ঢাকা | জুলাই ২৭, ২০২৪ - ১০:০৫ পূর্বাহ্ন

বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি করছে ফারাক্কা

  • আপডেট: Sunday, May 15, 2022 - 7:34 pm

স্টাফ রিপোর্টার: গঙ্গা নদীর বুকে দেওয়া ভারতের ফারাক্কা বাঁধের কারণে ভাটিতে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের প্রায় ২ কোটি মানুষ সেচের পানির অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দক্ষিণাঞ্চলের আরও প্রায় ৪ কোটি মানুষ ও এক-তৃতীয়াংশ এলাকা সেচের পানির অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ এলাকাতেও সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আরও নানামুখী ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের। আর্থিক হিসাবে বছরে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।

সোমবার (১৬ মে) ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ দিবস উপলক্ষে রাজশাহীতে ৪৬তম ফারাক্কা লং মার্চ দিবস উদযাপন কমিটি রোববার (১৫ মে) সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছে। নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য কমিটির আহ্বায়ক ও নদীগবেষক মাহবুব সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, পদ্মার উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ১৯৭৬ সালের ১৬ মে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে মরণ বাঁধ ফারাক্কা অভিমুখে লাখো জনতার লংমার্চ অনুষ্ঠিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক চাপে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি করে। কিন্তু পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক সব আইন লঙ্ঘন করে ভারত একাই গঙ্গার পানি নিচ্ছে। এতে ভাটির দেশ বাংলাদেশের বিস্তির্ণ এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে।

তিনি জানান, ফাঁরাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের মাটির উর্বরা শক্তি কমে গেছে। দেশের প্রায় ২১ শতাংশ অগভীর নলকূপ ও ৪২ শতাংশ গভীর নলকূপ ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। গঙ্গার পানি চুক্তির পর বাংলাদেশে গঙ্গার পানির অংশ দাঁড়িয়েছে সেকেন্ডে ২০ হাজার ঘনফুটের কম। অথচ ফারাক্কা বাঁধ চালুর আগে শুষ্ক মৌসুমেও বাংলাদেশ ৭০ হাজার কিউসেকের চেয়ে বেশি পানি পেত। এখন ফারাক্কা বাঁধের কারণে দেশের প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। আর্সেনিকের বিষাক্ত প্রভাবে পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জেলায় টিউবওয়েলের পানি খাবার আযোগ্য হয়ে পড়েছে। বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় প্রচলিত ধান উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। নদীতে মাছ নেই। হাজার হাজার জেলে বেকার। লবণাক্ততার কারণে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের প্রায় ১৭ ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে।

মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, বিশেষজ্ঞদের সমীক্ষায় দেখা গেছে- ১৯৭৫ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত গঙ্গার পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশের সার্বিক ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তখন থেকে আজ অবধি প্রতিবছর প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। আবার ফারাক্কার কারণে ভারতের বিহারে প্রতিবছর বন্যা হচ্ছে। সে দেশের মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে ফেলা দরকার। ভারতেও এ দাবি উঠেছে। তবে ফারাক্কা বাঁধের কারণে ভারতের ধূসর এলাকা সবুজে পরিণত হয়েছে বলে তা করা হচ্ছে না। এর ফলে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তির্ণ এলাকা মরুভূমি হচ্ছে। এই অবস্থার জন্য যারা দায়ী তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় এবং গঙ্গার পানির নায্য হিস্যা আদায়ে সরকারসহ সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান মাহবুব সিদ্দিকী।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ফারাক্কা লং মার্চ দিবস উপলক্ষে সোমবার বিকালে রাজশাহী নগরীর পাঠানপাড়ায় লালন শাহ মুক্তমঞ্চে একটি জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের রাজশাহীর সভাপতি এনামুল হক, সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন পিয়ারা, রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ তৌফিক জাহেদী, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহীর সাবেক সভাপতি ডা. ওয়াসিম হোসেন, বাসদের রাজশাহীর সদস্য শামসুল আবেদীন ডন, ব্যবসায়ী নেতা ফরিদ মামুদ হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।