প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে হলে শিবিরের মাংস বিতরণ
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে মাংস বিতরণ করেছে ছাত্র শিবির। মঙ্গলবার সকালে ছেলেদের ১১ হলের গার্ডের নিকট এই মাংস দেওয়া হয়। এ সময় মাংসের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতির পক্ষ থেকে একটি চিঠিও দেওয়া হয়। এ ঘটনা জানাজানি হলে জরুরি বৈঠক করে মাংসগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাধ্যক্ষ পরিষদ।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা জায়, প্রতি বছর ঈদে আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকলেও এবার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এবার ক্যাম্পাসে ঈদ পালন করেন ২২৬ শিক্ষার্থী। তারা আবাসিক হলগুলোতে অবস্থান করছেন। মঙ্গলবার সকালে কয়েকজন শিবির ক্যাডার এসে ছেলেদের ১১টি হলের গার্ডদের নিকট ২-৩ থলে করে মাংস দিয়ে যায়।
এ সময় তারা বলেন, হাশেম স্যার শিক্ষার্থীদের জন্য মাংস পাঠিয়েছেন। মাংসের থলির সাথে একটি চিঠি ছিল। পরবর্তীতে চিঠি খুলে শিবিরের বিষয়টি জানার পর অনেক হলের গার্ড মাংস নিতে আপত্তি জানান। কেউ বা আবার মাংস শিক্ষার্থীদের না দিয়ে বাইরের মানুষদের দিয়ে দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতশীল শিক্ষক সমাজের একাধিক সদস্য জানান, অধ্যাপক আবুল হাশেম বিশ্ববিদ্যালয়ের এপ্ল্যাইড ফিজিক্স (বর্তমান ইই) বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধিতাকারী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। জামায়াতের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। আবাসিক হলগুলোতে মাংস বিতরণে বিষয়ে জানতে জামায়াতের এই শিক্ষককে একাধিকার ফোন করেও পাওয়া যায় নি।
এদিকে আবাসিক হলে শিবিরের মাংস বিতরণের বিষয়টি জানাজানি হলে জরুরি বৈঠকে বসে প্রাধ্যক্ষ পরিষদ। বেলা সাড়ে এগারটায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে হলের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও যেসব গার্ড মাংস রিসিভ করেছেন তাদের বিষয়ে আলোচনা হয়। সভার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মতিহার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি জানার জরুরি বৈঠকে বসি। এতে হলের নিরাপত্তা জোরদারসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সিদ্ধান্তের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
নাম প্রাকশ না করা শর্তে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন এক প্রাধ্যক্ষ বলেন, শুধু ছেলেদের হলগুলোতে শিবির মাংস বিতরণ করেছে। তারা হলের গার্ডের কাছে মাংস দিয়েছিল। এর মধ্যে একটি হলের গার্ডরা মাংস নেয় নি। আবার একটি হলের গার্ড প্রাধ্যক্ষকে না জানিয়ে মাংস ভাগ করে দিয়েছিল। এসব বিষয় আলোচনা হয়। পরবর্তীতে মাংস সংগ্রহ করে ক্যাফেটেরিয়ার ফ্রীজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মিটিংয়ে হলগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ফেরদৌসী মহলকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায় নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি আছে, হল কর্তৃপক্ষ রয়েছে। তারা থাকা সত্ত্বেও কিভাবে শিবির মাংস বিতরণ করে বোধগম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ছিল মনিটরিং আরও জোরদার করা।
শিবিরে সাংগঠনিক সক্ষমতা নেই দাবি করে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, যখন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ নেই তখন শিবির চোরের মতো এসে মাংস দিয়ে গেছে। তাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা নেই প্রকাশ্যে আসার। স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতিহত করতে রাবি ছাত্রলীগ সবর্দা প্রস্তুত।
প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, আমি সকাল নয়টার দিকে বিষয়টি শুনেছি। তারা চুরি করে এসে মাংস দিয়ে যাওয়ায় আমাদের সন্দেহ হয়েছে। কারা এর জড়িত সেটি বের করতে আমরা ক্যাম্পাসে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সহযোগিতা চেয়েছি।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, বিষয়টি এই মাত্র শুনলাম। সাধারণত চমক সৃষ্টির জন্য এসব কাজ করা হয়ে থাকে। এটি কোনোভাবেই নয়। হলের সার্বিক পরিস্থিতি দেখভালের দায়িত্ব হল প্রাধ্যক্ষ ও প্রাধ্যক্ষ পরিষদের। তারপরেও আামদের থেকে নিরাপত্তা জোরদারের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হবে।