ঢাকা | মে ১০, ২০২৫ - ১১:১৬ পূর্বাহ্ন

রাজশাহীতে কোম্পানির মোড়কে চাল বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা

  • আপডেট: Tuesday, June 7, 2022 - 11:16 pm

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারকে চুক্তিবদ্ধ চালকল মালিকেরা ৪০ টাকা কেজি মোটা চাল সরবরাহ করছেন। অথচ বাজারে মোটা চালের কেজি ৪০ টাকার বেশি। ইতিমধ্যে রাজশাহীতে ৯৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। চাহিদার চেয়ে ধানের উৎপাদনও বেশি। এ সব নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘চালের উৎপাদন-বিপনন জোরদারকরণ’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুুষ্ঠিত হয়েছে।

এতে চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অবৈধ মজুতদারি রোধে অভিযান চালানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রাজশাহীতে কোনো কোম্পানির মোড়কে চাল বিক্রি করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় চালকল মালিক, ব্যবসায়ী, জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রথমে চালকল মালিকদের বক্তব্য আহ্বান করা হয়। তারা ব্যাখ্যা কেন এবং কীভাবে চালের দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলেন, চিকন চালের দাম বাড়ার কারণে মোটা চালের ওপরে চাপ পড়ছে। এই জন্য মোটা চালেরও দাম বাড়ছে। এছাড়া ধানের দাম বেশি ও শ্রমিকের দাম বেশির প্রভাবও চালের বাজারের ওপর পড়ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

সভায় রাজশাহীর চালকল মালিক ও চাল ব্যবসায়ী জসীম উদ্দিন বলেন, রাজশাহীতে মোটা চালের দাম বাড়তি দেখে তিনি মঙ্গলবার (৭ জুন) চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ৪৭ টাকা কেজি দরে মোটা চাল কিনেছেন। তিনি বলেন, ব্যবসায়ী হিসেবে তার একটা কমিশন আছে। একটা পরিবহন খরচ আছে। এগুলো যোগ করেই তাকে ৪৮ টাকা কেজি হিসেবে চালটা পাইকারি বিক্রি করতে হবে। খুচরা দোকানে বিক্রি হবে ৫০ টাকা কেজি দরে।

তিনি বলেন, রাজশাহী অনেক ব্যবসায়ী নওগাঁর সাবাইহাট ও দেলুয়াবাড়ী বাজার থেকে ধান কিনেন। এই বাজারে এখন ধানের দাম ১ হাজার ৫১০ টাকা মণ। এই দামের চাল দিয়ে ৮৪ কেজির এক বস্তা চল তৈরি করতে তাদের খরচ পড়ছে ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ১০০ টাকা। কেজি প্রতি উৎপাদন খরচ পড়ছে ৫৮/৫৯ টাকা। এই চাল থেকে মরা চাল, খুদ বাছাই করলে চালের দাম কেজি প্রতি ৬১ টাকা পড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, চিকন চালের দাম বেড়েছে তাই মোটা চালের চাহিদা বেড়েছে। এই জন্য মোটা চালের দাম বেড়েছে।

রাজশাহী জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ীরা চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। রাজশাহীর মিল মালিকেরা গরীব। তারা দেউলিয়া হওয়ার পথে। ছয় বছর আগে জেলায় ৩৪০ টা চালকল ছিল। এখন তাদের সংখ্যা ২০০ এর নিচে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যতম চাল উৎপদনকারী দেশ ভিয়েতনামেই মোটা চালের কেজি ৫০ টাকার নিচে নয়। অথচ কালোবাজারির বদনাম হচ্ছে চালকল মালিকদের।

শাহ্্মখদুম অটো রাইস মিলের প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ১০০ কেজি ধান মাড়াই করলে ৫২ থেকে ৫৮ কেজি চাল পাওয়া যায়। অটোরাইস মিলে ভাঙানোর জন্য এক মণ ধান কিনে পরিষ্কার করলে তা থেকে ৩ কেজি বাদ চলে যায়। চাল থেকে পাথর, খুদ, ছোট চাল ইত্যাদি সাত-আট ধরনের জিনিস বেছে বাদ দিতে হয়। এতে করে এক মণ ধান থেকে কোনোভাবেই ২২ কেজির বেশি চাল হয় না। বাজার ৮/৯ শ টাকা শ্রমিকের দাম। এসব মিটিয়ে কৃষককেও ধানটা লাভেই বিক্রি করতে হয়। তিনি বলেন, কৃষকেরা এই ধান বেচেই সার-কীটনাশক থেকে শুরু করে সবকিছুই করে।

রাজশাহীর পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, অভিযান চালিয়ে কোনো চালকল মালিকের গুদামে যদি অবৈধ চালের মজুত পাওয়া যায়, তাহলে সেই চাল বাজারে সরকারি ৪০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হবে। তেল মজুতদারেরা সেই চেষ্টা করেছিল। তারা লাখ লাখ লিটার তেল জব্দ করেছেন। সেগুলো টিসিবির দরে বিক্রি করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এখন তেলের বাজারটা স্থিতিশীল হয়েছে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল সভার সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময় বলেন, ‘চালের দাম নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। কারণ বাজারে চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে চালের দাম নির্ধারিত হয়। কেউ যাতে গুদামে অযাচিত মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সেই ব্যাপারেই আমরা ব্যবস্থা নেবো।’

তিনি বলেন, রাজশাহীতে চাহিদার চেয়ে ২ লাখ ৭৩ হাজার মে. টন বেশি ধান উৎপাদিত হয়েছে। ১৪৮টা চালকলের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয়েছে, তারা আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ১০ হাজার মে. টন চাল সরবরাহ করবে। কেউ চাল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে এবার আর কালো তালিকা করা হবে না। ভ্রাম্যমাণ আদালত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাল থেকেই অভিযান শুরু হবে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন কোম্পানির নামে চাল মোড়কজাত করে কেজিতে চার-পাঁচ টাকা বেশি নিয়ে বিক্রি করা হয়। রাজশাহীতে এটা করা যাবে না। তিনি সবার কাছ থেকে এসব ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করেন।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS