ঢাকা | জুলাই ২৬, ২০২৪ - ৭:৫০ পূর্বাহ্ন

পবায় আম বাগান কেটে চলছে পুকুর খনন

  • আপডেট: Friday, May 20, 2022 - 10:56 pm

স্টাফ রিপোর্টার: পবায় বেশি লাভের আশায় আমের বাগান কেটে ভিটা জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। ভূমি আইন উপেক্ষা করে অবাধে চলছে এই খননকাজ। রাত দিন সমানে পুকুর খনন করায় কমে যাচ্ছে বাগানসহ তিন ফসলী জমির পরিমাণ।

পাশাপাশি মাটির চাহিদা মেটাতে সারা রাতে মাটি কেটে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে টপ সয়েল। বিক্রি করা মাটি পরিবহণের ভারি ডামট্রাক ও ট্রাক্টরের চলাচলে নষ্ট হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার গ্রামীণ পাকা রাস্তা। গত কয়েকদিন আগে এই মাটির ট্রাক্টরের কারণে নওহাটায় সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন মারা যায়। যার মধ্যে একই পরিবারের শিশুসহ স্বামী-স্ত্রী ছিলেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পবা উপজেলার বড়গাছি উত্তরপাড়ায় আলহাজ্ব মকবুল হোসেনের আমবাগান এর মাটি লীজ নিয়ে হচ্ছে পুকুরখনন। ওই এলাকায় অতিতে যারা পুকুরখনন করে তারাই কাটছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই কমবেশী হারে পুকুর খননের মহোৎসব চলছে। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে।

রাজশাহীতে পুকুর খননের কারণে আবাদি জমি কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খননের জন্য ধানের যে জমি কমেছে এরচেয়ে বেশী ক্ষতি হচ্ছে আবাদে। জলাবদ্ধতার কারণে এক তৃতীয়াংশ জমি অনাবাদি হয়ে পরিত্যাক্ত জমিতে পরিণত হচ্ছে। গত ১০ বছরে বোরো ধানের জমি কমতে কমতে অর্ধেকে নেমে এসেছে। পবা উপজেলার মত রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলেও শুরু হয়েছে পুকুরখনন। এক সময় এই এলাকা বোরো ধানের জন্য বিখ্যাত হলেও, এখন সেই খ্যাতি আর নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী বলেন, এখানে পুকুরখনন হলে বর্ষার পানি বেরুতে পারবে না। একটু বৃষ্টি হলেই এলাকা ডুবে যাবে। বড়গাছি উত্তরপাড়ার বৃদ্ধা সাহেরা বেগম। তিনি কাটা গাছের ঝরা পাতা কুড়াতে কুড়াতে জানান, এখানে ৫০-৬০টি আমগাছ ছিল। একে একে সব গাছ কাটা হচ্ছে। পুলিশ আসলে কাজ বন্ধ থাকে। চলে গেলে রাত-দিন চলতে থাকে পুকুর কাটা।

আমবাগান, তিন ফসলি ও ধানের জমিতে পুকুর খনন বন্ধ করতে পারছেনা প্রশাসন। বর্তমানে রাজশাহীর খালে বিলে যেদিকে চোখ যায় শুধু দেখা মেলে পুকুর আর পুকুর। এখন বোরো জমি বাদেও তিন ফসলি ও বিভিন্ন ফলদ বাগান ধ্বংস করে তা পুকুরে পরিণত করা হচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। গত দশ বছর ধরে এই এলাকায় চলছে পুকুর খননের হিড়িক।

এই পুকুর খননের বিষয়ে জেলা প্রশাসন দুষছেন উপজেলা প্রশাসনকে, আবার উপজেলা প্রশাসন দুষছেন জেলা প্রশাসনকে। জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে সব ধরনের পুকুর খননের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞাজারী রয়েছে। তারপরও উপজেলা প্রশাসনের মদদে ও উদাসিনতার কারণে বারবার একই ব্যক্তিরা ফসলী ও বোরোর জমিতে পুকুর খনন করে চলেছে।

এ ক্ষেত্রে আবার উপজেলা প্রশাসন, বলছেন থানার সহযোগিতায় পুকুর খনন করা হয়। আর পুকুর খননকারীরা বলছেন, পুকুর খনন করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও থানা শেষে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করতে হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জনকল্যাণে পুকুর খনন নয়, মাটি বিক্রির জন্যই সর্বত্র চলছে এই পুকুর খননের হিড়িক।