বিএমডিএ’র অব্যবস্থাপনার কথা সংসদে তুলে ধরলেন এমপি বাদশা
অনলাইন ডেস্ক: বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরে সংসদে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) কঠোর সমালোচনা করেছেন রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেছেন, সম্প্রতি দুই সাঁওতাল কৃষক ধানের জমিতে পানি না পেয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করে বুঝিয়ে দিয়েছে; বিএমডিএ’র অব্যবস্থাপনার গভীরতা কতোটা প্রকট!
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ১৮তম অধিবেশনের প্রশ্ন, জিজ্ঞাসা এবং উত্তর-টেবিলে উপস্থাপন ও ২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, গোদাগাড়ীতে দুই আদিবাসী কৃষক ধানের জমিতে পানি চেয়ে না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কৃষকের প্রতি বৈষম্য ও অব্যবস্থাপনা নতুন কিছু নয়। তবে দুই কৃষকের আত্মহত্যা তাদের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার গভীরতাকে আরো প্রকট করেছে। এভাবে চলতে পারে না। এটির সমাধান হওয়া উচিত।
বিএমডিএ’র ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন ব্যবস্থা উত্তরাঞ্চলকে মরুকরণে পরিণত করতে পারে উল্লেখ করে রাকসুর সাবেক এই ভিপি আরও বলেন, উত্তরাঞ্চলজুড়ে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে সেচ ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। এই ব্যবস্থা উত্তরাঞ্চলে মরুকরুণের সৃষ্টি করতে পারে। এ ব্যবস্থা পরিবর্তন করার জন্য অনেক দিন ধরে সংসদে বলে আসছি। উত্তরের মহানন্দা, পদ্মা, তিস্তা, যমুনাসহ বহু নদী আছে, যার পানি দিয়ে উত্তরাঞ্চলের সেচ ব্যবস্থাকে সচল রাখা সম্ভব।
রাজশাহীতে এ পর্যন্ত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এমপি বাদশা। তিনি বলেন, রাজশাহীতে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আমি মহান সংসদে দাবি তুলেছিলাম। এই দাবির প্রেক্ষিতে গত সংসদে এটি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। অথচ আজ এতো সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক!
রাজশাহী বিমানবন্দরকে রপ্তানীমুখী বিমানবন্দরে পরিনত করার দাবি জানিয়ে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, উত্তরাঞ্চল এখন খাদ্যভাণ্ডারে পরিনত হয়েছে। সেই খাদ্যভাণ্ডার থেকে বিদেশেও খাদ্য রপ্তানী করা সম্ভব। সেজন্য রাজশাহী বিমানবন্দরকে আরো উন্নত করে রপ্তানীমুখী বিমানবন্দরে পরিনত করতে সংসদে দাবি জানাচ্ছি।
সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চলের বন্যা পরিস্তিতি নিয়েও সংসদে কথা বলেন বাদশা। তিনি বলেন, বন্যা কবলিত অঞ্চলে বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিয়ে মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরী হয়েছে। সেখানে রাত নামলে অন্ধকার, বিদ্যুৎ নেই। চারিদিকে পানি অথচ কোথাও বিশুদ্ধ পানি নেই। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে তিল ধারনের ঠাঁই নেই। মোবাইলে নেটওয়ার্কও নেই। সড়ক, রেল ও আকাশপথ বন্ধ। সবমিলিয়ে এক ভয়াবহ অবস্থা!
তিনি বলেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি কেন হলো তা আমাদের সকলের জানা। ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে টানা ভারী বৃষ্টি ও আমাদের স্থানীয় বৃষ্টি যুক্ত হয়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। চেরাপুঞ্জি ১২২ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। আমাদের দেশের অন্য নদীর মতো সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা নাব্যতা হারিয়েছে। বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা শুধু সরকারের ওপর ছেড়ে না দিয়ে আমাদের সকলের উচিত সিলেটের মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
পদ্মা সেতু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশসংসা করে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে চলেছে। আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা, বলিষ্ঠতা ও নেতৃত্বগুণ এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। তাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন। বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে বন্যা কবলিত মানুষকে দেখার জন্য সরেজমিনে সিলেট অঞ্চলে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণতার পরিচয় বহন করে।