ইউএনওর গাড়ির ধাক্কায় সাংবাদিক নিহতের সিসিটিভি ফুটেজ ভাইরাল
নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের সিংড়ায় সাংবাদিক ও শিক্ষক সোহেল আহমেদ জীবন সোমবার (৯ মে) তার কর্মস্থল শেরকোল আগপাড়া বন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ে যাওয়া পথে সকাল ১০টা ২৩ মিনিটে সড়ক দুর্ঘনায় নিহত হওয়ার একটি সিসি টিভির ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এখন পর্যন্ত নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা না হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ভাইরাল হওয়া ফুটেজে দেখা যায়, নিহত সাংবাদিক মোটর সাইকেল নিয়ে নাটোর মহাসড়কের সিংড়া উপজেলার নিংগইন পেট্রোল পাম্পে ঢোকার সময় বীপরিতগামী একটি পাজেরো কালো জিপ গাড়ি দ্রুত গতিতে এসে তাকে ধাক্কা দেয়।
এতে সাংবাদিক সোহেল আহমেদ প্রায় দেড়শ ফিট দূরে ছিটকে পড়েন। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেলে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। অপরদিকে জিপ গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডান পাশে সিংড়া পৌরসভার সীমানা প্রাচীরে গিয়ে লাগে। এসময় ফুটেজে পাজেরো গাড়ি থেকে ড্রাইভার ছাড়াও একজন নারী ও অন্য একজন পুরুষকে দ্রুত নেমে স্থান ত্যাগ করতে দেখা যায়।
পরে গাড়িটি শনাক্ত হয় পার্শ্ববর্তী নলডাঙা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুখময় সরকারের সরকারি গাড়ি। গাড়িতে ইউএনও না থাকলেও সরকারি গাড়ি এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় কেন? আর গাড়িতে কে ছিলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে নলডাঙার ইউএনও সুখময় সরকার বলেন, নলডাঙায় তেল সংকট থাকায় গাড়িটি তিনি সিংড়ায় তেল নিতে পাঠিয়েছিলেন। আর গাড়িতে শুধু ড্রাইভার ছিলেন। অথচ একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা ও ফুটেজে সেই দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি থেকে একজন নারী ও পুরুষকে নেমে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে দেখা গেলেও দৃষ্টি অন্য খাতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, নলডাঙার ইউএনও সুখময় সরকারের স্ত্রী মানসী দত্ত মৌমিতা সিংড়ার গোল-ই-আফরোজ সরকারি অনার্স কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক। আর স্বামীর সরকারি গাড়ি নিয়ে তিনি নিয়মিত সিংড়ায় তার কর্মস্থল কলেজে আসা-যাওয়া করতে বলে জানা যায়।
এবিষয়ে গোল-ই-আফরোজ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী উম্মে আমারা ইসলাম সূখী বলেন, কলেজের বাংলা বিভাগের মানসী দত্ত মৌমিতা ম্যাডাম নিয়মিত ইউএনওর সরকারি গাড়ি নিয়ে কলেজে আসেন আবার মাঝে মধ্যে এসিল্যান্ড স্যারের গাড়িতে করে চলে যান। গত মার্চ মাস থেকে যদি কলেজের সিসি টিভি ফুটেজ চেক করা হয় তাহলে ম্যাডাম এই গাড়ি ব্যবহার করেন তা দেখা যাবে।
আর কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি দীপ্ত ঘোষ বলেন, মানসী দত্ত মৌমিতা ম্যাডামকে একটি কালো গাড়ি কলেজে নামিয়ে দিয়ে যায় এটা সকল শিক্ষার্থী জানেন।
শিক্ষার্থী আব্দুল হাই, সজিব ইসলাম, শ্রী স্বপন সহ অনেকে এই প্রতিবেদকের ক্যামেরায় গাড়ির ছবি দেখে বলেন, এই গাড়িটি তাদের কলেজের মানসী দত্ত মৌমিতা ম্যাডামের। গাড়িটি ম্যাডামকে নামিয়ে দিয়ে কলেজ চত্বরের বিজ্ঞান বিভাগ ও হোস্টেলের পাশে প্রায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন তারা।
এছাড়াও সিংড়া বাসস্ট্যান্ড হতে কলেজ গেট পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সিসি টিভি ফুটেজ চেক করে দেখা যায় সরকারি এই গাড়িটি মাঝে মধ্যেই কলেজে যাতায়াত করত।
তবে গোল-ই-আফরোজ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন কলেজের ভেতরের সিসি টিভি ফুটেজ দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, কলেজে বিভিন্ন জন গাড়ি নিয়ে আসেন। কোনটা ইউএনও বা সরকারি গাড়ি তার জানা নেই।
নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. শামীম আহমেদ দুর্ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক উল্লেখ করে বলেন, দুর্ঘটনার বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।