ঢাকা | মে ৮, ২০২৪ - ১:০৭ অপরাহ্ন

‘নির্বিষ সাপ’ বিষধর বানিয়ে ছড়ানো হলো বিভ্রান্তি

  • আপডেট: Wednesday, June 8, 2022 - 1:15 pm

অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এবং স্বাদুপানির জলাশয়ে যত প্রজাতির সাপের বিচরণ রেকর্ড করা হয়েছে তার শতকরা প্রায় পঁচানব্বই ভাগ নির্বিষ বা বিষমুক্ত। অবশিষ্ট প্রায় পাঁচ ভাগ বিষাক্ত।

আর সাপেরা খুবই ভীতু প্রকৃতির সরীসৃপ প্রাণী। আঘাত না পেয়ে বা ভয় না পেলে কখনোই ছোবল বসায় না। মানুষ বিচিত্র প্রাণীটিকে দেখলে যত বিষধর সাপই হোক সে পালিয়ে যায়।

আরো লক্ষণীয় ব্যাপার, শিশুকাল থেকে সাপের প্রতি আমাদেরকে ভুল তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। যেমন- আমরা অনেকেই শিশুকালে আমাদের পাঠ্যবইয়ে পড়েছি ‘ওই অজগর আসছে তেড়ে, আমটি আমি খাবো পেড়ে’। অজগর এক প্রজাতির নির্বিষ সাপ, সে কখনোই তেড়ে আসে না।

‘শিশুর কামড়ে মারা গেছে গোখরা সাপের বাচ্চা’, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তাতে ভুল তথ্য পরিবেশন করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। প্রথমেই এই ভুল তথ্য ছড়িয়েছেন ওই শিশুর পরিবারের লোকজন। আর পরে অনেক সাংবাদিক যাচাই না করে তাদের বক্তব্য দিয়েই সংবাদটি পরিবেশন করেছেন।

ওই সংবাদে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গায় জান্নাতুল ফেরদৌস নামে এক শিশুর কামড়ে গোখরা সাপের বাচ্চা মারা গেছে। কিন্তু ওই সংবাদে যে সাপের ছবি দেওয়া হয়েছে, তা গোখরা সাপের বাচ্চার ছবি নয়। ওটা ছিল ‘ঘরগিন্নি সাপ’- এর বাচ্চা। এই সাপটি সম্পূর্ণভাবে নির্বিষ অর্থাৎ বিষমুক্ত এবং বসতবাড়ি আশপাশেই এরা অবস্থান করে। ঘরগিন্নি সাপের ইংরেজি নাম Common Wolf Snake এবং বৈজ্ঞানিক নাম Lycodon Aulicus.

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয় স্বনামধন্য বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফের সঙ্গে।

গণমাধ্যমে নির্বিষ সাপকে বিষধর বলে উল্লেখ করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্প্রতি সাপ নিয়ে ভুল তথ্য পরিবেশের মাধ্যমে পাঠক এবং মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। যদি সেই সাপটির একটি ছবিও না পাওয়া যেতো তাহলে হয়তো অনুমান করে লেখা যেতো। যেহেতু সাপটির ছবি পাওয়া গেছে।

সাংবাদিকদের উচিত ছিল সাপ বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে শনাক্ত তারপর সংবাদ প্রকাশ করা। তাহলে এই বড় ভুল বা এই দায়িত্বহীনতার বিষয়টি ঘটতো না।

তিনি আরও বলেন, যারা ঘরগিন্নি সাপকে নির্বিষ ভাবতো তারা এখন ছবি দেখে ভাবতেছে এটাও গোখরা সাপ। দেশের প্রায় সবগুলো গণমাধ্যমেই সংবাদটি এসেছে। তবে অনেকে শুধু সাপের বাচ্চা লিখেছেন।

সাপ চেনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেকোনো সাপের হাত থেকে বাঁচতে হলে মানুষকে আগে চিনতে হবে এটা বিষধর সাপ, নাকি নির্বিষ সাপ? বাজারে বিভিন্ন লেখকের লেখা বই পাওয়া যায়। সেগুলো পড়ে সাপের ছবির সঙ্গে পরিচিত হয়ে খুব সহজেই সাপ চেনা যেতে পারে। এছাড়া ফেসবুকভিত্তিক সাপ বিষয়ক একটি গ্রুপ আছে। যেটা বাংলাদেশে সবচেয়ে বড়। সেটা হলো: Deep Ecology And Snake Rescue Foundation. এই গ্রুপের মাধ্যমে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ সাপ চিনছেন। তারা বিভিন্ন কমেন্ট করেন যে, আগে আমরা এই সাপটি চিনতাম না, এখন চিনতে পারি। এর মাধ্যমে সহজেই মানুষ সাপ চিনতে পারবেন। সাপ সম্পর্কে সচেতন হতে গেলে শেখার কোনো বিকল্প নেই।

অনুসন্ধানী মানসিকতা নিয়ে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে গভীরভাবে জেনে প্রবন্ধ-নিবন্ধ বা ফিচার লেখার সাংবাদিকের খুবই অভাব বলেও মন্তব্য করেন বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ আসিফ।

সোনালী/জেআর