শিক্ষা খাতে বাজেট বাড়িয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যয় চান পরিকল্পনা মন্ত্রী
অনলাইন ডেস্ক: দেশের শিক্ষা খাতে বাজেট অনেক কম বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেছেন, শিক্ষা খাতে আামাদের বাজেট বাড়াতে হবে। এই খাতেই আমাদের সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা উচিত।
শনিবার রাজধানীর একটি অভিজাত কনভেনশন সেন্টারে ‘শিক্ষার বাজেট, বাজেটের শিক্ষা: শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, কোথায় আছি আমরা’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার বাজেট নিয়ে আমি স্বীকার করি এক বাক্যে শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বাড়াতে হবে। যদিও আমাদের শিক্ষার হার কম। আমাদের সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা উচিত শিক্ষা খাতে। আমি একজন পরিসংখ্যান সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করি। সারা দেশের তথ্য সংগ্রহ করি। তারপর সেসব তথ্যের ভিত্তিতে পরিকল্পনা করতে চেষ্টা করি।’
‘আমাদের দেশের বড় সমস্যা হচ্ছে বাস্তবায়ন। আমরা অনেক কিছুই ভাবি কিন্তু বাস্তবায়ন হয় কম তবে শিক্ষা নিয়ে আমি বলব শিক্ষায় বাজেট অবশ্যই বাড়ানো উচিত। আমি এটা নিয়ে বারবার কথা বলি সংসদে। সামনে আরো বেশি করে বলব যেন শিক্ষায় বাজেট বাড়ানো হয়’—যোগ করেন মন্ত্রী।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্যাম্পেইন ফর এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। সেমিনারে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষাবঞ্চিত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে সেগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানান।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘গত দুই বছর করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায়নি। অনেক মেয়েদেরই এসময়ে বিয়ে হয়ে গেছে। কোভিড-১৯ শিক্ষা খাতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের এ ক্ষতি কাটাতে এই উদ্যোগ অনেক কাজে দেবে।’
গণমাধ্যমকর্মীদের পক্ষ থেকে চ্যানেল আইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি মোস্তফা মল্লিক বলেন, ‘রাজধানীর ক্লাস ফাইভের বাচ্চার কথাবার্তা আর গ্রামের ক্লাস দশম শ্রেণির একজনের কথাবার্তা অনেক আলাদা। উপবৃত্তির টাকা প্রভাবশালী আর চেয়ারম্যানদের বাচ্চাকাচ্চারাই পায়। পৌরসভার মেয়রদের দুই কোটি টাকা দামের গাড়ি দিচ্ছি। তাহলে প্রাথমিকে ১২৫ টাকা উপবৃত্তি দিয়ে কীভাবে চলে?’
সিপিডি রিসার্চ ফেলো মুনতাসির কামাল বলেন, ‘শিক্ষা সব জায়গায় একটা প্রায়োরিটি সেক্টর হিসেবে রাখা হয়েছে। তবে বাজেটের খরচের দিকে তাকালে দেখা যায় তা সাংঘর্ষিক। বাজেট যদি বাড়ানো না হয় তাহলে শিক্ষায় উন্নয়ন হবে কীভাবে। আমরা গত বছরগুলো থেকে যদি দেখি তাহলে দিনদিন শিক্ষায় বাজেট বাড়ার চেয়ে কমছে।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া হারের দিকে তাকালে শঙ্কা থেকে যায়। দুইবছর যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল এটা অনেকটাই ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। আসছে বাজেটে শিক্ষার ঝুঁকি কাটাতে যেমন ভূমিকা রাখতে হবে তেমনি সেগুলো কাটিয়ে উঠার ওপরও বিশেষ নজর দিতে হবে।’
শিক্ষা আইন প্রণয়ন ছাড়া শিক্ষানীতি অনেক কিছুই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ বলেন, ‘শিক্ষা নিয়ে অনেকদিন ধরে কাজ করছি। শিক্ষানীতিতে অনেক কিছুই আছে যা বাস্তবায়ন হয়নি এখনো এবং শিক্ষা আইন ছাড়া করা সম্ভবও নয়।
‘প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমি কথা বলেছি। সরকার বলেছে শিক্ষা আইন করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আড়াই বছর চলে গেলেও সেই আইন আর হয়নি। কবে নাগাদ হবে তা জানতে ইচ্ছে করছে। শিক্ষা আইন ছাড়া শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব নয়।’
ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ বীরা মেন্ডোরা বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত আধুনিক রাষ্ট্র। তবে এ দেশের শিক্ষার মান ও ব্যবস্থা উন্নত বিশ্ব থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। এখনো এ দেশের গ্রামীণ পর্যায়ে শিক্ষার মান এতটা উন্নত নয়। এর ফলে এই দেশে অনেক মেধাবী থাকা সত্বেও তারা সেভাবে তৈরি হতে পারছে না। তাই শিক্ষায় বাজেট বাড়িয়ে তাদের সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়া গেলে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়া সম্ভব। আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিবে এখনকার শিশু। তাই তাদের যত্নে সবকিছু করা উচিত।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন, এডুকেশন পলিসি ২০১০ ফরমুলেশন কমিটির সদস্য প্রিন্সিপাল কাজি ফারুক আহমেদ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেলিগেশন হান্স লেমব্রেছট, ব্রিটিশ হাইকমিশনের ইনচার্জ এইচ ই জাবেদ প্যাটেল, কমিটি অন গভর্নমেন্ট অ্যাসুরেন্স বাংলাদেশ সংসদের সদস্য এরোমা দত্ত এমপিসহ আরো অনেকে।