কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসের অদূরে গুলি, নিরাপত্তারক্ষীসহ নিহত ২
অনলাইন ডেস্ক: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় ভরদুপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার অনলাইনের খবরে বলা হয়, শুক্রবার পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড় থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বেকবাগানে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের আউট পোস্টে কর্মরত এক নিরাপত্তারক্ষী এ এলোপাথাড়ি গুলি চালান।
এতে কলকাতার রাজপথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় এক নারীর। পরে নিজেকেও গুলি চালিয়ে শেষ করে দেন ওই নিরাপত্তারক্ষী। আরও অনেকেরই গুলি লেগেছে বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। ওই নিরাপত্তারক্ষীর গলায় ক্ষত রয়েছে। এ নিয়ে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি আসেনি।
জানা গেছে, শুক্রবারই ওই নিরাপত্তাকর্মী বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের আউট পোস্টে কাজে এসেছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ওই পুলিশকর্মী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করেছিলেন। ১০ থেকে ১৫ রাউন্ড গুলি চালান তিনি। তারপর গলার কাছে গুলি করে নিজেকেও শেষ করে দেন। নিরাপত্তারক্ষীর ছোড়া গুলি গিয়ে লাগে এক নারীর গায়ে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। স্থানীয়দের দাবি, ছোড়া গুলি গিয়ে লাগে এক বাইক চালকের পিঠে।
এ সময় বাইকের পিছনে থাকা এক নারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিনি ঘটনাস্থলে নিহত হন। স্থানীয় সূত্রের দাবি, ওই নারী কোনও অ্যাপের মাধ্যমে বাইকটি বুক করেছিলেন। এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়ির গায়ে বেশ কয়েকটি গুলির চিহ্ন রয়েছে। শুক্রবার পার্ক সার্কাস মোড়ে একটি সংগঠনের জমায়েতে বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। তার মধ্যে এ ঘটনায় স্বভাবতই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
কলকাতা থেকে প্রকাশিত এবিপি লাইভ অনলাইনের খবরে বলা হয়, ওই নিরাপত্তারক্ষী আট-দশ রাউন্ড গুলি চলিয়েছেন। ঘটনার মিনিট কুড়ির মধ্যেই ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। ঘটনাস্থল থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
আনন্দবাজার অনলাইন জানায়, পার্ক সার্কাসে হামলাকারী নিরাপত্তা কর্মীর পরিচয় জানা গেছে। তার নাম চোডুপ লেপচা। তিনি কালিম্পঙের বাসিন্দা। কাজ করতেন কলকাতা পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর পঞ্চম ব্যাটালিয়নে। সপ্তাহখানেক আগে আরও অনেকের সঙ্গে তাকেও বেকবাগানের কাছে বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের আউটপোস্টের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে বহাল করা হয়েছিল।
শুক্রবার দুপুর প্রায় আড়াইটা। আচমকাই আউট পোস্ট থেকে বেরিয়ে আসেন চোডুপ। কাঁধে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল। কড়েয়া থানা এলাকার লোয়ার রেঞ্জ রোড দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এগোতে থাকেন তিনি। কাঁধের রাইফেল নেমে আসে হাতে, চলতে শুরু করে গুলি। এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে ছুড়তে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকেন চোডুপ। সেই সময় লোয়ার রেঞ্জ রোড ধরে এপিসি রোডের দিকে আসছিল একটি অ্যাপ নির্ভর বাইক। চোডুপের গুলি গিয়ে লাগে বাইকের দুই আরোহীর গায়ে। পিছনের আসনে বসেছিলেন এক নারী। তার মাথা ফুঁড়ে গুলি বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। বাইক চালকের গায়েও গুলি লাগে। তারপর নিজের রাইফেল থেকে গুলি চালিয়ে দেন নিজের গলার কাছে। ঘটনাস্থলেই চোডুপেরও মৃত্যু হয়।
কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার প্রবীন ত্রিপাঠী বলেন, ‘চোডুপ লেপচা সম্ভবত মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। সে কারণেই তিনি এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে নিজেও আত্মঘাতী হলেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়।’