টানা দুই বছর ব্যাটালিয়ন সেরা র্যাব-৫
স্টাফ রিপোর্টার: বহুল আলোচিত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কাজী আরেফ হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রওশন ওরফে আলী ওরফে উদয় মণ্ডল লুকিয়ে ছিলেন রাজশাহীতে। ২২ বছর তিনি এখানে কাটিয়ে দিলেও কেউ টেরই পায়নি। অবশেষে তাঁকে খুঁজে বের করেছেন র্যাব সদস্যরা। গত বছরের আগস্টে তিনি গ্রেপ্তার হন।
এই অভিযানের কারণে র্যাব-৫ সব ব্যাটালিয়নের মধ্যে ২০২১ সালে ‘বেস্ট অপারেশন’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০২১ সালে র্যাব-৫ অস্ত্র উদ্ধারে প্রথম, মাদকদ্রব্য উদ্ধারে তৃতীয় এবং আভিযানিক সাফল্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। সফলতা ছিল আগের বছরেও। ২০২০ সালে এই ব্যাটালিয়ন জঙ্গি গ্রেপ্তার ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জনসহ সার্বিকভাবে শ্রেষ্ঠ ব্যাটালিয়ন হিসেবে প্রথম স্থান অধিকার করে।
সারাদেশে র্যাবের মোট ১৫টি ব্যাটালিয়নের মধ্যে র্যাব-৫ টানা দু’বছর এই সফলতা পেয়েছে। গত ২৩ মে ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ারের হাতে গেল বছরের শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফি তুলে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এ সময় তিনি র্যাব-৫ এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। র্যাব-৫ এভাবেই আগামীতে কাজ করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
র্যাব-৫ এর সদর দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালে রাজশাহী অঞ্চল থেকে ৫৫ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৫। এ ছাড়া ৯১টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ১৭১ রাউন্ড গুলি, ৫৭টি ম্যাগজিন, ৬৯ কেজি হেরোইন, ৩৮ হাজার ৩৮৭ বোতল ফেনসিডিল, ১ লাখ ৬২ হাজার ১৪৫ পিস ইয়াবা বড়ি, ২ হাজার ২৭৮ কেজি ২০০ গ্রাম গাঁজা ও ৯ হাজার ৬২৭ লিটার দেশী মদ উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানে ৪২ জন অস্ত্র ব্যবসায়ী, ২ হাজার ৫৪২ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও অপহরণকারী, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি, ভেজাল ব্যবসায়ী, ভুয়া চিকিৎসক, প্রতারক, হত্যা ও ধর্ষণ মামলার পলাতক আসামি, জুয়াড়িসহ বিভিন্ন অপরাধে সে বছর মোট ৩ হাজার ৫৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানিয়েছে, ২০২০ সালে রাজশাহী অঞ্চলের প্রায় সব জঙ্গি নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর ফলে এ অঞ্চলে তাদের তৎপরতা একেবারেই কমে গেছে। বার বার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে তারা ব্যর্থ হয়েছে। যারা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিল ২০২১ সালে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই বছর র্যাব-৫ ২৬ জন জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
এ ছাড়া ওই বছর ১১৯টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ২০৭ রাউন্ড গুলি, ৭৬টি ম্যাগজিন, ১১৮ কেজি হেরোইন, ১৬ হাজার ৩৯৮ বোতল ফেনসিডিল, ১ লাখ ৪৬ হাজার ১৮৮ পিস ইয়াবা বড়ি, ১ হাজার ১৬৩ কেজি গাঁজা, ৬৭ হাজার ৮৯৫ লিটার দেশী মদ, ৯ হাজার ৬০১টি ট্যাপন্টোডল ট্যাবলট ও ২ হাজার ১৭৬টি ব্রুপনিরফনি ইঞ্জকেশন উদ্ধার করা হয়েছে। গতবছর ৬৭ জন অস্ত্র ব্যবসায়ী ও ২ হাজার ৪৫২ জন মাদক ব্যবসায়ীসহ অপহরণকারী, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ছাড়াও অন্যান্য অপরাধে মোট ১ হাজার ৭০ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, ‘সীমান্ত এলাকা হওয়ার কারণে রাজশাহী অঞ্চলে অস্ত্র ও মাদকের কারবার বেশি। এ কারণে উদ্ধারও বেশি। তবে ঢাকা কিংবা অন্যান্য এলাকার মত এখানে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে কম। তাও যে ঘটনাই ঘটুক না কেন, র্যাব অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেয়। তাই পর পর দুবার শ্রেষ্ঠ ব্যাটালিয়ন হয়েছে র্যাব-৫। শুধু ভৌগলিক কারণে র্যাব-৫ এর এই অর্জন নয়।’
আগের তিনজন অধিনায়ককে স্বরণ করে র্যাব-৫ এর বর্তমান অধিনায়ক বলেন, ‘২০২০ সালে র্যাব-৫ এর অধিনায়ক ছিলেন ডিআইজি মাহাফুজুর রহমান। ২০২১ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল মোত্তাকিম ও জিয়াউর রহমান দায়িত্ব পালন করেছেন। এখানে যাঁরা আসেন, সবাই অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেন। ফলে র্যাব-৫ এই গৌরব অর্জন করেছে।’
লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার জানান, এখন তাঁরা রাজশাহী অঞ্চলটাকে মাদকমুক্ত করতে চান। সেই লক্ষ্য রেখেই কাজ করছেন। এ ছাড়া সামনে নির্বাচন নিয়েও তাঁরা পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন এলে অবৈধ অস্ত্রের চাহিদা বাড়ে। নির্বাচনের কারণে রাজশাহী অঞ্চল দিয়ে যেন অবৈধ অস্ত্র আসতে না পারে তার জন্য আমরা এখন থেকেই সতর্ক হচ্ছি। সীমান্ত এলাকায় গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।’