আটমাস ধরে বন্ধ ওভারপাসের কাজ
স্টাফ রিপোর্টার: কাজ শুরুর পর রাজশাহীতে আটমাস ধরে একটি ওভারপাস নির্মাণ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের টাকা না পাওয়ায় কয়েকজন ব্যক্তি জায়গা ছাড়েননি। ফলে শেষ মূহুর্তে এসে হাত গুটিয়ে বসে আছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এই ওভারপাসের জন্য রাস্তার কাজও শুরু হচ্ছে না। ফলে হাজারো মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে আগামী জুনেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকদফা এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এটি এখন ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের সমাপ্য প্রকল্পের তালিকায় আছে। ফলে আর একবারও প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ নেই। কিন্তু জমি বুঝে না পাওয়ায় ঠিকাদার কাজ করতে না পেরে বেকায়দায় পড়েছেন।
প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের রুয়েটের পূর্ব-দক্ষিণ কোণ থেকে মেহেরচণ্ডি, চকপাড়া ও খড়খড়ি বাইপাস পর্যন্ত চার লেনের পাঁচ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)। এর মধ্যে রুয়েটের পেছনে রেললাইনের ওপর ৮১০ মিটারের একটি ওভারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। এই ওভারপাসের উত্তরপাশে কয়েকটি বাড়ি ও দোকানপাট-গ্যারেজের জমির মালিকেরা অধিগ্রহণের টাকা পাননি। তাই তারা জায়গা ছাড়েননি। এতে পুরো প্রকল্পেরই কাজ আটকে আছে।
প্রকল্পের আওতায় রাস্তার দুই পাশে আরসিসি ড্রেন কাম ইউটিলিটি চ্যানেল, ৯টি আরসিসি কালভার্ট, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও টিএন্ডটি লাইনের কাজ রয়েছে। এসব কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা আরডিএকে তাগাদা দিচ্ছে। তবে কাজ শেষ করা যাচ্ছে না।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওভারপাসের উত্তর মুখের সামনেই কয়েকটি বাড়ি। প্রথম বাড়িটি মোজাম্মেল হকের। এ বাড়িতে ভাড়া থাকেন আসিদুল ইসলাম ও তারা বেগম দম্পতি। তারা জানান, বাড়ির মালিক টাকা পাননি। তাই বাড়িও ভাঙেননি। এ কারণে ওভারপাসের সংযোগ সড়কের কাজ শুরু হয়নি।
মোজাম্মেলের বাড়ির পরের বাড়িটা ইব্রাহিম হকের। তিনি জানান, তার দুই কাঠা ভিটার পুরোটাই অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি অনেক দিন আগেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু টাকা পাননি। সে কারণে তিনি জায়গা ছাড়েননি। ইব্রাহিম জানান, তিনি ২৪ লাখ টাকা পাবেন। এই টাকায় শহরের পাশে কোন এলাকায় জায়গা কিনবেন। জমি অধিগ্রহণের কারণে তিনি খুব ক্ষতিগ্রস্ত।
ইব্রাহিমের বাড়ির পর মো. মঈনুদ্দীনের বাড়ি। এরপর কয়েকটি দোকান এবং অটোরিকশার গ্যারেজ। এসবের জমি অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধ হয়নি। তাই কাজ বন্ধ। ওভারপাস এবং এর আশপাশে পড়ে আছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। স্থানীয়রা জানান, রাস্তার কাজ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাজারো মানুষকে। ধুলো ও কাঁদাপানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। উঁচু-নিচু রাস্তায় যানবাহনে চলাচল করতে কোমর ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রেললাইনের ওপর প্রথমে ওভারপাসের গার্ডারের উচ্চতা ধরা হচ্ছিল সাড়ে সাত মিটার। পরে পশ্চিম রেল কর্তৃপক্ষ আরও উচ্চতা বাড়াতে বললে ৯ মিটার করা হয়। এতে ওভারপাসের দৈর্ঘ্য বেড়ে যায়। এ কারণে ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন পড়ে। জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ টাকার একটি প্রাক্কলন গত বছরের ১৭ জুন আরডিএতে পাঠানো হয়। সবার টাকা পরিশোধ না করেই জেলা প্রশাসন গত ৬ এপ্রিল শূন্য দশমিক ৮২৮৮ একর জমি হস্তান্তর করতে চায়।
কিন্তু টাকা না পাওয়ায় মালিকেরা হস্তান্তর করতে রাজি হননি। এতে কাজও শুরু করা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সুমন চৌধুরী বলেন, ‘জমির মালিকানা স্বত্ব যাচাই করতে সময় লাগে। তাই টাকা পরিশোধ করা যায়নি। তবে দ্রুত যেন করা যায় সেই চেষ্টা চলছে।’
আরডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিক বলেন, ‘কাজ খুব বেশি নেই। তবে যা আছে তা ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় শেষ হচ্ছে না। এই জুনের মধ্যেই কাজ শেষ করতে হবে। মেয়াদ বাড়ানোর আর সুযোগ নেই। তাই দ্রুতই যেন অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয় সে জন্য আমি আবারও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে কথা বলব।’