ঢাকা | জুলাই ২৬, ২০২৪ - ৯:৩১ পূর্বাহ্ন

সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সম্মিলিত উদ্ধার তৎপরতা

  • আপডেট: Saturday, June 18, 2022 - 12:00 pm

অনলাইন ডেস্ক: স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট-সুনামগঞ্জের পানিবন্দিদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে সেনাবাহিনীর পর এবার উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত হচ্ছে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও কোস্টগার্ড। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, নৌবাহিনীর ডুবুরিদল কাজ শুরু করেছে। তাদের একটি দল সিলেট সদর উপ‌জেলার জালালাবাদ ইউনিয়নে কাজ করছে, আরেকটি দল কোম্পানীগঞ্জের দিকে রয়েছে। নৌবাহিনীর ৩৫ সদস্যের এই দল সালুটিকর এলাকায় ঘাঁটি করে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। বিকেলে ৬০ জনের আরেকটি দল উদ্ধার অভিযানে যুক্ত হবে।

তিনি আরও জানান, আজ দুপুরের পর কোস্টগার্ডের দুটি ক্রুজ আসবে। একটি সুনামগঞ্জ যাবে এবং একটি সিলেটে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত হবে। সিলেটে বিকেল নাগাদ কোস্টগার্ড উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দিতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

আজ থেকে বিমানবাহিনী দুটি হেলিকপ্টার নিয়ে উদ্ধার অভিযান চালাবে বলেও জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এছাড়া সেনাবাহিনী গতকাল শুক্রবার থেকে সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ এবং গোয়াইনঘাটে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ভয়াবহ বন্যায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক তলিয়ে গেছে। সারা দেশের সঙ্গে কার্যত এ অঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সিলেট নগরীসহ পাঁচ উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। জেলার প্রতিটি উপজেলাই কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। নৌকার অভাবে অনেকে ঘর ছেড়ে নিরাপদেও যেতে পারছে না। আড়াইশর বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।

শুক্রবার পানিতে তলিয়ে গেছে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা। জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলারও বিস্তীর্ণ এলাকাও পানিবন্দি। সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, জকিগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলায় পানি বাড়ছে। নগরীর অনেক এলাকা এখন পানির নিচে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার এবং সিলেট পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সারি নদীর পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে। পানির উচ্চতা বেড়েছে কুশিয়ারা ও লোভা নদীরও। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপরে বইছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, জেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য ৪৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে; দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে।

সিলেট ও সুনামগঞ্জের ৯টি উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বলে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল জানান।

সিলেট জেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গকুল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘এ পর্যন্ত জেলায় ২৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। এসব বিদ্যালয়ের পাঠদান সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।’

এছাড়া জেলার ৬০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এগুলোতে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. ওয়াদুদ।

বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ জানায়, কেউ কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। এই মুহূর্তে সুনামগঞ্জের সবার ঘরে সুপেয় পানি নেই। বিদ্যুৎ নেই। মুঠোফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ। পরিস্থিতি ক্রমে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

বন্যার পানি গতকালই ঢুকে পড়েছে সিলেটের কুমারগাওয়ের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে। এই উপকেন্দ্র দিয়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সুরঞ্জিত সিংহ বলেন, ‘কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি উপকেন্দ্রের সুইচ ইয়ার্ডে পানি প্রবেশ করেছে।’

সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে সিলেট মহানগরীতে ৩১ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যাকবলিত সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে।’

সোনালী/জেআর