বন্যায় ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার যথেষ্ট প্রস্তুত
অনলাইন ডেস্ক: দেশে এবারের বন্যায় ফসলের যেটুকু ক্ষতি হয়েছে, সেটা পুষিয়ে নিতে সরকারের যথেষ্ট ‘প্রস্ততি’আছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
বুধবার রাজধানীতে হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। এসময় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি দেখে সরকার পুনর্বাসন কর্মসূচি নেবে বলেও জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমাদের ১১ লক্ষ হেক্টর (জমিতে) আউশ আছে। সেখানে আমাদের ৫০ হাজার হেক্টরের মতো আক্রান্ত হয়েছে। কাজেই এখনো ওইরকম কোনো ক্ষতি হয়নি। এখন কোনো মেজর ফসল নাই। তবে বাংলাদেশে এই সময়ে তো বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়। তাহলে আমনের একটা…ই (সম্ভাবনা)… রয়েছে ক্ষতি হওয়ার। তারপর আউশও ক্ষতি হচ্ছে। এগুলা দেখে আমরা পুনর্বাসন কর্মসূচি…।
সরকারের প্রস্তুতি তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত যতটুকু ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়ার জন্য সরকার খুবই তৎপর এবং এ ব্যাপারে তাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে। আমাদের পর্যাপ্ত বীজ আছে…যদি বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়, নতুন করে আবার বীজতলা আমরা করব…।
টানা ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে গত সপ্তাহে বর্ষার শুরুতেই ভয়াবহ বন্যায় ডুবেছে সিলেট ও সুনামগঞ্জ। সিলেট অঞ্চলে পানি এখন কমতে শুরু করলেও বাড়ছে দেশের মধ্যাঞ্চলে।
বন্যা কবলিত এলাকাগুলোয় ফসলের ক্ষেত তলানোর পাশাপাশি, ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় মাসখানেক আগে কেটে রাখা গোলার ধানও ডুবে গেছে সিলেট সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়।
ক্ষতিগ্রস্ত সবজি চাষিদের প্রণোদনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মন্ত্রী বলেন, পরবর্তীতে রবি শষ্য আবাদে সরকার চাষিদের বিনামূলে বীজ ও সার দেবে।
আঞ্চলিক আন্তঃসরকার সংস্থা সাউথ এশিয়া কো অপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নাইট্রোজেন দূষণ নীতি ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় বন্যা নিয়ে কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী।
দুর্যোগে করণীয় হিসেবে তিনি পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার পরামর্শ দেন।
রাজ্জাক বলেন, পরিবেশের সাথে অ্যাডাপ্ট করতে হবে। সেটি আমাদের জন্য খুবই ইম্পর্ট্যান্ট। আমরা স্ট্রেসড পরিবেশে গেলে কী হবে? ধান পানির নিচে চলে যাবে, লবণাক্ততা বাড়বে, খরা বাড়বে। এগুলোর জন্য স্ট্রেস রেসিস্ট্যান্ট ধানের জাত, বিভিন্ন ফসলের জাত আমাদের বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার করতে হবে।
জমিতে নাইট্রোজেনের ঘাটতির বিপদ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, নাইট্রোজেন ৬০-৭০% লস হয়ে যাচ্ছে। এটা কিন্তু তাড়াতাড়ি উড়ে যায় বাতাসে। এটাকে কমিয়ে আনতে হবে। এফিসিয়েন্সি লেভেল বাংলাদেশে খুব-ই কম। মাত্র ৩০-৩৫%। আমরা চাচ্ছি যে এটাকে কীভাবে বাড়ানো যায় এবং এর জন্য রিজিওনাল কোঅপারেশন খুবই ইম্পর্ট্যান্ট এবং আমি মনে করি সাসেপের সদস্য মেম্বার কান্ট্রিরা সবাই মিলে একটা ভালো পলিসি নেবে। যাতে করে নাইট্রোজেন ইফিশিয়েন্সি আমরা বাড়াতে পারি।
বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভারত এবং অন্যান্য দেশ পরিবেশের প্রতি ‘কমিটেড’ মন্তব্য করে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশ তো এক্সট্রিমলি ভালনারেবল টু ক্লাইমেট চেইঞ্জ। কাজেই আমাদেরকে সঠিক পথ গ্রহণ করতে হবে।
কৃষি যে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের প্রধান জীবিকা, সে কথা তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ফসল উৎপাদন এবং পরিবেশ দূষণ রোধে নাইট্রোজেন ব্যবস্থাপনা খুবই ‘চ্যালেঞ্জিং’।
এ অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশগত স্থায়িত্ব নিশ্চিতে টেকসই নাইট্রোজেন ব্যবস্থাপনার বিকাশে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সুসংহতভাবে কাজ করার ‘এখনই সময়’ বলে তিনি মন্তব্য করেন।