ঢাকা | মে ১৯, ২০২৪ - ২:২৮ অপরাহ্ন

জীবিকার তাগিগে আবারও ব্যস্ত নগরীতে ফিরে যাচ্ছে মানুষ

  • আপডেট: Friday, May 6, 2022 - 7:39 pm

 

অনলাইন ডেস্ক: পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন শেষে জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছে কর্মজীবী মানুষ। ফলে রাজধানীর প্রবেশদ্বারগুলোতে বেড়েছে যানবাহনের চাপ। একই চিত্র দেখা গেছে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটেও। ঢাকা ছাড়ার সময় অনেক জায়গায় যানজটে পড়ে ভোগান্তির অভিযোগ পাওয়া গেলেও ফেরার সময় তেমনটা নেই। দুর্ভোগ না হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ঢাকামুখী মানুষজন।

শুক্রবার রাজধানীর সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, কমলাপুর, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড়। তবে বাড়ি যাওয়া মতো ফেরার পথেও তেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। অনেকেই ফিরছেন পরিবার নিয়ে। আবার অনেকে পরিবার ছাড়াই ফিরছেন।

গাবতলী বাস টার্মিনালে কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রায়হানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার কোনো ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি ফিরতে পেরেছি। আসার পথেও কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। ঈদের সময় বাড়ি গেলে ফিরতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু কাজের প্রয়োজনে ফিরতে হলো।

গাজী শরিফ গোপালগঞ্জে ঈদ শেষে ঢাকায় ফিরেছেন। তিনি বলেন, আমরা অনেকেই ঢাকায় জীবিকার প্রয়োজনে থাকি। আর সে জন্যই আবার ফিরতে হয়েছে। বেসরকারি চাকরিজীবীদের ঈদের ছুটি অল্প। তাই তাড়াতাড়িই কর্মস্থলে ফিরতে হলো।

খুলনা থেকে ঢাকায় আসা এহসান করিম বলেন, এবার ঈদযাত্রায় ভোগান্তি অনেকটাই কম হয়েছে। গত রবিবার স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। আজ চলে এলাম। সড়কে যানজট নেই।

রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনে হাজারের বেশি মানুষ ঢাকায় ফিরেছেন।

যমুনা এক্সপ্রেসের যাত্রী শাহ আলম বলেন, যাওয়ার সময় ভ্রমণ একটু কষ্টদায়ক হলেও, ফেরার ভ্রমণটা ভালো ছিল। ঈদের সময় পরিবার নিয়ে বাড়ি গিয়েছি। কাজের তাগিদে তাদের ছাড়াই ফিরতে হয়েছে।

সরিষাবাড়ী থেকে আসা জুয়েল মাহমুদ বলেন, ঈদের একদিন আগে অনেক কষ্ট করে বাড়ি গিয়েছিলাম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাকরি করি। তাই তাড়াতাড়িই চলে আসতে হলো। তবে ফিরতি পথে ট্রেনের টিকিট পেতে এবং আসতে কোনো ভোগান্তি হয়নি। খুব সুন্দরভাবে আসতে পেরেছি।

নৌপথে সকালে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে চাপ বেড়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশ পথ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায়। দূরপাল্লার পরিবহনের পাশাপাশি ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসা ঢাকামূখী যাত্রীর চাপ বেশি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও উঠেছে পরিবহণ মালিক শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। ফলে ফিরতি পথে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। মানিকগঞ্জ ও মাদারীপুর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

সরজমিন পাটুরিয়া-আরিচা ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, বেলা গড়াতেই মানুষের চাপ বাড়তে থাকে ফেরি ঘাটে। অধিকাংশ যাত্রী ভেঙে ভেঙে এসেছেন। ফলে ঘাট এলাকায় ভেঙে আসা যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাস মালিক-শ্রমিকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তারা বলছেন, পরিবহন স্বল্পতার কারণে বেশি ভাড়া আদায় করছে বাসগুলো।

রাজবাড়ি থেকে ঢাকা আসছেন কাজী জহির। তিনি বলেন, ‘অনেকটা সময় আগে ঘাটে এসেছি। কিন্তু গাড়ি কম থাকার কারণে প্রতিটা গাড়িতে ভিড় হচ্ছে। ভেবেছিলাম বেলা বাড়লে গাড়ি বাড়বে, একটু চাপ কমবে। তাই দেরি করলাম। কিন্তু দেখি আস্তে আস্তে ভিড় বাড়ছে।’

দুর্ভোগ না থাকলেও ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘাটের থেকে ঢাকার ভাড়া ১২০ টাকা। কিন্তু এখন গাড়ি কম থাকার কারণে ভাড়া নিচ্ছে দুইগুন। বাধ্য হয়েই যেতে হচ্ছে।’

পাটুরিয়া ঘাটে আসা বেশ কয়েকজন গার্মেন্টস কর্মীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সকাল ৮টার দিকে পাটুরিয়া ঘাটে আসেন। কিন্তু পরিবহন স্বল্পতার কারণে সকাল ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষায় রয়েছেন। দুয়েকটি বাস মাঝে মধ্যে আসলেও যাত্রীদের ভিড়ের কারণে বাসে উঠতে পারেননি তারা। আর ভাড়াও চাওয়া হচ্ছে অনেক বেশি।’

শিবালয় বাস মালিক সমিতির সভাপতি আলাল উদ্দিনের সঙ্গে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার ব্যাপারে এখনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

শিবালয় থানার ওসি শাহিনুর রহমান জানান, যাত্রীদের কাছে থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথের চিত্রটা একটু ভিন্ন। সেখানে দূরপাল্লার পরিবহনের তুলনায় ছোট গাড়ির পরিমাণ অনেক বেশি। ঘাটে ফেরি ভীড়তেই ছোট যানবাহনে ভরে যাচ্ছে। সকাল থেকেই লোকাল বাস, মিনিট্রাক, মাইক্রো, থ্রি-হুইলার ও মোটরসাইকেলে বাংলাবাজার ঘাটে আসছেন যাত্রীরা। ফেরি ঘাটে ফেরি নোঙর করার ১০ মিনিটেই পুরো ফেরি মটরসাইকেল আর হালকা কয়েকটি প্রাইভেটকারে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। পা ফেলার জায়গা থাকছে না। মুহূর্তের মধ্যে ফেরির মাস্টার সিগনাল দিচ্ছে এবং ছেড়ে যাচ্ছে ফেরি।

এরপর একই ঘাটে অন্য ফেরি আসতে না আসতেই মটরসাইকেলে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে দু’তিনটি মাইক্রো উঠতে পারছে। ঘাটে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বার বার মাইকে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে হুঁশিয়ারি বার্তা। ঘাটে যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী পারাপার করতেও দেখা গেছে। বাংলাবাজার রুটে ছয়টি ফেরি, ৮৬টি লঞ্চ ও শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করছে। ঘাট এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাবসহ পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে পটুয়াখালী থেকে আসা যাত্রী হিরু মোল্লা বলেন, ‘ঈদ এলেই আমাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। ঘাটে এলে ফেরিতে উঠতে পারি না। লঞ্চে যাত্রীদের ব্যাপক চাপ। পা ফেলার জায়গা নেই। ভাড়া খুব বেশি না নিলেও যাত্রীদের চাপে শেষ হয়ে যাই। যদি লঞ্চে ট্রিপের সংখ্যা বাড়নো যায়, তাহলে দুর্ভোগ কমবে। আর পুলিশ যদি লঞ্চের মালিকদের চাপ দেয় কম যাত্রী নিতে, তাহলে সমস্যা থাকে না।’

বরিশালের উজিরপুরের যাত্রী আহমেদ রতন বলেন, ‘মটরসাইকেল নিয়ে আসছি ঈদ করতে। যাওয়ার সময় যেমন ফেরিতে উঠতে কষ্ট হয়েছে, ঠিক তেমনই ফেরার পথেও একই কষ্ট। দীর্ঘ সময়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। অথচ ঘাটে বড় বড় ফেরি নোঙর করে রাখা। এই সময়ে যদি ফেরিগুলো ছাড়া হতো, তাহলে এতো কষ্ট হতো না। এদিকে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত।’

বাংলাবাজার ঘাটে কর্মরত বিআইডব্লিটিসির ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘এই ফেরিঘাটে আজ ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ রয়েছে। সাতটি ফেরি এই ঘাটে যাত্রী এবং যানবাহনগুলো পারাপারে নিয়োজিত রয়েছে। প্রতিটি ফেরিতেই ব্যাপক চাপ রয়েছে। তবে ঈদ শেষ হলেও কিছু যাত্রী এখনও গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে। এজন্য ৮৭টি লঞ্চ ছাড়াও এক শ’র উপরে স্পিডবোট চলছে। কোথাও কোনো অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর চুরি ছিনতাই রোধে। আশা রাখি, ঈদের আগের চেয়ে এখন বেশি নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হবো।’

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে এরই মধ্যে মানুষ ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে জানিয়ে সালাউদ্দিন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন জেলার যাত্রীবাহী বাসগুলোর যাত্রীরা নদী পার হয়েছে। তবে ঢাকামুখী যাত্রী ও যানবাহনের চাপ তুলনামূলক অন্য বছরের চেয়ে কম। গতবছর যে পরিমাণ চাপ ছিল, তার অর্ধেকও এবার নেই। তার অন্যতম কারণ লঞ্চ ও স্পিডবোট চালু থাকা। গতবার এসব বন্ধ ছিল।’

বাংলাবাজার লঞ্চ ঘাটে দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএ’র পুলিশ পরিদর্শক আক্তার হোসেন বলেন, ‘প্রতিবারই ঈদ শেষে ফেরার পথে যাত্রীদের চাপ একটু বেশি থাকে। এবারও দু’দিন ধরে যাত্রী চাপ রয়েছে। আমরা প্রতিটি লঞ্চে যেন অতিরিক্ত যাত্রী পারাপার না করে সেজন্য লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকদের চাপ দিয়ে আসছি। অনেক সময় যাত্রীরা তাড়াহুড়া করে লঞ্চে ওঠে, তখন আর তেমন কিছু করার থাকে না। তাও চেষ্টা করছি নিয়ম মেনেই যাত্রীরা পারাপার হোক।’