ঢাকা | জুলাই ২৬, ২০২৪ - ২:১৫ অপরাহ্ন

স্বপ্ন জয়ের সাক্ষী হলো রাজশাহী

  • আপডেট: Saturday, June 25, 2022 - 10:42 pm

 

স্টাফ রিপোর্টার: যমুনায় সেতু হওয়ার আগে উত্তরাঞ্চলের মানুষকেও কম দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। একই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। পূরণ হলো পদ্মার বুকে সেতুর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন জয়ের মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হয়েছে উত্তরের জেলা রাজশাহীও।

শনিবার রাজশাহী মহানগরের তিনটি স্থানে সমাবেশ করে পদ্মা সেতুর মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বড় পর্দায় দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। এরমধ্যে জেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে কয়েক হাজার মানুষের সমাবেশের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। আর নগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদের সামনে সমাবেশ করে মহানগর আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া নগরীর অলোকার মোড়ে সমবেত হন জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করার পর রাজশাহীর এই তিন অনুষ্ঠানেই মিষ্টি বিতরণ করা হয়। সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে মিষ্টি বিতরণ করেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শাহীন আক্তার রেনী। এখানে পাঁচ মণ মিষ্টি বিতরণ করা হয়। এ অনুষ্ঠানে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিজেই নেচে নেচে অনুষ্ঠান মাতিয়ে তোলেন।

এদিকে সকালে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে একটি শোভাযাত্রা বের করেন। শোভাযাত্রা শেষে সবাই দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। বড় পর্দায় সেখানে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখানো হয়। পরে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার, সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারাসহ অন্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

জেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে হাজির হয়েছিলেন বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবদুল বাতেন, রাজশাহী নগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক, জেলা পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ আলী সরকার, জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল, জেলার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনসহ বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের অন্যান্য সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা। ছিলেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষও। আলাদা আলাদা শোভাযাত্রা নিয়ে তারা স্টেডিয়ামে যান। প্রধানমন্ত্রীর পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এখানে অতিথিবৃন্দ বেলুন, ফেস্টুন ও পায়রা ওড়ান।

এ অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ বলেন, ‘পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সামর্থ্যরে প্রতীক। অনেক প্রশ্নের উত্তর এই পদ্মা সেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে ছিলেন বলেই দেশে পদ্মা সেতু হয়েছে। এই সেতু শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেরই নয়, উত্তরাঞ্চলসহ সমগ্র বাংলাদেশের উন্নয়নেই ভূমিকা রাখবে। বাঙালি জাতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।

এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উদযাপন করা হয়। এই উপলক্ষে সকালে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের উত্তর চত্বরে সংগীত বিভাগের উপস্থাপনায় পদ্মা সেতুর থিম সং ও শেখ রাসেল মডেল স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিচালনায় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এরপর একটি আনন্দর‌্যালী ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।

পরে বেলা ১১টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের উত্তর চত্বরে ও ভবনের সভাকক্ষে বড় পর্দায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখানো হয়। এরপর সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর (অব.) মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক। উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে এই আলোচনায় ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর মো. আবুল কাশেম, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তা অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর মো. ইলিয়াছ হোসেন, রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক প্রফেসর মো. খলিলুর রহমান খান পদ্মা সেতুর গুরুত্ব ও তাৎপর্য এবং জাতীয় উন্নয়নে এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন।

আলোচনায় তাঁরা বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের সাহসী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের পরম্পরার এক অসামান্য উপাখ্যানের নাম। সকল প্রতিকূলতা জয় করে অমিত সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়ার এক সংগ্রামী ঐতিহ্যের প্রতিফলন পদ্মা সেতু। এটি বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তির অবিচ্ছিন্ন সংগ্রামের আরেক নাম। এই সেতু চালুর ফলে শিল্পায়ন ও পর্যটন ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের সম্ভাবনার নতুন দ্বারা উন্মোচন হলো। সরকারের দৃঢ় প্রত্যয়ে উন্নয়নের এ নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. আবদুস সালাম আলোচনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আনন্দ র‌্যালী অনুষ্ঠিত হয়। সকালে রুয়েট প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সেখের নেতৃত্বে র‌্যালিটি বের করা হয়। র‌্যালিটি রুয়েট কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বড় পর্দায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ও পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি দেখানো হয়। অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।