ঢাকা | জুলাই ২৬, ২০২৪ - ৮:৫৫ পূর্বাহ্ন

স্বপ্ন ও সত্যির মাঝে আর মাত্র ১ দিন

  • আপডেট: Friday, June 24, 2022 - 8:08 pm

অনলাইন ডেস্ক: ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে এখন রঙের মেলা। সেতু এলাকায় যাওয়ার আগেই দুপাশে চোখে পড়বে ছোট-বড় সব নেতার পোস্টার আর ফেস্টুন। মাঝে আর মাত্র ১ দিন। আগামীকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের স্বপ্নের সেতুর। শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে কারও দম ফেলার ফুরসত নেই। মাওয়া মোড়ে যাওয়ার আগেই বোঝা গেল সময় নেই আর। সবাই যার যার মতো কাজটি শেষ করার চেষ্টায় ব্যস্ত।

নতুন উদ্বোধন হওয়া পদ্মা সেতু (উত্তর) থানাও নিজেকে সাজিয়েছে নতুন করে।

একেবারে সেতুতে ওঠার আগেই তার অবস্থান। ওজন মাপার স্টেশন, টোল প্লাজা সব জায়গায় চলছে গোছানোর প্রক্রিয়া। মাওয়া মোড় থেকে বাঁয়ে যে রাস্তাটা ঘাটে চলে গেছে সেখানে চলছে ইট বিছানোর কাজ। ডানে মাওয়া মাছ বাজারের রাস্তাতেও বালু আর ইটের কাজের চাপ চলছে জোরেশোরে।

পদ্মা সেতু দেখতে এই এলাকার যে জায়গাটিতে সবচেয়ে বেশি মানুষ আসেন সেটা মাছ বাজার লাগোয়া পদ্মার পাড় এলাকা। চটপটি, ফুচকা, ডাব সাজানো থাকে থরে থরে। চায়ের দোকানেও ভিড় সব সময়। মাথায় দেওয়া প্লাস্টিকের ফুলের একটি মনোহারী দোকান। খোলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আলমগীর। জানা গেল, আগে মাওয়া ঘাটে দোকান বসাতেন। সেখানে লোক কমে যাচ্ছে তাই এখানে চলে এসেছেন। ২৫ জুন দোকান বসাতে পারবেন না। আগেই এই নির্দেশনা পেয়েছেন। উদ্বোধন ঘিরে কী ভাবছেন? আলমগীরের জবাব, ‘ব্রিজ দেখতে লোকজন এইহানেই আসব। পরদিন থেকে ব্যবসা কিছু হইবো মনে হয়। আমগো চোখের সামনেই তো হইয়া গেল ব্রিজটা।’

মাছ বাজারে জাল ঠিক করছিলেন তিনজন। পদ্মা সেতুর কারণে তাঁদের কী পরিবর্তন হবে জানতে চাইলে সহাস্য উত্তর বাদলের, ‘এই যে আপনের লগে দেখা হইলো। জীবনে তো দেখা হইতো না। এটাই তো অনেক কিছু। নতুন নতুন সব জিনিস দেখতে পাই। আর কী লাগে।’

প্রতিদিন এমন হাজারো স্বপ্ন ডানা মেলছে স্বপ্নের সেতু ঘিরে। পদ্মা পাড়ের মানুষই শুধু নন, নানা প্রান্তের মানুষের এক আবেগ ও ভালোবাসার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে পদ্মা সেতু। কারও চোখে সম্ভাবনার স্বপ্ন, কারও ব্যবসার, কারও-বা কম সময়ে যোগাযোগের।

লৌহজংয়ের দক্ষিণ মেদিনী মণ্ডল এলাকায় মাওয়ার পুরোনো ঘাট। এখন একেবারেই নিশ্চল। পাথর টানা কিছু ট্রলার বাধা ঘাটে। দোকানপাটগুলোতে ব্যস্ততা নেই। স্থানীয় কয়েকজন বসে আলাপ করছেন নিজেদের মধ্যেই।

অনুমতি নিয়ে তাঁদের মাঝে বসতেই বোঝা গেল, আলোচ্য বিষয় পদ্মা সেতু। ছোট জিজ্ঞাসায় ৮১ বছরের কাদির ভূঁইয়া শুরু করলেন পাকিস্তান আমল থেকে। সেই ছোটবেলায় তাঁরা নাকি শুনেছিলেন এখানে ব্রিজ হবে। তারপর মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু সরকার গঠন করেছেন। তখনো পদ্মার বুক চিরে সেতুর খবর শুনেছেন। ৫০ বছর পর জাতির জনকের মেয়ে সেই সেতু উদ্বোধন করবেন—এটাই কাদিরের কাছে বড় খবর।

কাদির ভূঁইয়া দিলেন পদ্মা নদীর নানা তত্ত্বতালাশও। বললেন, যেখানে বসে এই আলাপ হচ্ছে, যুবক বয়সে ঠিক এই জায়গাটাতেই নাকি ঠাঁই ছিল না। ভোরে মাছ ধরতে বের হওয়ার পর সকালে পান্তা খেতেন দল বেঁধে। পানির স্রোতে যেন কেউ পড়ে না যান, সে জন্যই দল বাঁধা। সেই নদীতে সেতু দেখে তাঁর মনে কথা, গল্প, আর স্মৃতি দল পদ্মার মাছেদের মতোই ঘাঁই মেরে ওঠে। স্মৃতির আস্তর ঠেলে জেগে ওঠে কথার দল। আয়ুর দৌড়ে লেটার মার্ক পাওয়া কাদির ভূঁইয়া সুকৌশলে সেই কথা দিয়ে জাল বুনতে থাকেন।

এই শেষ বয়সে সেতু ঘিরে কাদির আসলে কী ভাবেন? কথার ঝাঁপি খোলা কাদিরের দিকে তাকিয়ে সরাসরি এ প্রশ্ন তুলতেই বললেন, ‘জীবন কেটে গেছে পদ্মার পাড়ে। এখন যাওয়ার পালা। লাখো মানুষের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে—এটা দেখে নিজের স্বপ্নের কথা আর নাই-বা বললাম।’