ঢাকা | জুলাই ২৬, ২০২৪ - ১২:২৬ অপরাহ্ন

রাজশাহীতে শব্দদূষণ রোধে অভিযান

  • আপডেট: Monday, April 25, 2022 - 11:28 pm

 

স্টাফ রিপোর্টার: পরিচ্ছন্ন, ছিমছাম আর নির্মল বাতাসের শহর হিসেবে বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করা রাজশাহী শহরের অন্যতম সমস্যা এখন শব্দদূষণ। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনএপি) ‘বার্ষিক ফ্রন্টিয়ারস রিপোর্ট-২০২২’ অনুযায়ী, বিশ্বে শব্দদূষণের শহরের তালিকায় শীর্ষে রাজধানী ঢাকা। আর চতুর্থ স্থানে রাজশাহী। এ খবর ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে।

সম্প্রতি জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত বৃহস্পতিবার ‘বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকেও শহরে শব্দের মানমাত্রা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। ফলাফল একই। নীরব এলাকা, আবাসিক এলাকা, মিশ্র এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা এবং শিল্প এলাকার মধ্যে রাজশাহী শহরের শিল্প এলাকা ছাড়া অন্য চার জায়গাতেই শব্দদূষণ দেখা গেছে। এ নিয়ে অভিযোগও পেয়েছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন।

তাই পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পক্ষ থেকে শব্দদূষণ রোধে অভিযান শুরু করা হয়েছে। সোমবার শহরের তালাইমারী ও আমচত্বর এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুমতাহিনা কবির। উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কবির হোসেন। এ ছাড়া নমুনা সংগ্রহকারী হিসেবে ছিলেন নীল রতন সরকার।

রাজশাহী নগর পুলিশের একটি দল এ অভিযানে সহায়তা করে। অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুমতাহিনা কবির হাইড্রোলিক হর্ন বাজানোর কারণে চারটি বাসের চালককে জরিমানা করেন। প্রত্যেকের কাছ থেকে আদায় করা হয় ৮০০ টাকা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সকালে প্রথমে নগরীর তালাইমারী এলাকায় অবস্থান নেন। সেখানে তিনটি যাত্রীবাহী বাসকে হাইড্রোলিক হর্ন বাজানোর জন্য ধরা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তার কাছে থাকা শব্দের মাত্রা পরিমাপক যন্ত্রে দেখেন, হাইড্রোলিক হর্ন বাজালে শব্দের মানমাত্রা ১০০ ডেসিবলের বেশি উঠে যাচ্ছে। তাই তিনি চালকদের জরিমানা করেন। পরে আমচত্বর এলাকায় গিয়ে তিনি আরও একটি বাসকে জরিমানা করেন। এ ছাড়া এই চার বাস থেকেই শব্দদূষণ করা হাইড্রোলিক হর্ন খুলে নেওয়া হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুমতাহিনা কবির জানান, তিনি যে আইনে জরিমানা করছেন তাতে শব্দদূষণের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও এক মাস কারাদণ্ডের বিধান আছে। রমজান মাস ও যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে সর্বোচ্চ শাস্তি না দিয়ে ৮০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া শব্দদূষণ না করার ব্যাপারে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে। তিনি জানান, শব্দদূষণের ব্যাপারে অভিযোগ পেয়ে এ অভিযান শুরু করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযান এখন অব্যাহত থাকবে।

এর আগে জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত ৪ এপ্রিল শব্দদূষণ রোধে শহরে অভিযান চালানো হয়েছিল। পরিবেশ অধিদপ্তরের ওই বিশেষ অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুমন চৌধুরী। সেদিন ‘নীরব এলাকা’ ঘোষিত এলাকায় যানবাহনের হর্ন বাজানোর কারণে দুজনকে জরিমানা করা হয়।

নীরব এলাকায় দিনে ও রাতে সর্বোচ্চ শব্দের মানমাত্রা থাকতে হবে ৫০ ও ৪০ ডেসিবেল। কিন্তু বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়নের পরীক্ষায় রাজশাহীর নীরব এলাকায় দিনে শব্দের মানমাত্রা পাওয়া গেছে ৮৪ ডেসিবেল। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ও রাতে সর্বোচ্চ শব্দের ঘনমাত্রা থাকতে হবে ৭০ ও ৬০ ডেসিবেল। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে শব্দের ঘনমাত্রা পাওয়া যায় ৮৮ থেকে ৯০ ডেসিবেলের মধ্যে। শুধু শিল্প এলাকায় শব্দের স্বাভাবিক মাত্রা পাওয়া গেছে। শিল্প এলাকায় দিনে ও রাতে সর্বোচ্চ শব্দের ঘনমাত্রা থাকতে হবে ৭৫ ও ৭০ ডেসিবেল। রাজশাহীর শিল্প এলাকায় শব্দের ঘনমাত্রা পাওয়া যায় ৭৪ ডেসিবেল।

প্রাপ্ত মানগুলো থেকে দেখা যায়, শিল্প এলাকা ছাড়া অন্যসব জায়গায় শব্দের নির্ধারিত মানমাত্রা অতিক্রম করেছে। বরেন্দ্র উন্নয়ন সংস্থা ও জাতিসংঘের পরীক্ষার আগেও পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী শহরে শব্দদূষণ নিয়ে এক জরিপ করেছিল। সেখানেও শহরের শব্দদূষণ ক্ষতিকর পর্যায়ে উঠে এসেছিল। শুধু তাই নয়, শব্দদূষণের কারণে শহরের ১১ শতাংশ মানুষ শ্রবণ সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছেন বলেও ওই জরিপে উঠে আসে।