গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মাঠে নামছে প্রশাসন
অনলাইন ডেস্ক: খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন তদারক সংস্থা সারা দেশে ধান ও চালের অবৈধ মজুদ খুঁজে বের করতে ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে’ মাঠে নামবে।
মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামাল হোসেন জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, অবৈধ মজুদ প্রতিরোধে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এনএসআই, র্যাব ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকেও চিঠি দেয়া হবে।
মঙ্গলবার বিকেলেই ঢাকার বাবু বাজার এলাকায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি দল অভিযানে যাবে বলে জানান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, পুলিশি সহযোগিতা পাওয়া সাপেক্ষে বিকেলে দলটি মাঠে নামবে। পাশাপাশি ঢাকা কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চালের পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোতে যাবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তিনটি টিম।
খাদ্য অধিদপ্তরের পাঁচটি টিমও পাশাপাশি কাজ করবে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও অভিযান চলবে।
মজিবুর রহমান বলেন, বিপণন পর্যায়ে কোন দোকানে কতটুকু মজুদ রাখা যাবে সেটা আইনে বলা আছে। যদি অবৈধ মজুদ পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি জানান, ১৯৫৬ সালের অ্যাসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যাক্টে বলা আছে কোন পর্যায়ে কতটুকু মজুদ রাখা যাবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে এবং ২০২১ সালে দুটি আদেশ জারি করা হয়। সেই আলোকেই অভিযান চলবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, অভিযানের সার্বিক দিক দেখভাল করার জন্য মন্ত্রণালয়ে একটি কনট্রোল রুম চালু করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের তিনটি টিম ও খাদ্য অধিদপ্তরের পাঁচটি টিম মাঠে নামছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চলবে।
গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ধান-চালের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়; যেখান থেকে দেশের কোথাও অবৈধ মজুদ হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে তেলের (ভোজ্যতেল) বিপরীতে যেভাবে ড্রাইভ দেয়া হল, ওই রকম ড্রাইভ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
“যদি কেউ এভাবে (নিয়ম-নীতি ভেঙে) আনঅথরাইজড চালের ব্যবসা করে বা মজুদ করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আজকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।”
চলতি বোরো মওসুমে ধানের কাঙ্ক্ষিত ফলন হলেও বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও ধান চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলছে। বড় বড় মিল ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ভালো মুনাফার আশায় ধানের মজুদ শুরু করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
ব্যবসায়ীদের ‘মজুদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা’ চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, “অধিকাংশ মিল মালিক বাজার থেকে ধান কিনলেও উৎপাদনে যাচ্ছে না।”
প্রতিবছর বোরো মৌসুমের ধান বাজারে আসার পর চালের দাম কমতে শুরু করলেও এবার ঘটছে উল্টোটা। নতুন ধান বাজারে আসার পর থেকে চালের দামও বাড়তে শুরু করেছে বলে খুচরা বিক্রেতারা দাবি করছেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল থেকে দাম বাড়ানো হয়েছে।
আর মিল মালিকরা বলছেন, বাজারে নতুন ধান আসলেও দাম চড়া। গত বছরের তুলনায় প্রতিমণ ধানে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেশি গুণতে হচ্ছে।
রোববার দুই পক্ষের বক্তব্য সরাসরি নাকচ না করলেও খাদ্যমন্ত্রীর কথায় উঠে আসে বাজারে ‘অশুভ প্রতিযোগিতার’ কথা। তিনি মজুদদারির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের ওপর নজরদারি চালানোর জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
খাদ্যমন্ত্রী আরও জানান, প্রয়োজনে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে বিদেশে থেকে চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হবে।
ধান ও চালের অবৈধ মজুদ রোধে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। অবৈধ মজুদের বিষয়ে সেখানে তথ্য জানাতে +৮৮০২২২৩৩৮০২১১৩, ০১৭৯০৪৯৯৯৪২ এবং ০১৭১৩০০৩৫০৬ নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ করা হয়েছে।