ঢাকা | মে ৯, ২০২৪ - ১:৪১ অপরাহ্ন

বোরোচাষে বর্গাচাষিদের উৎপাদন খরচ উঠছে না

  • আপডেট: Saturday, May 7, 2022 - 10:18 pm

 

রেজাউল ইসলাম সেলিম, নিয়ামতপুর (নওগাঁ) থেকে: ‘এক বিঘা জমিতে চাষ, রাসায়নিক সার ও সেচ সব মিলিয়ে খরচ প্রায় সাত হাজার টাকা। ধান মাড়াইয়ে ৫ হাজার। গেল ১২ হাজার। এখন জমির মালিককে দিতে হবে পাঁচ মণ ধান। ফলন হচ্ছে বিঘায় ১৬ থেকে ১৭ মন, যার বর্তমান বাজার মূল্য ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা। এখন আপনি বলেন, আমরা যারা বর্গাচাষি তাদের থাকবে কি?’ নিয়ামতপুর উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের দামপুরা গ্রামের বর্গচাষি জুলফিকার আলী সেন্টুর এমন প্রশ্ন।

এবার চলতি বোরো মৌসুমে ঠিক ধান ঘরের তোলার প্রাক্কালে বৈরী আবহাওয়ার কারণে বর্গাচাষির কপাল পুড়েছে। দফায় দফায় দমকা হাওয়া, কালবৈশাখীর হানা ও ঝড়-বৃষ্টিতে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নিয়ামতপুরের নিচু এলাকায় মাঠে বৃষ্টির পানি জমে খেতেই পড়ে রয়েছে ধান। এ ধান কাটতে পাওয়া যাচ্ছে না কৃষি শ্রমিক। অনেকেই বাধ্য হয়ে উচ্চ পারিশ্রমিক দিয়ে এ ধান ঘরে তুলছেন। এতে উৎপাদন খরচ উঠছে না বর্গাচাষির।

অথচ প্রাকৃতিক দূর্যোগে নিয়ামতপুরের কিছু কিছু এলাকায় বর্গাচাষির এমন কপাল পুড়লেও ক্ষতি নিরূপণে সরকারি ভাবে নেয়া হয়নি কোন উদ্যোগ, এমন অভিযোগ বর্গাচাষিদের। ফলে সোনার ফসল ফলিয়েও চোখে সরষে ফুল দেখছেন এখন অনেক বর্গাচাষি।

নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এবার চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও কোনো ধরনের বালাই না থাকায় ধানগাছও হয়েছিলো ভাল। বাম্পার ফলনের সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছিল চাষি মনে। কিন্তু ঈদের আগে থেকে দফায় দফায় দমকা হাওয়া, কালবৈশাখীর হানা ও শিলা-বৃষ্টিতে ধানগাছ জমিতে নুয়ে পড়ায় অশনি সংকেত দেখা দেয় চাষি মনে। বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায় বোরো ধানের শীষ। এতে ফলন বিপর্যয়সহ ওই ধান কাটতে অনিহা কৃষি শ্রমিকের। ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মাঠের ধান ঘরে তুলে ঋণ মহাজন মিটিয়ে সর্বস্ব শেষ বর্গাচাষির।

সরেজমিনে শনিবার উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষক। কিন্তু যেসকল নীচু জমিতে বৃষ্টির জমে থাকা পানিতে ধানগাছ নুয়ে পড়ে রয়েছে এখনও, সেখানে নেই কোন শ্রমিক। জানা গেল, এই ধান কাটতে কৃষি শ্রমিকের পরিশ্রম অনুযায়ী পারিশ্রমিক আসবেনা তাই অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাটছেন ধান।

রসুলপুর ইউনিয়নের দামপুরা মাঠে দেখা গেল, এমন বৃষ্টির পানি জমে থাকা জমিতে কিছু শ্রকিককে ধান কাটতে। আলাপচারিতায় মফিজুল নামের এক কৃষি শ্রমিক জানায়, দৈনিক সাতশ টাকায় ধান কাটছে তারা।

একটু পরেই পাওয়া গেল জমির মালিককে। নাম জুলফিকার আলী সেন্টু। তিনি জানান, মহাজনের নিকট পাঁচ মন বিঘাহারে ৫ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বোরোর আবাদ করেছিলেন তিনি। ধানও হয়েছিল ভাল। কিন্তু শেষ সময়ে বারবার ঝড়ো-বৃষ্টিতে সে ধানগাছ নুয়ে পড়ে জমিতে। জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় সে ধান কাটতে কোন শ্রমিক পাচ্ছিলেন না তিনি। অবশেষে সাতশ টাকা দিন হিসাবে ধান কাটাচ্ছেন তিনি। ফলন পেয়েছেন বিঘায় ১৬ মন। এতে তার এক বিঘা জমির ধান কাটাসহ মাড়াই শেষে ঘরে তুলতে খরচ পড়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা।

ভেড়ভেড়িপাড়ার বোরোর বর্গাচাষি মোজাফ্ফর হোসেন জানান, তিনিও ৫ হাজার টাকা বিঘা হারে ৫ বিঘা জমি নিয়ে বোরোর আবাদ করেছিলেন। তারও একই অবস্থা। শুধু জুলফিকার, মোজাফ্ফর নয় এমন অবস্থা উপজেলার শত শত বর্গাচাষির। যাদের কালবৈশাখী ও ঝড়-বৃষ্টিতে ধান গাছ নুয়ে পড়ে রয়েছে জমে থাকা পানিতে। ধান ঘরে তুলতে মিলছেনা শ্রমিক। পরিবারে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বহু কষ্টে তুলতে হচ্ছে ধান। এসকল বর্গাচাষির ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সরকারি সহায়তার দাবি উঠেছে চাষিদের মধ্যে।