আরডিএ কর্মকর্তার স্ত্রীর কাছেও অর্ধকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান শেখের স্ত্রী নিশাত তামান্নার (৩৯) কাছেও প্রায় অর্ধকোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আয় বহির্ভুত এই সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তামান্নার বিরুদ্ধেও দুদক মামলা করেছে।
এর আগে ৭৬ লাখ ৫০ হাজার ৬৮৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে গত রোববার দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ে মামলা হয়। এ মামলার বাদী দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন। কামরুজ্জামান শেখের স্ত্রী নিশাত তামান্নার বিরুদ্ধেও মামলা করেছেন আমির হোসাইন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, নিশাত তামান্নার সম্পদ বিবরণী চেয়েছিল দুদক। নিশাত তামান্না তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন যে , তার নামে ১৬ লাখ ১৭ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ ও ১০ লাখ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। অর্থাৎ তার নামে মোট ২৬ লাখ ১৭ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। কিন্তু তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে আয়কর নথি ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় জানা যায়, তার নামে ৫৬ লাখ ৯১ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। ফলে তিনি দুদকে তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৩০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য অসৎ উদ্দেশ্যে গোপন করে মিথ্যা তথ্য প্রদান করেছেন।
আপরদিকে সম্পদ বিবরণী যাচাই ও অনুসন্ধানকালে আয়কর নথি ও অন্যান্য রেকর্ডপত্র অনুযায়ী, তার বৈধ আয় পাওয়া যায় সর্বমোট ১২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। তার ব্যয় পাওয়া যায় ১০ লাখ ৭০ হাজার ২১১ টাকা। সুতরাং তার বৈধ সঞ্চয়ের পরিমাণ মাত্র ১ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮৯ টাকা। ফলে তিনি অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের সাথে অসংগতিপূর্ণ ৫৫ লাখ ১৩ হাজার ২১১ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন, যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়া তিনি অপরাধলব্ধ ৫৫ লাখ ১৩ হাজার ২১১ টাকার অবৈধ উৎস, প্রকৃতি, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ, উৎস গোপন বা আড়াল বা ছদ্মাবৃত্ত করার লক্ষ্যে স্থানান্তর/রূপান্তর/ হস্তান্তর করেছেন, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই তার বিরুদ্ধে দুদক ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করা হয়েছে। গত সোমবার মামলা করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নথিপত্র সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে দুদক জানিয়েছে।
তামান্নার স্বামী আরডিএর সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামান চাকরিতে যোগ দেন ২০০৪ সালে। অনিয়ম করে শুধু মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে তাকে সে সময় নিয়োগ দেওয়া হয়। এই অনিয়মের কারণে দুদক মামলা করে। এ মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল হয় ২০১৮ সালের ১৪ জানুয়ারি। এরপর ৭৬ লাখ ৫০ হাজার ৬৮৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের ব্যাপারে গত রোববার তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে। এরপর তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও মামলা করা হলো। তবে তিনি এবং তার স্ত্রী কোন অবৈধ সম্পদ অর্জন করেননি বলে কামরুজ্জামান দাবি করেছেন। কামরুজ্জামান এখন রাজশাহীতে নির্মাণাধীন ‘বঙ্গবন্ধু স্কয়ার’ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।