চরাঞ্চলে ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ করতে হবে
অনলাইন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যেসব চরাঞ্চল আছে সেখানে ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। জাতির পিতা বলতেন, বৃক্ষরোপণ করলে প্রাকৃতিকভাবে আমরা অনেক ভূমি উত্তোলন করতে পারি। এছাড়া আমরা নদীগুলো ড্রেজিংয়ের পদক্ষেপ নিয়েছি। অনেক নদী ড্রেজিং করছি। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর ভেতর থেকে আমরা অনেক ভূমি উত্তোলন করতে সক্ষম হচ্ছি। ভূমি উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে বনায়ন করা এবং পরবর্তীতে সেগুলো আমরা শিল্পায়নের জন্য ব্যবহার করতে পারি, বসতির জন্য ব্যবহার করতে পারি। চাষাবাদের জন্য ব্যবহার করতে পারি। সেগুলো কিন্তু আমরা করে যাচ্ছি। এটা আরও ব্যাপকভাবে (কর্মসূচি) আমাদের নিতে হবে।
রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা- ২০২২ এবং জাতীয় বৃক্ষ রোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলা-২০২২’ এর উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
তিনি বলেন, আমাদের অত্যন্ত দুর্ভাগ্য যে সোনাদিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে যে সমস্ত গাছ হয়েছিল সরকারে আসে বিএনপি সেখানে মাছের ঘের করতে শুরু করে। এমনকি সুন্দরবনের ভেতরে ঘষিয়াখালী খাল, যেটা জাতির পিতার কাটা, সেটা পশুর নদী হয়ে সাগরে পড়েছে। ওই খাল প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মংলা পোর্টও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল বিএনপি সরকার। সুন্দরবনের প্রায় ২৫০ খালের মুখ বন্ধ করে সেখানে চিংড়ি চাষ করা হতো। সেখান থেকে আমরা প্রায় ১০০ খাল উন্মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। আমি আহ্বান করব বাকি খালগুলো যেন উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনের ভেতরে শ্যালা নদী আছে। এখানে কিন্তু আমাদের ডলফিন থেকে শুরু করে যেসব পশু আছে, তারা পানি খায়। আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগার ওই নদীতে পানি খায়। আমাদের জীববৈচিত্র্য ওখানে রয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো ঘাষিয়াখালী খাল বন্ধ করে দিয়ে জাহাজগুলো ওই শ্যালা নদী দিয়ে যাতায়াত শুরু করে। আমি সরকারে আসার পর (দ্বিতীয় দফা) সেই খাল আবার কেটে দিয়েছি। কিন্তু ঘাষিয়াখালী খাল টিকে থাকবে তখনই যখন বাকি খালগুলো সুন্দরবনের ভেতর থেকে উন্মুক্ত করা হবে।
তিনি বলেন, আমাদের বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এখানে আছেন। তিনি ওই এলাকার সংসদ সদস্য। তাকে আমি বলব, এ ব্যাপারে যেন আরও বেশি উদ্যোগ নেয়া হয়। আমাদের যে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা আছেন তাদেরও বলব, বাকি যে খালগুলো আছে সেগুলো উন্মুক্ত করে দেয়া। তাহলে খালটার নাব্যতা থাকবে এবং আমাদের সুন্দরবনের জন্য সেটা ভারসাম্য রক্ষা করবে। আমরা বিভিন্নভাবে এসব উদ্যোগ নিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নদীগুলো বাঁচিয়ে রাখতে পারলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও আমরা মুক্তি পাব। লবণাক্ততা থেকেও আমরা মুক্তি পাব এবং আমাদের মৎস্য সম্পদ বা জলসম্পদ সেটাও বৃদ্ধি পাবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমাদের বন সংরক্ষণ, সেটা যেমন করতে হবে; এখন আরেকটা বিষয়ে মানুষ খুব উৎসাহিত হচ্ছে, ছাদবাগান, ইতোমধ্যে একজন পুরস্কারও পেয়েছেন। এ ধরনের উদ্যোগগুলো আরও উৎসাহিত করা উচিত। ছাদবাগানটাও ব্যাপকভাবে কাজে লাগছে।
‘আপনারা জানেন, করোনাভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিতে যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। এর উপরে আবার এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ফলে আজ আমাদের যেসব খাদ্য আমদানি করতে হয় সেগুলোর ভাড়া যেমন অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে, পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্য পাওয়াটাও এখন কষ্টকর হয়ে গেছে। বাংলাদেশের জমি উর্বর, আমাদের মানুষ আছে। তাই আমাদের নিজের ফসল নিজেদের ফলাতে হবে। যেসব জিনিস আমাদের প্রয়োজন, তা আমরাই উৎপাদন করব। এতে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন রক্ষা পাবে, আমরা পরনির্ভরশীলতাও কাটিয়ে উঠতে পারব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা আমাদের বনকে ২২ ভাগে উন্নীত করতে পেরেছি। এটা মাত্র ১১ ভাগ পেয়েছিলাম ৯৬ সালে। বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার ফলে আজ তা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের সামাজিক বনায়নের বিষয়টাও ব্যাপকভাবে করে যেতে হবে। এতে দরিদ্র জনগোষ্ঠী লাভবান হবে। তারা নিজেরা গাছ শুধু লাগায় না, গাছগুলো চমৎকারভাবে পাহারা দেয়। এটা নিজে আমি দেখেছি। আমাদের বনভূমি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি এর সার্বিক উন্নয়নের কাজও করে যেতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।
আগামী ১৫ জুন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন করা হবে— জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রত্যেকটা সহযোগী সংগঠন, আমাদের কৃষক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ; আমাদের যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, মহিলা শ্রমিক লীগ সকল সংগঠন, তারা কিন্তু ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ করে। শুধু করেই না, করার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে তারা ছবিও পাঠায়। এটা বাধ্যতামূলক।