ঢাকা | অক্টোবর ১, ২০২৪ - ২:২৭ পূর্বাহ্ন

পোরশা ও বদলগাছীতে কাল বৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

  • আপডেট: Saturday, May 21, 2022 - 11:12 pm

সোনালী ডেস্ক: নওগাঁর পোরশা-বদলগাছীসহ অন্যান্য উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শনিবার ভোর রাতে কালবৈশাখী ঝড় তান্ডব চালিয়েছে। এতে করে লন্ডভন্ড হয়েছে শত শত গ্রাম। ধান, আম, কলা, পেপে, ভুট্টা, পটলসহ বিভিন্ন ফসলের হয়েছে ব্যাপক ক্ষতি। ভেঙে গেছে টিনশেড ও আধাঁ পাকা ঘর। বিচ্ছিন্ন হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। উপড়ে পড়েছে বহু গাছপালা। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক ও এলাকাবাসী।

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁয় শুক্রবার দিবাগত ভোররাতে জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যায় কাল বৈশাখী ঝড়। এতে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, এতে জেলার প্রায় ৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমির কাঁচা আম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বিভিন্ন মৌসুমি ফল ও সবজির ক্ষেত। উড়ে গেছে শত শত ঘরের টিনের চালা। উপড়ে গেছে অনেক গাছ। গাছের ডাল পড়ে তার ছিঁড়ে অনেক স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

শনিবার জেলার সাপাহার, পোরশা ও পত্নীতলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাগানে-বাগানে মাটিতে পড়ে আছে ঝরে পড়া আম। কোনো কোনো বাগানে ঝরে পড়া আম কুড়িয়ে বাগানের এক জায়গায় স্তুপ করে রাখা হয়েছে। ঝরে পড়া এসব আমের অধিকাংশই ফেটে নষ্ট হয়েছে। কোনো কোনো বাগানে আমের গাছ উপড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়াও ঝড়ে পড়া আমের সিংহভাগই অপরিক্ক¡। ছোট ও মাঝারি সাইজের এসব অপরিপক্ক আম বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বস্তা দরে। অর্থাৎ এক বস্তায় প্রায় ৫০ কেজি আম। গ্রামের নারী-পুরুষ ও কিশোর-কিশোরীর কুড়ানো এসব আম পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে আড়তে নিচ্ছেন। পরে আড়ত থেকে ট্রাকযোগে এসব আম যাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে ৬০ ভাগেরও বেশি আম উৎপাদন হয় পোরশা ও সাপাহার উপজেলায়।

সকালে সাপাহার উপজেলার মানিকুড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঝড়ে আম কুড়ে এনে বাগানের একটি স্থানে স্তুপ করে রাখছেন আমচাষি আমিনুলসহ ছয়-সাত জন শ্রমিক। সাপাহার উপজেলার কলমুডাঙ্গা গ্রামের আম চাষি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘৮০ বিঘা জমি জুড়ে তাঁর দুটি বাগান রয়েছে। রাতের ঝড়ে তাঁর দুই বাগানে প্রায় ১০০ মণ আম ঝড়ে পড়েছে। বাগানের চার ভাগের এক ভাগ আমই ঝরে গেছে। ঝরে পড়া এসব আম বাজারে দুই টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অথচ পরিপক্ক অবস্থায় এসব আম বাজারে বিক্রি করলে কমপক্ষে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো।’

পোরশা উপজেলার নিতপুর এলাকার বাসিন্দা আম চাষি তোজাম্মেল হোসেন বলেন, তার ১২০ বিঘার বাগানে ৮০ শতাংশের বেশি আম্রপালি জাতের গাছ রয়েছে। আম্রপালি গাছ ছোট হওয়ায় এসব গাছে ঝড়ে আম ঝরেছে। তবে আশ্বিনা, নাক ফজলী ও ল্যাংড়া জাতের গাছগুলো বড় হওয়ায় এসব গাছের প্রায় ২০ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে।

নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া কার্যালয় সূত্র জানায়, শুক্রবার দিবাগত রাত ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত নওগাঁয় ঝড়-বৃষ্টি হয়। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার। বৃষ্টি হয়েছে ৪৩ মিলিমিটার।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, শুক্রবার রাতে জেলার ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। এতে জেলায় ৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমির কাঁচা আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর, মান্দা ও ধামইরহাট। পত্নীতলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ২ হাজার ২৫০ হেক্টর, সাপাহারে ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর, পোরশা ১ হাজার ৫০ হেক্টর, ধামইরহাটে ৪৭৫ হেক্টর ও নিয়ামতপুরে ৪৮০ হেক্টর জমির কাঁচা আম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফজলী, ল্যাংড়া, নাক ফজলী, গোপালভোগ জাতের গাছগুলো বড় হওয়ায় এসব গাছের আম বেশি ঝরে পড়েছে। তিনি আরোও বলেন, এছাড়াও ৫০ হেক্টর জমির কলা ও ৫০ হেক্টর জমির বিভিন্ন শাক-সবজি ক্ষতি হয়েছে। অন্যান্য ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে কৃষি বিভাগের লোকজন মাঠে গিয়ে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে কাজ করছেন।

উল্লেখ্য, জেলায় এ বছর ২৯ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। ৬ হাজার ৮০০ আম চাষির প্রায় সাড়ে ৯ হাজার বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১২ দশমিক ৫ মেট্রিক টন। সে হিসেবে এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৮৪৫ মেট্রিক টন।

পোরশা
পোরশা (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে নওগাঁর পোরশায় আম, ধান, গাছ, বিদ্যুৎ সহ বিভিন্ন গ্রামে বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে শুরু হয় কাল বৈশাখী। প্রায় পৌনে এক ঘন্টা ঝড়-বৃষ্টির কারনে উড়ে গেছে ঘরের টিনের চালা, উপড়ে গেছে বিভিন্ন ধরনের গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি। গাছের ডাল পড়ে বিদ্যুৎ এর খুঁটি ভেঙে ও তার ছিঁড়ে অনেক স্থানে বিদুুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আম ও ধানের। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায় গাছপালা ভেঙে পড়ে আছে। শত শত হেক্টর জমির আম ও ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। নিতপুর সুহাতি গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান মাস্টার বলেন, তার ধান ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেশির ভাগ ধান তলিয়ে গেছে। তার প্রায় লক্ষাধীক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান। ঘাটনগর ইউনিয়নের বাঙ্গাবাড়ি গ্রামের আম বাগানের মালিক মোখলেছুর রহমান বলেন, বাগানের প্রায় সব আম ঝরে গেছে। আর সপ্তাহ খানেক পরে তিনি গাছ থেকে আম নামাতেন। কিন্তু ঝড়ের কারনে তার ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেল বলে তিনি জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সরকার জানান, ঝড়ে আম ও ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে শতকরা ৫ থেকে ১০ ভাগ আম ঝরে গেছে বলে তিনি জানান। আর আগে থেকেই ১০ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। আরও কিছু ক্ষতি হতে পারে বলে তিনি জানান। তবে তাৎক্ষণিক ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা যায়নি। তিনি নিজে কর্মকর্তাদের নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরছেন এবং ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে কাজ করছেন বলে জানান।

বদলগাছী
বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, বদলগাছী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শনিবার ভোর রাতে কালবৈশাখী ঝড় তান্ডব চালিয়েছে। এতেকরে লন্ডভন্ড হয়েছে শত শত গ্রাম। ধান, আম, ভুট্টা, পটলসহ বিভিন্ন ফসলের হয়েছে ব্যাপক ক্ষতি। ভেঙে গেছে টিনশেড ও আধাঁ পাকা ঘর। বিচ্ছিন্ন হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। উপড়ে পড়েছে বহু গাছপালা । দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক ও এলাকাবাসী।

জানা যায়, শনিবার রাত ২টায় হঠাৎ ঝড় ও বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির পরিমাণ কম হলেও বাতাসের বেগ ছিলো অনেক বেশি । বৃষ্টি ও ঝড়ের সাথে ভারী বজ্রপাতও হয়েছে। অনেক মানুষের থাকার একমাত্র স্থাপনার সবকিছু বাতাসে উড়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে কাঁচা-পাকা ঘর। উড়ে গেছে ঘরের চালা। উপড়ে পড়েছে হাজার হাজার গাছ। রাস্তায় উপর গাছ ভেঙ্গে পড়ায় যান চলাচল ব্যহত হচ্ছে। বিকল হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। ঝড়ে ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে, গাছের ডাল পড়ে, প্রাচীরের ইট পড়ে বিভিন্নভাবে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন অনেকেই। শনিবার ভোরের কাল বৈশাখীর ঝড় ও বৃষ্টি বদলগাছী উপজেলার উপর ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে। কোলা, মথরাপুর, আধাইপুর, বদলগাছীসদর, পাহাড়পুর, বিলাসবাড়ী, মিঠাপুর ও বালুভরা ইউপির ধান, আম, ভূট্রা, পটল, কলা, লাউয়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শতশত গাছ ভেঙ্গে রাস্তার উপর গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে বিভিন্ন রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। যা সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে এলাকার লোকজন।

বদলগাছীর চকালম গ্রামের মজিদ বলেন, শনিবার ভোরে কালবৈশাখীর আঘাতে রাস্তায় ভেঙ্গে পড়ে রয়েছে শতশত গাছ। জাবারি পুর গ্রামের বিপুল বলেন, ঝড়ে আমগাছ উপরে পড়েছে, বৈদ্যুতিক লাইনর পোল পড়ে গেছে, কোথাও তার ছিড়ে ঝুলে আছে। লাগাতার বৃষ্টি হওয়ায় পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বাড়ীর পাশে থাকা গাছগুলো ভেঙ্গে পড়েছে বাড়ীর উপর। কোথাও কোথাও ঘরবাড়ির ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি উড়ে গেছে অনেক স্থাপনা। বিচ্ছিন্ন হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।

বদলগাছী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানিয়েছেন, ঝড়ো হাওয়ায় বদলগাছী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের অনেক খুটি হেলে পড়েছে। বিদ্যুতের লাইনের উপর গাছপালা পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় তার ছিড়ে গেছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে শনিবার ভোর থেকে কাজ চলছে। খুব দ্রুতই পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে।

কোলা ইউপি চেয়ারম্যান শাহিনুর ইনলাম স্বপন বলেন, ঝড়ে কোলা ইউপিসহ বদলগাছী উপজেলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় ভাবে ক্ষতি গ্রস্থদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যা দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হবে।