বন্যার পানি রানওয়েতে, ওসমানী বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ
অনলাইন ডেস্ক: ভয়ঙ্কর বন্যার সাক্ষী সিলেটের মানুষ। হঠাৎ করে সিলেটজুড়ে আসা বন্যা সময়ে সময়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। চোখের পলকেই বাড়ছে বানের জল। এ অবস্থায় বন্যার পানি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করেছে। যার ফলে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার দুপুরে বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বন্যার পানি ইতোমধ্যেই বিমানবন্দরের রানওয়েতে চলে এসেছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রতিদিনের মতোই আমাদের ফ্লাইটগুলো বিমানবন্দরে অবতরণ ও বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করেছে। কিন্তু রানওয়ের কাছাকাছি বন্যার পানি চলে আসায় এখন থেকে আর কোনো ফ্লাইটের অবতরণ কিংবা উড্ডয়ন সম্ভব হবে না।
অন্যদিকে, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম আগামী ৩ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
এদিকে সিলেটে স্মরণকালের এই ভয়াবহ বন্যায় ঘর ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, মানুষ দাঁড়িয়ে দেখছে নিরুপায় হয়ে। অবস্থা এমন হবে ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করেনি কেউ। সব মিলিয়ে ভয়ঙ্কর এক বন্যার সাক্ষী এবার সিলেটের কয়েক লাখ মানুষ।
মাস খানেক আগে হওয়া বন্যাকে ২০০৪-এর বন্যার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন অনেকে। তবে এবার বয়োবৃদ্ধ মানুষেরাও ঠিক মনে করতে পারছেন না, কবে এমন ভয়ঙ্কর বন্যা দেখেছিলেন।
জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাজুড়ে দাঁড়াবার মতো জায়গাও নেই। খাবারের বদলে একটু শুকনো জায়গায় দাঁড়াবার হাহাকার করছে ওই উপজেলার মানুষেরা। এতো কম সময়ের মধ্যে উজানের ঢলের পানি সবকিছু ওলটপালট করে দিলো, কেউ কারো জন্য সাহায্যের হাতও বাড়াতে পারেনি।
মূলত ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের ভারী বৃষ্টি পাহাড়ি ঢলে এবার ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট। যে ভারী বৃষ্টিপাত ও প্রবল বন্যার কারণে রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় রেড এলার্ট জারি করেছে আসাম রাজ্য সরকার। এছাড়া পানি ওভারলোড হয়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে খুলে দেয়া হয়েছে মেঘালয় এবং আসাম রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কপিলি নদীর সুইচগেট। ফলে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে প্রবল স্রোতের জলধারা। যার প্রভাবে ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হতে যাচ্ছে সিলেটের নিম্নাঞ্চল।
বিশেষ করে ধলাই, গোয়াইন, পিয়াইন ও সারি নদী দিয়ে এসব ঢলের জল বাংলাদেশে প্রবেশ করায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলা। এমনকি সিলেট সদর উপজেলাও পড়েছে সেই বন্যার কবলে। যে বন্যার পানি বাড়ছে প্রতি মুহূর্তেই।
এদিকে ভারতের বরাক উপত্যকায়ও হচ্ছে অতিমাত্রার বৃষ্টি। আর সেই ঢলের পানি বাংলাদেশে আসছে সুরমা-কুশিয়ারা ও লোভা নদী দিয়ে। এতে সিলেটের জকিগঞ্জ, কানাইঘাটসহ আরও কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
শুধু তাই নয়, গ্রামের পর গ্রাম ভাসিয়ে নগরেও ঢুকেছে পানি। এরইমধ্যে সুরমা নদীর তীরবর্তী নগরের পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত কালিঘাট, মহাজনপট্টি, তালতলা, আলমপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি ও দোকানপাট পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সুরমা-কুশিয়ারা ও সারি নদীসহ সিলেটের সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার বেশ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সারি ও ধলাই নদীর পানি সময়ে সময়ে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাবাসীর জন্য।
এমন অবস্থার মাঝে সামান্যতম আশার খবর হচ্ছে, আসাম ও মেঘালয়সহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ১৭ জুন পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর (ইন্ডিয়া মেটিওরোলজিকাল ডিপার্টমেন্ট বা আইএমডি)। যদি পূর্বাভাস ঠিক থাকে তবেই আপাতত রক্ষা সিলেটবাসীর।