পাচার হওয়া অর্থ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ
অনলাইন ডেস্ক: নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে বিদেশে পাচার করা অর্থ ও সম্পদ বৈধকরণের সুযোগ আসছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এক্ষেত্রে বিদেশের স্থাবর সম্পত্তি দেশে আনা না হলে ১৫ শতাংশ ও অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ এবং বাংলাদেশে পাঠানো নগদ অর্থের উপর ৭ শতাংশ হারে কর দেয়া হলে এনবিআরসহ আর কেউ এসব সম্পদ বা অর্থের বিষয়ে প্রশ্ন তুলবে না বলে বাজেটে প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে তিনি এজন্য আয়কর অধ্যাদেশে নতুন বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, প্রস্তাবিত বিধান অনুযায়ী বিদেশে অবস্থিত যে কোনো সম্পদের উপর কর পরিশোধ করা হলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ যে কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করবে না।
কোভিড মহামারী ও চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার পূর্বাভাসের মধ্যে রাজস্ব বাড়াতে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা যুক্তি হিসেবে তিনি বাজেট প্রস্তাবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় বিদেশে অর্জিত অর্থ ও সম্পদকে অর্থনীতির মূল স্রোতে আনয়নের মাধ্যমে বিনিয়োগ ও আর্থিক প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমি আয়কর অধ্যাদেশে নতুন বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করছি।
এ সুবিধা শুধু আগামী অর্থবছরের জন্য বহাল রাখার ঘোষণা দেন তিনি।
তার যুক্তি, প্রস্তাবিত বিধান কার্যকর হলে অর্থনীতির মূল স্রোতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়বে। আয়কর রাজস্ব আহরণ বাড়বে এবং করদাতারাও বিদেশে অর্জিত তাদের অর্থ-সম্পদ আয়কর রিটার্নে প্রদর্শনের সুযোগ পেয়ে স্বস্তিবোধ করবেন।
বর্তমান আইনে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাঠিয়ে বিদেশে সম্পত্তি করার সুযোগ নেই। বিনিয়োগ আর ব্যবসার জন্য লিয়াঁজো অফিস খোলার জন্য পৃথক সুনির্দিষ্ট আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুমোদন দিয়ে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদেশে বাংলাদেশিদের সম্পদ কেনা বা সেখান থাকা নগদ অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার করা কি না তা বাজেট উপস্থাপনকালে উল্লেখ করেননি।
অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার বিভিন্ন ধরনের সুযোগ বহু আগে থেকেই দিয়ে আসছে সরকার। তবে বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরানোর ক্ষেত্রে এ ধরনের সুযোগ আগে কখনও দেয়া হয়নি।
এই সুযোগ দেয়া হলে বাংলাদেশি নাগরিকরা বিদেশে তাদের সম্পদের তথ্য আয়ের বিবরণীতে যুক্ত করার সুযোগ পাবেন, ওই অর্থের উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে না।
ঊর্ধ্বমুখী আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পণ্য আমদানি করতে গিয়ে আগের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে অনেক। মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি ডলারের দরও চড়ছে; প্রতিনিয়ত দর হারাচ্ছে টাকা।
এমন পরিস্থিতিতে প্রধান এ বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়াতে এর আগে রেমিটেন্সের নীতিমালায় ছাড় দিয়ে যে কোনো পরিমাণ ডলার দেশে পাঠাতে প্রবাসীদের নথি জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০২২-২০২৩ সালের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে উপস্থিত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মন্ত্রীদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, তথ্যমন্ত্রী ড হাছান মাহমুদ প্রমুখ।
কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামের এবারের বাজেটটি প্রস্তুত হয়েছে সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘাটতি বাজেট হতে যাচ্ছে ৫১তম এ বাজেট। এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ধরা হবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।