ঢাকা | ডিসেম্বর ২১, ২০২৪ - ১০:০৯ অপরাহ্ন

উজানের পানিতে তিন হাজার বিঘা জমির ধান নিমজ্জিত

  • আপডেট: Thursday, May 19, 2022 - 11:38 pm

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যুরো: চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের ভারত সীমান্তের কুজাইন বিলে উজান থেকে হঠাৎ করে ধেয়ে আসা ঢলে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বিঘা জমির ইরি-বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ধান কাটার এই ভরা মৌসুমে ঢলের পানিতে ধান তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রায় দেড় হাজার কৃষক। আর এতে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষকদের এই ক্ষয়ক্ষতি সরেজমিনে দেখতে ছুটে যান জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কৃষি অফিসারসহ জনপ্রতিনিধিরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গত ৪ দিন ধরে ভারত থেকে উজানের পানি কুজাইন বিলে ঢোকা শুরু হয়। আর এই পানি টাঙ্গন নদী হয়ে বাংলাদেশের পূর্ণভবা নদী হয়ে তীব্রগতিতে কুজাইন বিলে প্রবেশ করে। স্থানীয়রা পানি রোধে অস্থায়ী বাঁধ দিলে সে বাঁধ সোমবার রাতে ভেঙ্গে গেলে বিস্তীর্ণ বিলের ধানি জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। হঠাৎ ধানি জমি তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহার হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া ধান নষ্ট হওয়ার আগে তা কেটে নিতে জমিতে নেমে পড়েছেন শত শত কৃষক।

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক সেলিম রেজা জানিয়েছেন, পানি যেভাবে ঢুকছে তাতে অনেক ধান কেটে তোলা যাবেনা। প্রায় ধান নষ্ট হয়ে যাবে। এদিকে, সংলগ্ন পুনর্ভবা নদীর উপর কাঠের সেতু ডুবে যাওয়ায় কেটে নেয়া ধান ঘরে তুলতে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে কৃষকরা।

রাধানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, অর্ধেকের বেশি জমির ধান কাটা শেষ হয়ে গেছিল। বাকি জমির ধান কাটা চলছিল। হঠাৎ করেই শনিবার থেকে পূর্নভবা নদীর পানি বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে পানি পূনর্ভবার শাখা নদী জামদাড়া নালায় ঢোকে। জামদাড়া উপচে পানি কুজাইন বিলে ঢুকে পড়ে। এতে কেটে রাখা ধানগুলো ভেসে গেছে। তবে, কার কার ধান গেছে সেটা এখন বোঝার কোনো সুযোগ নেই।

ইসলামপুরগঞ্জের আমজাদ আলী জানান, তিনি অন্য মানুষের ১৬ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেন। কিন্তু তার কাটা ধান মাঠে শুকাতে দেয়াছিল এবং হঠাৎ পানিতে সব ধান ভেসে যায়। এখন মালিককে কিভাবে ধান পৌছাবে এই চিন্তায় সে বিকারগ্রস্থ।

আক্কেলপুরের গোলাম মোস্তফা জানান, তার নিজেরই ২২ বিঘা জমির ধান ভেসে গেছে। মাড়াই করার জন্য ধান কেটে জমিতে রেখেছিলেন। তার মতো দেড় থেকে দুই হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বিল কুজাইন, রোকনপুরগঞ্জ, ইসলামপুরগঞ্জ, ভাটখোল চেরাডাঙ্গা মৌজার কৃষকরা। আর এই সংকটের সময় শ্রমিকদের মজুরী তিনগুণ বেড়ে ১২’শ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে না।

অন্যদিকে পূর্ণভবা নদীর ওপর কাঠের সেতু পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা করে বিলের ওপারের রণসদা বড়, চানসদা ও ভাটসিংড়া মৌজার ধান আনার জন্য এখন চরম নৌকার সংকট রয়েছে। আর এই দূর্ভোগের সময় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মিলেনি সহযোগিতা। তাই অনেকেই তাদের অসহযোগিতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মফিজুল ইসলাম জানান, ২০১৭ সাল থেকে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে এই বিলের ধান প্রতিবছরই ক্ষতি হয়ে আসছে। তারা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়ে বারবার সহযোগিতা চাইলেও নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা।

সাবেক মেম্বার ইউসুফ আলী জানান এই বিলের মুখে পূর্ণভবা নদীর ওপর একটি ব্রীজ, একটি স্লইজ গেট এবং রাস্তা বরাবর একটি বেড়ী বাঁধ নির্মাণ না করায় ২০১৭ সাল থেকে এই অঞ্চলের কয়েকটি মৌজার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আসছে।

গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভির আহম্মেদ সরকার জানিয়েছেন, গোমস্তাপুর উপজেলায় ১৫ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে এই রাধানগর ইউনিয়নেই ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ইরিবোরো ধান আবাদ হয়। আর কুজাইন বিলের উর্বর পলি মাটিতে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার বিঘায় ধানের আবাদ হয়। আর উচ্চজাতের আবাদ হওয়ায় বিঘাপ্রতি কৃষকরা ৪০ মন ধান উৎপাদন করে থাকে। কয়েকদিনের উজানের পানিতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বিঘা ধান তলিয়ে গেছে। আর প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকার ধানি জমিতে পানি ঢুকছে। ডুবে যাওয়া ধানে চারা গজিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় দেড় হাজার পরিবার। তিনি আরো জানান, ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরী পূর্ণবার্সনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন।

গোমস্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ হুমায়ন রেজা জানান, এই বিলে পানি নিস্কাষনের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছরই কৃষকরা কমবেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আসছে। ইতিমধ্যে পূর্ণভবা নদীর তলদেশ খনন প্রকল্প অনুমোদনের মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ আসমা খাতুন জানান, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা প্রণয়ন শেষে পূর্ণবার্সনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আর ফসল রক্ষার্থে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন এই কর্মকর্তা।

জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান সরেজমিনে বিল এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের পাশে বরাবর সরকার থাকে এবং সবধরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর আগামীতে ফসল রক্ষার্থে সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা গ্রহন করে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।