ঢাকা | এপ্রিল ৩০, ২০২৫ - ৭:০২ অপরাহ্ন

শিরোনাম

রাণীনগরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে ’গোনা গ্রন্থাগার’

  • আপডেট: Wednesday, June 1, 2022 - 10:27 pm

এসএম সাইফুল ইসলাম, রাণীনগর (নওগাঁ) থেকে: নওগাঁর রাণীনগরে গ্রামীন জনপদে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে গোনা গ্রন্থাগার। এই গ্রন্থাগার থেকে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে বই প্রেমী মানুষদের মাঝে। শুক্রবার বাদে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই গ্রন্থাগারে বই পড়তে আসেন পাঠকরা।

প্রাথমিক স্কুল থেকে শুরু করে হাই স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী এবং চাকুরি প্রার্থীসহ বিভিন্ন শিক্ষিত বেকার ছেলে-মেয়েরা এই গ্রন্থাগারে নিয়মিত পাঠক বলে জানান গ্রন্থগার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান উদ্যোক্তা সবুজ খান। সে নিজেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে এই গ্রন্থাগারিটি তত্বাবধান করেন।

স্থানীয়দের গ্রন্থাগার মুখী করতে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের নাস্তারও ব্যবস্থা করেন। তবে সবুজ খানের আক্ষেপ গত ২বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানটি চলমান থাকলেও সরকারের কোন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এই প্রতিষ্ঠানটিতে এখনো পরিদর্শনে আসেনি। এমনকি সরকারি কোন সহযোগীতা এই প্রতিষ্ঠানের ভাগ্যে জোটেনি।

জানা গেছে, উপজেলার গোনা ইউনিয়নের গোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই এই গ্রন্থাগারটির অবস্থান। ২০২১ সালে ১ডিসেম্বর পাঠকদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ওই গ্রামের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ নওগাঁ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খানের পরামর্শে তার ছোট ভাই জহুরুল ইসলাম খান লুলু এবং প্রতিবেশি ভাতিজা সবুজ খানের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় গোনা গ্রন্থাগার স্থাপন করা হয়। গোনা গ্রামের কিছু শিক্ষানুরাগী বেশ কিছু বই এই গ্রন্থাগারে দিয়ে সহযোগীতা করেন। সার্বিক ভাবে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করছেন সবুজ খান নামে এক শিক্ষিত যুবক। বর্তমানে এই গ্রন্থাগারটিতে প্রতিদিনের তালিকাভূক্ত পাঠক সংখ্যা প্রায় ২শ’র বেশি।

গোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গায় টিন সেডের ছোট্ট একটি ঘরের আলমারিতে সাজানো রয়েছে শিশু কিশোরদের বই থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য, বিনোদন, রাজনীতি, অর্থনীতি, উপন্যাস, প্রবন্ধ, রচনা সমগ্র, জীবনী, ছোট গল্প, কবিতা, ভাষাতত্ব, দেশি-বিদেশি জ্ঞান বিজ্ঞানসহ সাহিত্যের প্রায় সকল শাখার বই রয়েছে এই পাঠাগারে। পাঠকদের বসার জায়গা সংকোলান না হওয়ায় স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা গ্রন্থাগারের বারান্দায় বেঞ্চে বসে বই পড়তে বাধ্য হয়। এই গ্রন্থগারটি পরিচালনার জন্য ২১ সদস্য বিশিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী একটি কমিটি রয়েছে।

গোনা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ফাতেমা বানু ও শুভোন জানান আমরা সময় পেলে প্রতিদিন বিকাল বেলায় পাঠাগারে বই পড়তে আসি। আবার কখনো কখনো বাড়িতে পড়ার জন্য বই নিয়েও যাই। আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে লেখা বইগুলো পড়তে ভালো লাগে।

গোনা গ্রন্থাগার পরিচালনা কমিটির সভাপতি সবুজ খান জানান, প্রতিষ্ঠানটি শুরু করার পর থেকে নানা সমস্যা নিয়েই আমি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যদি সরকারি কোন সহযোগীতা পাই তাহলে এর পরিধি আরো বড় করে গড়ে তুলবো।

কমিটির উপদেষ্টা জহুরুল ইসলাম লুলু জানান, গ্রন্থাগারটি স্থাপন করার পর থেকেই এই গ্রামের বেশ কিছু মানুষ বই পুস্তক প্রদানসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগীতা করেছে।

গোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রোকসানা লিপি জানান, পাঠাগারটি ২ বছর ধরে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন। এতে করে সমাজ উপকৃত হচ্ছে, পাশাপাশি মানুষ জ্ঞান অর্জন করে ব্যক্তি জীবনে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। এলাকার যুব সমাজ মাদকসহ বিভিন্ন অন্যায় থেকে বিরত থাকছে। এভাবে জ্ঞানের আলো বিকশিত করার যে প্রচেষ্টা জাগরণ করে যাচ্ছে এটা প্রশংসার দাবি রাখে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যন আব্দুর রউফ জানান, এই গ্রন্থাগারটি স্থাপিত হবার পর অত্র এলাকার ছাত্র-ছাত্রী এবং বিশিষ্ট জনেরা অবসর সময়ে এখানে বসে বিভিন্ন ধরণের বই পড়েন। এই প্রতিষ্ঠানটি আরো বড় আকারে বিস্তার লাভ করার জন্য সরকারের যে সুযোগ সুবিধা রয়েছে তা প্রদানের চেষ্টা করবো।

 

 

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS