারেশ সাহাকে উচ্ছৃঙ্খল জনতা পিটিয়ে জখম করে। এ ছাড়া এ ঘটনা ঠেকাতে গেলে স্থানীয় ইউপি মেম্বার জান্নাত মৃধাকে জনতা মারধর করে।

দীঘলিয়া সাহাপাড়ার গোবিন্দ সাহা বলেন, সন্ধ্যার কয়েক শ মানুষ তার একটি বসতঘর ভাঙচুর করে ঘর আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা এখনও আতঙ্কের মধ্যে আছেন। শনিবার রাতে পুলিশ পাহারা থাকা সত্ত্বেও পার্শ্ববর্তী অনিন্দ সাহার একটি গরু চুরি হয়ে গেছে।

স্থানীয় পলাশ সাহা জানান, তার পরিবারের ১৪ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৫০ হাজার টাকা লুটপাট করে নিয়ে গেছে। একই পাড়ার মালা সাহা জানান, তার ২ ভরি স্বর্ণ ও ১৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। তারা খুব আতঙ্কের মধ্যে আছেন। গ্রামের অর্ধেক মানুষ ভয়ে অন্যত্র চলে গেছে।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীঘলিয়া গ্রামের সাহাপাড়ার কলেজছাত্র আকাশ ফেসবুকে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে অশালীন মন্তব্য লিখে পোস্ট দিলে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়। এর প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে দীঘলিয়া বাজারে কয়েক শ লোক জড়ো হয়। সন্ধ্যায় উত্তেজিত জনতা আকাশের গ্রেপ্তার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে তারা হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের গুলি ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।

সাহাপাড়া রাধা গোবিন্দ মন্দিরের সভাপতি শিবনাথ সাহাসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, কয়েক গ্রামের লোকজন, দোকানদার ও আশপাশের মাদ্রাসার ছাত্ররা মিছিল ও ভাঙচুর করে। ঘটনার সময় পুলিশের সংখ্যা কম থাকায় পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার ও স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন।

এদিকে রোববার বিকেলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের সান্ত্বনা দিয়েছেন। এ সময় আগুনে পুড়ে যাওয়া গোবিন্দ সাহার পরিবারকে ৫ হাজার টাকা সহায়তা দেন তিনি।

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমরা সবাই একসঙ্গে বসবাস করতে চাই। সবাই স্বাধীনভাবে বসবাস করবে এটাই নিয়ম। কারও দোষের জন্য সবার ওপর হামলা হতে পারে না। আমরা আপনাদের পাশে থাকব। আপনারা আমাদের ভাইবোনের মতো।’ এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. এম কে রায়ের নেতৃত্বে একটি দল এবং মাইনরিটি রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পবিত্র মিস্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা ঘটনার সময় স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা এবং শাসক দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান বলেন, দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে পরিস্থিতি ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন কিন্তু পারেননি। হামলায় জড়িতদের চিনতে পেরেছেন কিনা এ প্রশ্নে বলেন, তারা সবাই বাইরের।

লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আবু হেনা মিলন জানান, বর্তমানে ওই এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক এবং বাজারের দোকানপাট খোলা আছে।

এ ঘটনায় ভাঙচুর, লুটপাট ও সরাকরি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে লোহাগড়া থানার এসআই মাকফুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত দুই শ থেকে আড়াই শ জনকে আসামি করে রোববার থানায় মামলা করেন। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২ জনকে আটক করেছে।

সোনালী/জেআর