ঢাকা | মে ৪, ২০২৪ - ৪:২৬ অপরাহ্ন

নিউমার্কেটে সংঘর্ষ: যারা হিট করেছে শুধু তাদেরই গ্রেপ্তার

  • আপডেট: Sunday, April 24, 2022 - 2:50 pm

অনলাইন ডেস্ক: রাজধানীর নিউমার্কেটে এলাকায় ব্যাবসায়ী-কর্মচারী আর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে নাহিদের খুনিদের শনাক্ত করেছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এদিকে চেহারা চেনা গেলেও এখনও অধরা রয়েছে খুনিরা।

তবে পুলিশ বলছে, এসব ঘটনায় অনেকেই অংশ নেয়, তবে সরাসরি যারা জড়িত ছিল, যারা ভিকটিমকে আঘাত করেছে শুধু তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হবে। এর জন্য তারাহুরা না করে হেলমেটধারীদের শনাক্তের জন্য কাজ চলছে, পুরোপরি নিশ্চিত হয়ে প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সিসিটিভি ক্যামেরা, মোবাইল ফোন ও গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে হেলমেটধারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় যে দুজন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে নাহিদকে পেটানোর সময়কার ছবি পাওয়া গেছে। মুরসালিন নামের আরেক নিহত দোকান কর্মচারীকে পেটানোর ছবি এখনও পাওয়া যায়নি। তবে তদন্তের স্বার্থে সবার নাম প্রকাশ করা ঠিক হবে না।

মঙ্গলবার ঢাকা কলেজের ঠিক বিপরীতে সংঘর্ষের সময় নূরজাহান সুপার মার্কেটের সামনের ফুটপাথে কালো ও সাদা স্টিপ রঙের পলো টি-শার্ট ও জিন্সপ্যান্ট পরা এক তরুণ নাহিদকে রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে দৌড়ে চলে আসেন। তার পেছন থেকে দৌড়ে যান ওই সংঘর্ষে থাকা মাথায় কালো হেলমেট ও ধূসর টি-শার্ট পরা এক তরুণ। তিনি ধারালো লম্বা ছোড়া নিয়ে এসে নাহিদকে নির্বিচারে কোপাতে থাকেন। তাদের দুজনের মুখমণ্ডল দেখা যাচ্ছিল। ওই সময় লাল টি-শার্ট ও হেলমেট পরা আরেকজন তরুণ তাকে বাধা দিতে আসেন। এরপর তারা ফিরে যান ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশে। তবে লাল টি-শার্ট পরা হেলমেটধারীকে চেনা যাচ্ছিল না। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ফুটেজে দৃশ্যটি ধরা পড়েছে।

হত্যা মামলা দুটির তদন্ত স্থানান্তর করা হয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে।

রোববার মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ধানমন্ডি জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার ফজলে এলাহী বলেন, হত্যা মামলাগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে যাচ্ছি। যারা প্রকৃত দোষী তাদের গ্রেপ্তারেই কাজ করছি। এর জন্য নির্ভুলভাবে কাজ করছি।

তিনি বলেন, যারা হিট অফ তা মোমেন্টে ছিলো, যারা হিট করেছে তাদেরকেই যেন বিচারের আওতায় আনা যায়। এমন আন্দোলনে অনেকেই অংশগ্রহণ করে, তবে যারা ভায়োলেন্ট করেছে, লোকাল অস্ত্র বা বড় অস্ত্র যারা ব্যবহার করে হত্যার মতো অন্যায় করেছে তাদের আইনের আনা হবে। এর জন্য শতভাগ নিশ্চিত হতে আমাদের নির্দেশনা আছে এবং ধীরেসুস্থ্যে কাজ করতে বলা হয়েছে। এর জন্য আমরা কোন তারাহুরা করছি না। শুধু মাত্র ভিকটিমের গায়ে যারা হিট করেছে এমন ব্যক্তিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। এরপরই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তারা দেখতে পেয়েছেন সংঘর্ষের সময় উভয়পক্ষেই হেলমেটধারীরা ছিল। এমনকি গণমাধ্যমকর্মীরাও হেলমেট মাথায় দিয়ে সংবাদ সংগ্রহে গিয়েছিলেন। তারাসহ আরও অনেকে ইট-পাটকেল থেকে মাথা বাঁচাতে হেলমেট পরেছিলেন। এই সুযোগে হেলমেট পরে তৃতীয় একটি পক্ষ সংঘর্ষ উস্কে দিতে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, হামলায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী ছাড়াও তৃতীয় কোনো পক্ষ উপস্থিত হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত যেখান থেকে শুরু, সেখানে থাকা দুই কর্মচারী ও তিন শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন গোয়েন্দা জালে রয়েছে। তিন শিক্ষার্থীকে খোঁজা হচ্ছে। ঘটনার পর তাদের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাদের বাড়িতেও খোঁজ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা বাড়িতেও নেই।

পুলিশের আরেক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ঈদকে সামনে রেখে দোকান মালিক-কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ধরপাকড় শুরু করলে পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। এজন্য ঈদের আগে আপাতত সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া অভিযান চালানো হবে না। ঈদের পর আসামিদের ধরতে একযোগে অভিযান চালানো হবে।

নিউমার্কেটের রক্তক্ষয়ী এই সংঘর্ষের সূত্রপাত যে দোকান কর্মচারীদের মাধ্যমে ঘটেছিল তারা সবাই আত্মগোপনে চলে গেছেন। এমনকি দোকান কর্মচারীদের নিজেদের মধ্যে মারামারি ঘটনায় প্রথম যে তিন জন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন তাদেরও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

এবিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক আইজিপি (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, নিউমার্কেটে ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ তদন্ত করছে। ঘটনাটি সবার সামনে ঘটেছে, অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুধু সিসিটিভি ফুটেজ নয়, প্রত্যেক সাংবাদিকের ক্যামেরার ফুটেজেও তথ্য রয়েছে।

তিনি বলেন, সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটেছে, আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে যে ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেয়া দরকার তা নেয়া হবে। নিউ মার্কেটের সংঘর্ষের ঘটনা সবার সামনে ঘটেছে। এ বিষয়ে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, নিউমার্কেটের সংঘর্ষের ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দোকান কর্মচারী মো. মুরসালিন (২৪)। এর আগে মঙ্গলবার রাতে নাহিদ (১৮) নামে এক কুরিয়ার সার্ভিস কর্মীর ঢামেক হাসপাতালে মারা যান।

সোমবার দিনগত রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ।

এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর ফের দফায় দফায় চলে সংঘর্ষ। দিনভর সংঘর্ষের পর সন্ধ্যায় পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। সংঘর্ষের তৃতীয় দিন বুধবার সারাদিন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করলেও সন্ধ্যার পর আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

তিনদিনের সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়ে ঢামেকসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ পুলিশের অনেক সদস্য আহত হয়েছেন।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউ মার্কেটের দোকান মালিক-কর্মচারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ঘটনায় পরিচয়ে প্রায় ১৩৫০ জনকে মানুষকে আসামি করে ৪টি মামলা হয়েছে।

এর মধ্যে বিস্ফোরণ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, জ্বালাওপোড়াও, পুলিশের কাজের বাধা দেয়ার অভিযোগ দুটি মামলা করেছেন নিউমার্কেট থানার এসআই মেহেদী হাসান ও পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামিন কবির।

আর সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত ডেলিভারিম্যান নাহিদ মিয়ার চাচা মো. সাঈদ হত্যার অভিযোগ এনে অন্য মামলাটি দায়ের করেছেন। অন্যদিকে দোকান কর্মচারী মোরসালিন নিহতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে আরেকটি হত্যা মামলা হয়েছে। এ মামলাতেও অজ্ঞাত পরিচয় ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। হত্যা মামলা দুটির তদন্ত স্থানান্তর করা হয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে।

সোনালী/জেআর