‘ব্রেইন ওয়াশকারীদের তৎপরতা বন্ধ করতে পারলে শান্তি পেতাম’
অনলাইন ডেস্ক : অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যাচেষ্টা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া প্রধান আসামি ফয়জুল হাসানের ওপর রাগ ক্ষোভ নয় বরং মায়া ও করুণা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন এই লেখক ও সাহিত্যিক।
মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটের সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব এই মামলার রায় ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় জাফর ইকবাল বলেন, ‘ফয়জুলের প্রতি আর কোনো রাগ বা ক্ষোভ নেই। বরং তার প্রতি একধরনের মায়া ও করুণা আছে। কারণ তাকে দিনের পর দিন জেলখানায় থাকতে হবে। কিন্তু দেশে যেহেতু আইন আছে, আইন অনুযায়ী তাকে তার কাজের শাস্তি পেতে হয়েছে। তবে এ কারণে আমার কোনো আনন্দ নেই।’
মামলায় প্রধান আসামি ফয়জুল হাসানের যাবজ্জীবন ও ফয়জুলের বন্ধু মো. সোহাগ মিয়াকে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণাকালে আদালত চত্বরে ছিলেন না জাফর ইকবাল। ঢাকায় থাকা জাফর ইকবাল সংবাদমাধ্যমকে মুঠোফোনে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জানান।
হামলাকারী ফয়জুলের জন্য তার মায়া হয় জানিয়ে এই বিজ্ঞান লেখক বলেন, ‘যারা তাকে মারলে ফয়জুল বেহেস্ত পাবে- এমন ব্রেইন ওয়াশ করেছে তাদের চিহ্নিত করতে পারলে খুশি হতাম। আর ব্রেইন ওয়াশকারীদের তৎপর বন্ধ করতে পারলে শান্তি পেতাম।’
মঙ্গলবার ঘোষিত রায়ে মামলার বাকি ৪ আসামি ফয়জুল হাসানের বাবা মাওলানা আতিকুর রহমান, মা মিনারা বেগম, মামা ফজলুল হক ও ভাই এনামুল হাসানকে খালাস প্রদান করেছেন আদালত।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আসামি পক্ষের আইনজীবী মোতাহির আলী বলেন, রায়ে ৪ জন খালাস পেয়েছেন। এতে আমরা সন্তুষ্ট। দুজনকে দণ্ডিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আসামিদের সাথে আলাপ করে আমরা উচ্চ আদালতে যাবো।
মামলার বাদি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন বলেন, রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর আমরা আইনজীবীদের সাথে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।
এই আদালতের বিশেষ সহকারী কৌশলী মমিনুর রহমান টিটু বলেন, রায়ে প্রাথমিকভাবে আমরা সন্তুষ্ট। দ্রুততম সময়েই রায় হয়েছে। তারপরও পূর্ণাঙ্গ রায় পর্যালোচনা করে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৩ মার্চ বিকেলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে একটি অনুষ্ঠান চলাকালে জাফর ইকবালের ওপর হামলা হয়। মাদ্রাসাছাত্র ফয়জুল হাসান ছুরি দিয়ে জাফর ইকবালের মাথা ও ঘাড়ে উপর্যপুরি আঘাত করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্র-শিক্ষকরা হামলাকারী ফয়জুলকে হাতেহাতে ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন। পরে জাফর ইকবালকে আহত অবস্থায় প্রথমে এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।
এই ঘটনায় শাবি রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে সিলেটের জালালাবাদ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। ২০১৮ সালের ১৬ জুলাই ফয়জুলসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার তৎকালীন ওসি শফিকুল ইসলাম। ওই বছরের ৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়।