ঢাকা | নভেম্বর ১৮, ২০২৪ - ৬:৪৫ অপরাহ্ন

কোরবানির পশু নিয়ে বিপাকে খামারিরা

  • আপডেট: Thursday, May 26, 2022 - 10:57 pm

মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গো-খাদ্যের দাম। লাগামহীনভাবে দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন কোরবানির পশু প্রস্তুতকারী খামারিরা। লোকসানের আশঙ্কায় এরই মধ্যে অনেক খামারি তাঁদের পালিত পশু বিক্রি করতে শুরু করেছেন। এতে কোরবানির হাটগুলোতে পশুর পর্যাপ্ত আমদানি নিয়েও একপ্রকার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

খামারিরা বলছেন, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সবধরণের গো-খাদ্যের দাম ব্যাপক হারে বেড়েছে। কোম্পানি ভেদে ৩৭ কেজি ওজনের এক বস্তা ভুষিতে বেড়েছে ৫৫০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া প্রতিকেজি গমের ময়দায় ২০ টাকা, ব্যান্ড প্রতিবস্তায় ৫০০ টাকা, খুদে ৪০০ টাকা বেড়েছে। প্রতিকেজি খৈলে বেড়েছে ১০ টাকা করে।

তাঁরা আরও বলেন, প্রতিবছর কোরবানির আগে প্রত্যেক প্রকারের গো-খাদ্যের দাম এমনিতেই বেড়ে যায়। কিন্তু এবারের চিত্র পুরোটাই উল্টো। দানাদার খাবারের দাম এখন আকাশ ছোঁয়া। একই সঙ্গে বেড়েছে খড়ের দাম। তাই কোরবানির পশুতে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে উপজেলায় ৪ হাজার ৩৩১ জন খামারি গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকরণ করছেন। এর মধ্যে ষাঁড় ৮ হাজার ৫২৩ টি, বলদ ৩হাজার ২৮১ টি, গাভী ৮ হাজার ২২১টি ও মহিষ ৬২ টি। এছাড়া ছাগল ৭ হাজার ২৬৫ টি ও ভেড়া রয়েছে ৬ হাজার ৫৭৪ টি। এবারের ঈদে এলাকায় গবাদিপশুর চাহিদা রয়েছে ৩২ হাজার ২৫৬ টি। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ১ হাজার ৬৭০ টি পশু দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হবে। গতবছরও একইভাবে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট পশু বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হয়েছিল।

নিজ কুলিহার গ্রামের খামারি আব্দুল খালেক বলেন, কোরবানিকে সামনে রেখে তাঁর খামারের তিনটি সেডে ৩২টি গরু প্রস্তুত করছিলেন। হঠাৎ করেই গো-খাদ্যের দাম বাড়তে থাকে। আগের তুলনায় ব্যয় বাড়তে থাকায় তিনি হিমসিম খাচ্ছিলেন। লোকসানের আশঙ্কায় নিজের জন্য একটি ষাঁড় রেখে সবগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন।

মৈনম গ্রামের খামারি রবিউল ইসলাম বলেন, তাঁর খামারে বর্তমানে ১০টি ও ৭টি ছাগল রয়েছে। কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য এগুলো পালন করা হচ্ছে। কিন্তু প্রাণিখাদ্যের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে ব্যয়ের সঙ্গে মিল রেখে পশুগুলো বিক্রি করতে পারবেন কিনা এনিয়ে তিনি যথেষ্ট সন্দিহান। তিনি আরও বলেন, বিগত বছরগুলোতে পশু লালন-পালনের পর ঈদে বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন।

ভোক্তা শাহজাহান আলী বলেন, প্রতিনিয়ত হুহু কওে বাড়ছে গো-খাদ্যের দাম। এতে কোরবানির হাটে নাগালের মধ্যে পশু কেনা যাবে কিনা এনিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে প্রাণিখাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দুধ উৎপাদন খামারিরাও বিপাকে পড়েছেন। দুগ্ধ খামারি মাসুদ রানা বলেন, প্রতিদিন তিনি ২০ লিটার দুধ পান। বাজার দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা লিটার দরে। খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিলিটার দুধ বিক্রি করতে হবে ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা দরে। তাহলে খরচ বাদে লাভের মুখ দেখতে পারবেন।

উপজেলার দেলুয়াবাড়ি বাজারের গো-খাদ্য বিক্রেতা মমিনুল ইসলাম মমিন বলেন, ‘গম, ভুট্টাসহ সবধরণের দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে শ্রমিকের মজুরি ও পরিবহন খরচ। সরবরাহ কমে যাওয়ায় মোকাম থেকেই সবধরণের গো-খাদ্য বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে আমরাও বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শায়লা শারমিন বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার ছোটবড় বিভিন্ন খামারে পশু হৃষ্টপুষ্টকরণ করছেন খামারিরা। এবারে পর্যাপ্ত পশু প্রস্তুত আছে।

তিনি আরও বলেন, দানাদার খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারিরা কিছুটা বেকাদায় পড়েছেন। তবে দানাদার খাবার কমিয়ে ঘাসের পরিমাণ বাড়ালে কিছুটা ব্যালান্স হবে বলেও উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।