মঞ্চ থেকে সভাপতি-সম্পাদককে ‘তাড়িয়ে’ দিলেন এমপি!
স্টাফ রিপোর্টার: সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তাড়িয়ে দিয়ে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা করলেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। শনিবার সকালের বর্ধিত সভায় কিছুক্ষণ ধাক্কাধাক্কি ও হট্টগোল হয়। এমপির পক্ষের লোকজন মারমুখী হয়ে উঠলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ উপজেলা কমিটির অধিকাংশ নেতাকর্মী সভাস্থল ত্যাগ করেন।
তানোর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের এ বর্ধিত সভায় রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারাও উপস্থিত ছিলেন। তবে তারা এমপি ফারুক ও তার সমর্থকদের নিবৃত্ত করতে পারেননি।
তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী অভিযোগে বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে আগামী ১৬ জুন কাউন্সিল ডাকা হয়েছে। সম্মেলন উপলক্ষে শনিবার সকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তিনি সভাপতিত্ব করছিলেন। এ সময় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ জেলা ও উপজেলা কমিটির অধিকাংশ নেতা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শুরুর এক ঘণ্টা পর এমপি ফারুক চৌধুরী তার একদল সমর্থক নিয়ে সভাস্থলে প্রবেশ করেন। এ সময় ফারুক চৌধুরীর বেশ কয়েকজন সমর্থক যারা হাইব্রিড নামে খ্যাত তারা মঞ্চের দিকে মারমুখী হয়ে তেড়ে আসেন। অকথ্য ভাষায় তাদের গালাগাল শুরু করেন। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। ফারুক চৌধুরীর কয়েকজন অনুসারী আমাকে ও মামুনকে ধাক্কা দিয়ে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেন। পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় আমি ও সাধারণ সম্পাদকসহ উপজেলা কমিটির নেতারা হল ছেড়ে বের হয়ে আসি।
এদিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বর্ধিত সভা থেকে তাড়িয়ে দিয়ে ফারুক চৌধুরী তার কয়েকজন অনুসারীকে নিয়ে নিজেই পুনরায় সভা শুরু করেন। সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর বর্ধিত সভা শেষ করা হয়। অন্যদিকে বর্ধিত সভায় বিশৃঙ্খলার কারণে আগামী ১৬ জুন ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল বাতিল হতে পারে বলে জেলা নেতারা জানিয়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাকে এমনটাই জানিয়েছেন। তানোরে এমপির সঙ্গে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কিছু সমস্যা আছে। উভয়পক্ষই আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন তারা একমত হয়ে সুষ্ঠুভাবে বর্ধিত সভা করে কাউন্সিলও করবেন। কিন্তু তারা কেউই কথা রাখলেন না। তারা মিলেমিশে কাজ না করতে পারলে তানোরে কাউন্সিল করাও সম্ভব হবে না।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মঞ্চ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তানোর উপজেলা কমিটির বর্ধিত সভা করার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচন এবং ইউপি নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে রাব্বানী-মামুন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করেন। এর ফলে অনেক এলাকায় দল মনোনীত প্রার্থীরা জিততে পারেননি। বর্ধিত সভায় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা তাদের মঞ্চে দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। পরিস্থিতি বুঝে তারা নিজেরাই চলে যান। তাদের তাড়িয়ে দেওয়ার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের মঞ্চে বসতে বললেও তারা সভাস্থলে ফিরে আসেননি। নেতাকর্মীদের অভিভাবক হিসেবে আমি সভায় যোগ দিয়েছি মাত্র। আমার কোনো ভূমিকা ছিল না।
এদিকে দলীয় নেতাকর্মীদের একটি সূত্র জানিয়েছে, এক সময় সভাপতি রাব্বানী ও মামুন এমপি ফারুক চৌধুরীর অতি আস্থাভাজন হিসেবে এলাকার সব স্বার্থ একচেটিয়া দেখভাল করেছেন। তবে গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এমপির সঙ্গে রাব্বানী ও মামুনের চরম বৈরিতা শুরু হয়। ইতোপুর্বে উভয়পক্ষের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ শনিবার বর্ধিত সভা থেকে রাব্বানী ও মামুনকে বের করে দেওয়া চলমান বৈরিতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।