লালপুরে অ্যানথ্রাক্স সন্দেহে একজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৯
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি: নাটোরের লালপুরে অসুস্থ গবাদিপশুর জবাই করা মাংস থেকে অ্যানথ্রাক্স বা তড়কা রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। মাংস খেয়ে আক্রান্ত দুলাল হোসেন (৫৫) নামে একজন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। জবাই করা মাংস নাড়াচাড়া ও খাওয়ায় আরও ৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল শনিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি চিকিৎসক দল উপজেলার ওয়ালিয়া ইউনিয়নের দেলুয়া গ্রামে আক্রান্ত রোগীদের পরিদর্শন করেছেন।
চিকিৎসকরা বলেন, জরুরিভাবে ঢাকা থেকে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বিশেষজ্ঞরা ডা. রায়হানের নেতৃত্বে রোববার (১৭ জুলাই) রওনা দেবেন বলে জানা যায়। তারা এসে ওয়ালিয়ার দেলুয়া গ্রামের রোগীরা অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে নিশ্চিত করবেন। তার আগে রোগীদের অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
ওয়ালিয়া ইউনিয়নের দেলুয়া কমিউনিটি কিনিকের চিকিৎসক শারমিন আক্তার তানিয়া বলেন, গত ৭ জুলাই রুইগাড়ি গ্রামের আইয়ুব সরদারের ছেলে দুলাল হোসেন (৫৫) অ্যানথ্রাক্স সন্দেহে ক্ষত নিয়ে ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য আসেন। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে গত বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) রাত ১১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ময়নাতদন্তে মস্তিস্কে ইনফেকশন ও ক্ষত জনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে অ্যানথ্রাক্স সন্দেহে একই গ্রামের চিকিৎসা নিচ্ছেন, শহিদুল ইসলামের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৪৫) ও ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২১), মহিদুল ইসলামের স্ত্রী রুমা বেগম (৩৫), ওমর আলীর ছেলে আব্দুল মজিদ (৪০) ও সাখাওয়াত হোসেন (৩০), আরজেদ প্রামানিকের ছেলে আফতাব আলী (৫০), মৃত দুলাল হোসেনের ছেলে হাবিবুর রহমান (৩০), রূপচান্দ আলীর ছেলে মোহন আলী (৪০) এবং নুরুজ্জামানের স্ত্রী বিলকিস বেগম (৩২)। এদের মধ্যে মনোয়ারা বেগম ও আফতাব আলী আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন।
দেলুয়া গ্রামের মহিদুল ইসলাম বলেন, গত ৭ জুলাই তার গাভীটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে কসাই আজাহার সরদারকে দিয়ে নিজ বাড়িতেই জবাই করা হয়। সেই গরুর মাংস যারা নাড়াচাড়া ও খায় তাদের সবার শরীরে ক্ষত দেখা দেয়।
উপজেলা উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় পশু চিকিৎসক নাসির ওই গরুর চিকিৎসা দেন। ওই গরুর অ্যানথ্রাক্স বা তড়কা রোগের সব লক্ষণ যেমন, দেহের লোম খাড়া, দেহের তাপমাত্রা ১০৬ ডিগ্রির অধিক, নাক, মুখ ও মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ, পাতলা ও কালো পায়খানা দেখা যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগতত্ত্ব ও নিয়ন্ত্রণ বিভাগের চিকিৎসক ওয়ালিউজ্জামান পান্না বলেন, অ্যানথ্রাক্স-আক্রান্ত গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এলে মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগ গবাদিপশু থেকে মানুষে ছড়ায়, তবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। মানুষের শরীরে এ রোগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে চামড়ায় ঘা সৃষ্টি হওয়া। অসুস্থ গবাদিপশু জবাই না করা ও অসুস্থ প্রাণীর মাংস না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ কে এম শাহাব উদ্দিন বলেন, অ্যানথ্রাক্সের কারণ এক বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়া (ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাকিস)। এরা মাটির নিচে বহু বছর বেঁচে থাকতে পারে। বর্ষা মৌসুমে মাটির নিচ থেকে ওপরে উঠে আসে। গরু, ছাগল, মহিষ বা ভেড়া ঘাস খাওয়ার সময় এদের শরীরে এই ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে। জীবাণু শরীরে প্রবেশের পর গবাদিপশু খুব দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ইউএলও) চন্দন কুমার সরকার বলেন, গবাদিপশুদের টিকা দিয়ে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধ করা হয়। ইতিমধ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে দেলুয়া গ্রামে শনিবার ক্যাম্পিংয়ের মাধ্যমে সন্দেহজনক ৩০০টি গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্স বা তড়কা রোগের টিকা দেয়া হয়েছে। কোনো গবাদিপশুতে রোগের লক্ষণ দেখা দিলে প্রাণিসম্পদ কার্যালয় বা পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
লালপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইসাহাক আলী বলেন, আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। সেই সাথে সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।