রাজশাহীর সড়কে ঝরলো পাঁচ প্রাণ
![](https://sonalisangbad.com/wp-content/uploads/2022/05/e63f67b4-f35f-4714-ba1b-b27506d5af48.jpg)
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রোববার সকালে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে পবা উপজেলার নওহাটা মধুসুদনপুর এলাকায় দুই মোটরসাইকেল ও এক ট্রাক্টরের ত্রিমুখী সংঘর্ষে মোট চারজন নিহত হয়েছেন। আর আগের দিন রাতে রাজশাহীর মোহনগঞ্জ-খড়খড়ি সড়কে পবার রামচন্দ্রপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আরেকজন মারা যান।
রোববার চারজন হলেন- আক্তার হোসেন বাবু (৩৫), তাঁর স্ত্রী বিথি খাতুন (৩৩) এবং ছোট মেয়ে মরিয়ম জান্নাত (৪) এবং আবদুল মান্নান (৪৮)। মান্নান নওগাঁর মান্দা উপজেলা যুবদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। পেশায় ব্যবসায়ী মান্নানের বাড়ি মান্দার ছোট বিড়ালদহ গ্রামে। আর নিহত আক্তারের বাড়ি নিয়ামতপুর উপজেলার চণ্ডিপুর গ্রামে। তিনি দলিল লেখক ছিলেন।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনেরা জানান, কিছু দিন ধরে পেটের পীড়ায় ভুগছিলেন বিথি খাতুন। তাই স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে মোটরসাইকেলে নিয়ে রাজশাহী শহরে চিকিৎসকের কাছে আসছিলেন আক্তার। মান্নান থাকতেন রাজশাহী শহরেই। তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলেন গ্রামে। নওহাটা মধুসুদনপুর এলাকায় তাদের দুজনের মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে তারা ছিটকে পড়েন। তখন ট্রাক্টর এসে তাদের চাপা দেয়।
দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মান্নান ও শিশু মরিয়ম নিহত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আক্তার ও তার স্ত্রী বিথিকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় বিথিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। গুরুতর আহত আক্তারের চিকিৎসা চলছিল। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তিনিও মারা যান।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ছেলে, ছেলের বউ আর নাতনিকে হারিয়ে মুর্ছা যাচ্ছেন আক্তারের মা জাকিয়া সুলতানা। শোকে পাথর হয়ে নির্বাক বসে ছিল আক্তারের মেয়ে নুসরাত জাহান। আক্তারের বড় ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন আক্তার। তার পরিবারে মেয়ে নুসরাত ছাড়া কেউ রইল না।
পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন জানান, দুর্ঘটনার পর চালক তার ট্রাক্টর ফেলে পালিয়েছেন। ট্রাক্টরটি জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনাকবলিত মোটরসাইকেল দুটিও থানায় নেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল থেকে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা করা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে আগের দিন রাতে পবার রামচন্দ্রপুরে নিহত ব্যক্তির নাম আলমগীর হোসেন (২৬)। স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। রোববার সকালে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নিহত আলমগীর হোসেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের সগুনা গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে। তিনি রাজশাহী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন।
পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানায়, শনিবার সকালে আলমগীর হোসেন বাড়ি থেকে রাজশাহী কলেজে যান। স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দিয়ে সন্ধ্যার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বাড়িতে ফিরছিলেন। সন্ধ্যার দিকে মোহনগঞ্জ-খড়খড়ি সড়কের সারাংপুর মোড়ে পৌঁছালে অটোরিকশার চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।
এতে অটোরিকশার সামনে বসা আলমগীর হোসেন ছিটকে সড়কে পড়ে যান। এ সময় একই দিক থেকে আসা একটি পিকআপ ভ্যান তাঁর শরীরের ওপর দিয়ে চলে গেলে ঘটনাস্থলেই তিনি প্রাণ হারান। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। সুরতহাল শেষে রাতে নিহত কলেজছাত্রের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রোববার সকালে জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।