ঢাকা | মে ১৯, ২০২৪ - ৯:৪৪ পূর্বাহ্ন

রাসিকের সিটিজেন চার্টার অ্যাপে তথ্যের সঙ্গে মিলবে সেবাও

  • আপডেট: Tuesday, June 7, 2022 - 9:12 pm

শিরিন সুলতানা কেয়া: প্রতিটি সরকারি দপ্তরের সামনেই থাকে সাইনবোর্ড। কী সেবা কীভাবে পাওয়া যাবে, কোন কর্মকর্তার কাছে যেতে হবে, নির্ধারিত সরকারি ফি কত, কত দিনের মধ্যে সেবা পাওয়া যাবে এই সব তথ্যই থাকে সাইনবোর্ডটিতে। দাপ্তরিক ভাষায় এই সাইনবোর্ডটির নাম ‘সিটিজেন চার্টার’।

এই সিটিজেন চার্টার যে শুধু দপ্তরের সামনেই এখন থাকছে তা নয়। দপ্তরগুলোর ওয়েবসাইটেও দেওয়া হচ্ছে সিটিজেন চার্টার। সেখানেও থাকে যাবতীয় তথ্য। তবে আইসিটি ডিভিশনের সহযোগিতায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) এমন একটি সিটিজেন চার্টার অ্যাপ চালু করছে যেখানে তথ্যের সঙ্গে মিলবে সেবাও। ইতোমধ্যে অ্যাপ প্রস্তুতের কাজ শেষ হয়েছে।

গতবছর রাজশাহী সিটি করপোরশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এই অ্যাপের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এখন অ্যাপটির উন্নয়নের কাজ চলছে। দু’এক মাসের মধ্যে পুরোপুরি সেবা মিলবে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।

নাগরিক সুবিধা বাড়াতে ‘সিটিজেন চার্টার অ্যাপ’ নামের অ্যাপ প্রথম চালু করে সিলেট সিটি করপোরেশন। এর সাহায্যে নাগরিকরা ঘরে বসেই পরিশোধ করতে পারেন সব ধরনের সেবার বিল। এরপর রাজশাহী সিটি করপোরেশনেরও একই ধরনের অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এই অ্যাপটির নাম ‘স্মার্ট রাজশাহী’। সরকারের আইসিটি ডিভিশনের সহযোগিতায় www.smartrajshahi.gov.bd নামে আলাদা একটি ওয়েবসাইটও ইতোমধ্যে খোলা হয়েছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নিজস্ব দাপ্তরিক ওয়েবসাইট থাকলেও নাগরিক সেবা মানুষের হাতের মুঠোয় দিতে চালু করা হয়েছে নতুন ওয়েবসাইট ও অ্যাপ। এখানে মিলবে রাসিকের ২৪টি সেবা।

সিটি করপোরশনের তথ্যমতে, রাসিক সচিবালয়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, প্রকৌশল, রাজস্ব ও স্বাস্থ্য বিভাগকে অনলাইনে এ্যাক্সেস করা যাবে। এই সকল বিভাগের সংশ্লিষ্ট সেবাসমূহ যেমন- বিরোধ নিস্পত্তি, বিবাহ বিচ্ছেদ, আর্থিক সহযোগিতা, নাগরিক সনদপত্র, উত্তরাধিকার সনদপত্র, বিবিধ সনদপত্র, সিটি কর্পোরেশনের স্থান ভাড়া, ইজারা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশক নিয়ন্ত্রণ, ঠিকাদার লাইসেন্স নবায়ন, তালিকাভূক্ত ভূমি ব্যবহার অসম্মতি, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, রাজস্ব সংগ্রহ, নেম সেপারেশন, হোল্ডিং ট্যাক্স, হোল্ডিং ট্যাক্স রিভিউ, হোল্ডিং ট্যাক্স পুননির্ধারণ, প্রেমেসিস নিবন্ধন, পরিবশে দূষণ প্রতিরোধ, পোষা প্রাণীর লাইসেন্স, মেডিক্যাল রেজিস্ট্রেশন প্রভূতি সেবার জন্য নাগরিকরা অনলাইনে ওয়েবসাইট ও অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। শুধু আবেদনই নয় সেবার নির্ধারিত মূল্য, সেবার অগ্রগতি যাচাই করার পাশাপাশি চূড়ান্ত সেবাও অনলাইনে পাওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন রাসিকের কর্মকর্তারা।

এভাবে সেবা নিতে অ্যাপ কিংবা ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে নাগরিক সেবার জন্য একজন নাগরিককে নিবন্ধন করতে হবে। এই নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রসহ কিছু ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে। একবার নিবন্ধন করলেই নাগরিক শুধুমাত্র লগ ইন করেই পরবর্তীতেও ভিন্ন ভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র ভেরিফিকেশনের পর নিবন্ধত নাগরিক সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সমূহের সেবা থেকে নির্দিষ্ট সেবার জন্য অনলাইন ফরম পূরণ করে আবেদন করতে পারবেন। প্রয়োজনীয় সংযুক্তিগুলো নির্দিষ্ট ফরম্যাটে আবেদনের সাথে যুক্ত করতে হবে।

সেবা প্রাপ্তি জন্য সেবার নির্দিষ্ট মূল্য দুইভাবে পরিশোধ করা যাবে। প্রথমত অনলাইনে বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড বা বিকাশের মাধ্যামে সিটি করপোরেশনের পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে ঘরে বসেই মূল্য পরিশোধ করা যাবে। দ্বিতীয়ত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে টাকা পরিশোধ করে পেমেন্ট স্লিপটি ছবি তুলে বা স্ক্যান করে আবেদনের সাথে সংযুক্ত করে দিতে হবে। প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদানের পর নাগরিকরা তাঁদের প্যানেল থেকে পেমেন্টের স্ট্যাটাস দেখতে পাবেন। একটি সফল পেমেন্টের পর নাগরিকের আবেদনটি পরবর্তী ধাপের জন্য প্রক্রিয়াকরণ করা হবে।

পেমেন্টেটি সফল হলে অনলাইন প্লাটফর্মের ভেতর দিয়েই আবেদনগুলো সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে পর্যায়ক্রমে পৌঁছে যাবে। তাঁদের কার্যক্রম শেষ হবার পর নাগরিক সেবার জন্য চূড়ান্তভাবে বিবেচিত হলে তিনি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সেবাটি তাঁর প্যানেল থেকেই গ্রহণ করতে পারবেন। বিভিন্ন সনদ, লাইসেন্স, অনুমতি পত্র, বরাদ্দ প্রভূতির ডিজিটাল ভার্সন নাগরিকরা সিস্টেম থেকে ডাউনলোড ও প্রিন্ট করতে পারবেন। পরবর্তীতে সিটি করপোরেশনে উপস্থিত হয়েও হার্ড কপি সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।

রাসিকের ট্যাক্সেশন কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এই স্মার্ট রাজশাহী আ্যপের এখনো অটোমোশন চলছে। কিছু কাজ প্রক্রিয়াধীন। তবে অ্যাপের মাধ্যমে সেবা গ্রহণের আগ্রহ বাড়ছে। তিনি বলেন, আগামী জুলাই-আগস্টের পর থেকে এই অ্যাপ ব্যবহার করে জনগণ বেশি সুবধিা নিতে পারবেন। এতে জনগণের ভোগান্তি অনেক বেশি কমবে। অফিসে আসতে হবে না। অনলাইন থেকেই কাজ খুব সহজে করতে পারবেন।

রাসিকের সহকারী প্রোগ্রামার হোসনে আরা বলেন, গত বছরে অ্যাপটি উদ্বোধনের পর থেকেই এর কাজ চলছে। তবে সার্ভার থেকে শুরু করে পেমেন্টসহ আর কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। আশা করছি সামনের দুই-এক মাসের মধ্যেই এই অ্যাপের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে। এই মূহুর্তে আমরা প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। কীভাবে সেবা তাই আশা করছি অ্যাপটি চালু হলে আমরা সবাইকে সেরা সেবাটাই দিতে পারবো। তখন সেবা প্রার্থীর কোন ভোগান্তি থাকবে না। অনলাইন ব্যবহার করে তারা খুব সহজেই সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।

সোনালী/এসএসকে/আরআর

আরও পড়ুন: অভিযোগের অপেক্ষায় জিআরএস, মিলছে প্রতিকার