রুয়েটের নিয়োগের অনিয়ম তদন্তে ইউজিসির কমিটি

অনলাইন ডেস্ক: রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে (রুয়েট) নিয়োগে ভয়াবহ অনিয়ম এবং চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে উপাচার্যের (ভিসি) রফিকুল ইসলাম সেখের স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় ইউজিসিকে নির্দেশ দিলে এই কমিটি করা হয়। এ ছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ, ঘুষ বাণিজ্য ও টেন্ডারে অনিয়ম খতিয়ে দেখতে আরও দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ইউজিসি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর আগে রুয়েটের বিভিন্ন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। সেখানে বলা হয়, রুয়েটের উপাচার্য রফিকুল ইসলাম সেখ স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে শ্যালক, দুই ভাই, স্ত্রীর ফুফাতো ভাই, চাচাতো বোন, গৃহকর্মী ও তার স্বামীসহ স্বজনদের কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২তম সিন্ডিকেট সভায় এসব নিয়োগ অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু ওই সভার কোনো রেজল্যুশন করা হয়নি। নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ছাড়াও উপাচার্যের বিরুদ্ধে নীতিমালার বাইরে নিয়োগ দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ একজন চাকরিপ্রত্যাশী আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, উপাচার্যের স্ত্রীর ফুফাতো ভাই মেহেদী হাসানকে ‘কেয়ারটেকার’ পদে, চাচাতো বোন মাছুমা খাতুনকে ‘ডেটা এন্ট্রি অপারেটর’ পদে, কাজের মেয়ে লাভলী আরার স্বামী এনামুল হককে ‘উপাচার্যের গাড়িচালক’ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। জুনিয়র সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়া উপাচার্যের ভাই লেবারুল আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন।
রুয়েট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে তিনটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রুয়েটে বিভিন্ন পদে ১৩৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই নিয়োগে বিজ্ঞপ্তিতে পদের চেয়ে বেশি জনবল নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ৪ মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২তম সিন্ডিকেট সভায় ওই নিয়োগ অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু এখনও নিয়োগের রেজল্যুশন করা হয়নি।
এদিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ‘উপসহকারী প্রকৌশলী’ পদের যোগ্যতা হিসেবে অনুমোদিত কারিগরি শিক্ষা বোর্ড বা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকৌশলে ডিপ্লোমা ডিগ্রি চাওয়া হয়। কিন্তু সেই পদে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে রুয়েট শাখার ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতি গত ২২ জানুয়ারি এবং ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রুয়েট উপাচার্যকে লিখিত আপত্তি জানানো হয়। এ ছাড়া রায়হান ইসলাম নামের সংক্ষুব্ধ একজন চাকরিপ্রার্থী হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছেন।
চলতি বছরের জুলাইয়ে রুয়েট উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই পরবর্তী চার বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন উপাচার্য রফিকুল ইসলাম সেখ। অবসরে যাওয়ার আগে অবশেষে তদন্তের মুখে পড়লেন সমালোচিত এ ভিসি।
তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, রুয়েটসহ তিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে উঠা অনিয়ম খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুলনা ও রুয়েটের অনিয়ম তদন্ত করে দুদকে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে। বাকি একটির তদন্ত কাজ ইউজিসি নিউ উদ্যোগে শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, তদন্ত কাজ দ্রুত শেষ করতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন পাঠালে তা মূল্যায়ন করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।