ঢাকা | মে ১৪, ২০২৫ - ১০:২০ পূর্বাহ্ন

সালিসের রায় না মেনে ধর্ষণের মামলা করায় এলাকাছাড়ার হুমকি

  • আপডেট: Tuesday, April 26, 2022 - 9:48 pm

মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি: মান্দায় সালিসের রায় না মেনে ধর্ষণের মামলা করায় ভুক্তভোগী নারীসহ তাঁর পরিবারকে এলাকাছাড়া করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন ভাবে চাপ দিচ্ছেন সালিসের মাতবরেরা। এতে পরিবারটি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ঘটনায় ওই গৃহবধূর মেয়ে বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ আটজনের বিরুদ্ধে গত রোববার মান্দা থানায় অভিযোগ করেন।

ভুক্তভোগীর পরিবার বলছে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সালিসে গৃহবধূ ও তাঁর পরিবারকে তিরস্কার করা হয়। গৃহবধূর ‘ইজ্জতের মূল্য’ নির্ধারণ করা হয় ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে সালিসের খরচের নামে কেটে নেওয়া হয় ৯ হাজার টাকা। অবশিষ্ট ৫১ হাজার টাকা জমা রাখা হয়েছিল ইউপি সদস্য আব্দুল জব্বারের কাছে। সেই টাকায় ভাড়াটে লোক এনে তাঁদের এলাকাছাড়া করতে পাঁয়তারা করছেন ইউপি চেয়ারম্যানসহ সালিসের মাতবরেরা।

ভুক্তভোগীর পরিবার ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ওই ইউনিয়নে ৪০ দিনের কর্মসূচিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন ওই গৃহবধূ (৪৫)। সেখানে এক ব্যক্তির (৪৮) সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত ২৪ মার্চ ওই ব্যাক্তি তাঁর নিজ বাড়িতে ও ৩০ মার্চ এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণ করে। পরে ওই নারীকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায় ওই ব্যক্তি।

ঘটনা জানাজানি হলে গত ১৯ এপ্রিল ওই গৃহবধূ ও তাঁর মেয়েকে কৌশলে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সালিস বৈঠক বসানো হয়। বৈঠকে ইউপি চেয়ারম্যান ছাড়াও স্থানীয় কয়েকজন মাতবরসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

সালিসে গৃহবধূ ও তাঁর পরিবারকে তিরস্কার করাসহ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ টাকা থেকে ৯ হাজার টাকা কেটে নিয়ে অবশিষ্ট ৫১ হাজার টাকা জমা রাখা হয় ইউপি সদস্য আব্দুল জব্বারের কাছে। কিন্তু ভুক্তভোগী গৃহবধূ ও তাঁর মেয়ে এই সিদ্ধান্ত না মেনে সালিস থেকে চলে আসেন। পরে গত বুধবার থানায় ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেন ওই গৃহবধূ।

ওই নারীর মেয়ে বলেন, ‘সালিসের সিদ্ধান্ত না মেনে মামলা করায় ওই ব্যক্তির পক্ষ নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছেন। আমাদের এলাকাছাড়া ও প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। আমার বাবা দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে অন্যত্র থাকেন। বাড়িতে আমি, আমার নাবালক ছেলে ও মা থাকি। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

ধর্ষণের ঘটনা সালিসে মিমাংসার চেষ্টা, গৃহবধূ ও তাঁর পরিবারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে এলাকায় অনেক হইচই হচ্ছিল। ঘটনা জানার জন্য উভয়পক্ষকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে আনা হয়েছিল। সেখানে কোনো সালিস বৈঠক হয়নি কিংবা কাউকে জরিমানাও করা হয়নি। মামলা তুলে নেওয়ার হুমকির অভিযোগ সত্য নয়।

এ ব্যাপারে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান বলেন, ধর্ষণের ঘটনা সালিসে মিমাংসার চেষ্টা ও মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলে ওই গৃহবধূর মেয়ে থানায় গত রোববার একটি অভিযোগ করেছেন। অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পেলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS