ঢাকা | মে ১১, ২০২৫ - ২:০০ পূর্বাহ্ন

‘গান-উপন্যাস-সিনেমার সেই নদী কোথায়?’

  • আপডেট: Saturday, April 23, 2022 - 9:53 pm

স্টাফ রিপোর্টার: ‘পদ্মা নদীকে নিয়ে গান হয়েছে “সর্বনাশা পদ্মা নদী”, উপন্যাস লেখা হয়েছে। সেই উপন্যাস থেকে সিনেমা হয়েছে “পদ্মা নদীর মাঝি”। সেই নদী আজ কোথায়? আমরা সেই নদী ফিরে পেতে চাই। পদ্মা শুকিয়ে যাওয়ার জন্য ভারত যেভাবে দায়ী তার জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।’

ফারাক্কা বাঁধ চালু দিবস উপলক্ষে রাজশাহীতে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) আয়োজিদ প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এমন কথা বলেছেন। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, কয়েক দশক আগেও উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো শুকনো মৌসুমেও ভরা থাকতো। পানির স্তরও উপরে ছিল। ফসল ফলাতে কৃষকদের পানির জন্য হাহাকার করতে হত না। কিন্তু কয়েক দশকে ভারত সরকার পদ্মাসহ আন্তর্জাতিক ৫৪টি নদী নানাভাবে শাসন করেছে। তাঁরা নদীগুলোতে বাঁধ তৈরি করে এই অঞ্চলকে মরুকরণের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এতে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এই নদীগুলোর পানির সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে এবং সরকারকে ভারত সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।

তারা বলেন, ১৯৬১ সালের ভারতের গঙ্গা আর আর এদেশের পদ্মা নদীর উপর ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু হয়। ১৯৭৫ সালে মুজিব-ইন্দিরা গান্ধীর একটি চুক্তির মাধ্যমে ২১ এপ্রিল এই বাঁধ পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ৬০ ভাগ পানি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই পানির হিস্সা বাংলাদেশ পায়নি। উল্টো ভারত থেকে আসা বাংলাদেশের উপর বয়ে যাওয়া ৫৪টি নদীকে ভারত সরকার শাসন করছে। এই নদী শাসনের ফলে এদেশ মরুর মতো হয়ে যাচ্ছে। মাটির নিচের পানি আরও নিচে নামছে।

বাসদের সমন্বয়ক আলফাজ হোসেন বলেন, পদ্মাকে গান হয়েছে ‘সর্বনাশা পদ্মা নদী’, উপন্যাস লেখা হয়েছে। সেই উপন্যাস থেকে সিনেমা হয়েছে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’। সেই নদী আজ কোথায়? ভারত নিজেদের সাম্রাজ্যবাদকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই বাঁধ দিয়েছিল। এই বাঁধের প্রতিবাদ শুরু থেকেই বাংলাদেশ করে আসছে। ১৯৭৬ সালে মজলুম জননেতা মাওলানা হামিদ খান ভাসানী ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে লং মার্চ করেছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষ তাতে অংশ নিয়েছিল। তখন ভাসানী বলেছিলেন, এই বাঁধ থাকলে এই অঞ্চল মরুভূমি হয়ে যাবে। আজ এত বছর পর সেই মরুর দিকেই এই অঞ্চল ধাবিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ভারত বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তর নদী তিস্তাতেও বাঁধ দিয়েছে। এই নদীকে ধ্বংস করে ফেলেছে। টিপাইমুখ বাঁধ দিয়ে তাঁরা এদেশের সব নদীকে ধ্বংস করার চক্রান্তে মেতে উঠেছে। অথচ এদেশের সরকার কোনো কিছু করতে পারছে না। এ দেশকে বাঁচাতে হলে আন্তর্জাতিক নদীর উপর বাঁধ তুলে ফেলতে হবে। এ জন্য এদেশের সরকারকে শক্ত হয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হবে। নদীতে বাঁধ দেওয়ার কারণে এদেশের যত ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতিপূরণও আদায় করতে হবে। এটা সময়ের দাবী।

সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রিদম শাহরিয়ার বলেন, ভারত শুকনো মৌসুমে এদেশে পানি ছাড়ে না। যখন এখানকার পদ্মা এমনিতেই ভরপুর থাকে, তখন তাঁরা পানি ছেড়ে দিয়ে এই অঞ্চলকে ডুবিয়ে দেয়। ফারাক্কাসহ অন্যান্য বাঁধ দেওয়ার কারণে এই অঞ্চলের নদীকেন্দ্রিক মানুষের জীবিকা বন্ধ হয়ে গেছে। এখানকার মুরুব্বি যারা আছেন, তাদের কাছে পদ্মার গর্জনের কথা শোনা যায়। তাঁরা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন তাঁরা পেশা হারিয়ে অন্য কাজ করছেন। পদ্মার উপর দিয়ে বড় চর পড়ে গেছে। এই বাঁধ এখনও সরিয়ে নেওয়া গেলে এই অঞ্চল বাঁচবে। তাই এটা করতে হবে। কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন- বাসদের ছাত্রফ্রন্টের নগর কমিটির আহ্বায়ক সজীবুর রহমান, পবা থানার বাসদের সংগঠক সদীশ চন্দ্র প্রমুখ।

 

 

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS