বন্যায় দুজনের প্রাণহানি, স্রোতে ভেসে গেছে এক শিক্ষার্থী
![](https://sonalisangbad.com/wp-content/uploads/2022/06/1655628577.webp)
অনলাইন ডেস্ক: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, বন্যায় আমরা দুজনের প্রাণহানির খবর পেয়েছি। একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী স্রোতে ভেসে গেছে আরেকজন বয়স্ক ব্যক্তি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন।
সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে রোববার (১৯ জুন) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
সিলেট জেলার ৬০ শতাংশ এবং সুনামগঞ্জের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। এরই মধ্যে প্রায় এক লাখ মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বন্যা কবলিতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড এবং ফায়ার সার্ভিস স্পিড বোট নিয়ে উদ্ধার কাজ করছে। সবশেষ খবর অনুযায়ী দুই জায়গায় সেনাবাহিনীর ৩২, নৌবাহিনীর ১২ এবং ফায়ার সার্ভিসের ৪টি বোট কাজ করছে। এরমধ্যে সুনামগঞ্জে ৭৫ হাজার আর সিলেটে ৩০ হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, নিখোঁজের কোনো তথ্য এখনও আমরা পাইনি। গতকালের পর থেকে কোনো ক্যাজুয়ালটিও হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় মানুষ আটকে পড়ে আছে। সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। কিন্তু সুনামগঞ্জে পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত আছে। একই সাথে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
ডা. এনামুর রহমান বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তর ও বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে আমরা যে বার্তা পেয়েছি সেখানে বলা হয়েছে, সোমবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। মঙ্গলবার থেকে পানি কমতে থাকবে এবং টানা তিনদিন কমবে। এ সময় উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে কিন্তু দক্ষিণাঞ্চল বা ভাটির দিকে অবনতি হবে। আরও নতুন করে যে জেলাগুলোতে বন্যা দেখা দিয়েছে সেগুলো হলো— রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারি, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, জামালপুর, মৌলভিবাজার ও হবিগঞ্জ। এখন ১২টি জেলা বন্যা কবলিত। প্রায় ৭০টি উপজেলায় বন্যা রয়েছে। এটা বাড়ছে।
দেশের মধ্যাঞ্চলেও বন্যার আভাস রয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলে কমবে কিন্তু উত্তরাঞ্চলে বন্যা বাড়বে। কারণ ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। এর ফলে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা বেসিনে যে সব জেলা আছে সেগুলো বন্যা কবলিত হচ্ছে।
ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে প্রতিমন্ত্রী জানান, দুই জেলায় গতকাল পর্যন্ত আমরা একেকটি জেলায় ৮০ লাখ টাকা দিয়েছিলাম, আজ আরও ৫০ লাখ করে দিয়েছি। মোট এক কোটি ৩০ করে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা দুটি জেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যে জেলাগুলো নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে সেগুলোতে আমরা ১০ লাখ টাকা, ১০০ মেট্রিকটন চাল আর চার হাজার প্যাকেট করে শুকনা খাবার আমরা এরই মধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছি।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, যে সংখ্যায় বন্যা কবলিত হয়েছে সেখানে আরও ত্রাণ দরকার। কিন্তু আমরা যেটা দিচ্ছি বিতরণ করতে পারছে না। সাপ্লাইয়ের একটি কনটিনিউয়াস চেইন মেইনটেইন করা হচ্ছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী আমাদের আরও ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত জিআর চাল আছে, শুকনা খাবারও আছে। যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানে আমরা দেবো।
এনামুর রহমান বলেন, বন্যার একটি আভাস কিন্তু দেওয়া হয়েছিলে। আবহাওয়া আধিদপ্তর এবং বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র আগেই বলেছিলে, মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি এলাকায় বৃষ্টিপাত হবে। কিন্তু এত বৃষ্টি হবে এটা পূর্বাভাস দেওয়া হয়নি। ১৫ থেকে ১৭ জুন এই তিনদিনে ২৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এত বৃষ্টি পৃথিবীর কোথাও হয়েছে এমন রেকর্ড নেই। এ কারণে এত উচ্চতায় পানি এসেছে। এ ধরনের অভিজ্ঞতা ছিল না বলে আমরা বলবো না যে, সঠিক প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু ঝুঁকি কমাতে উদ্ধার কাজের জন্য কাজ করতে পেরেছি।
সোনালী/জেআর