সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
অনলাইন ডেস্ক: সরকার যখন দেশের উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত, তখন কিছু মানুষ অপপ্রচার আর সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশের অগ্রযাত্রা রুখে দিতে এবং সাধারণ মানুষের উন্নয়ন ব্যাহত করতেই এই ষড়যন্ত্র।
বুধবার কৃষক লীগের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি প্রায়ই শুনি বক্তৃতায়, আমাদের দেশের কিছু নেতা আছেন। দুঃসময়ে মানুষের পাশে কতটুকু দাঁড়িয়েছে সেটা জানি না। করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কোনো সাহায্য করেছে কিনা, সেটার লক্ষণ আমরা দেখিনি। তবে তারা খুব আন্দোলনের জন্য ব্যস্ত, কী? এই সরকারকে হটাতে হবে। কোন সরকার? আওয়ামী লীগ সরকার।
এখানে বিএনপি-জামায়াতে জোট, তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আমাদের মান্না সাহেব, ড. কামাল হোসেনসহ তাদের একগ্রুপ। সেই সঙ্গে তাদের সঙ্গে যুক্ত কমিউনিস্ট পার্টি এবং আমাদের বাম দল, বাসদসহ কারা কারা। তারা সবাই নাকি এক হয়ে আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে হটাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার প্রশ্ন, আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী? আমরা যে ২০০৮ সরকারে এসেছিলাম, সেই সময় যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলাম। সেখানে রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা দিয়েছিলাম। নির্বাচনী ইশতেহারের লক্ষ্য অর্জন করেছি। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি। সেই সময় আমরা অর্জন করেছি বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছি। আমার প্রশ্ন- এটা কি তাদের ভালো লাগেনি। সেই জন্য তারা এই সরকারকে হটাতে চায়।
ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে ঘর দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি মানুষ, যার জমি নাই, ঘর নাই, কিছু নাই। একটি ঘর পাওয়ার পর জীবন জীবিকার পথ খুঁজে পাচ্ছে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে। এটা কি আওয়ামী লীগের অপরাধ? এই জন্যই কি এই সরকার হটাতে হবে।
পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্ধারিত সময়ের আট মাস আগেই নির্মাণ করায় সরকারের ১৫০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, অনেকই প্রশ্ন করেন এত টাকার, এত বড় বড় প্রজেক্টের প্রয়োজনটা কি? শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে গেলে, বিদ্যুৎতো আমাদের তৈরি করতেই হবে। আমরা যে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার মতো বাঁচাতে পারলাম, এই কথাতো কেউ বলেন না। এটা বলতে বোধহয় তাদের একটু কষ্টই হয়। একটা প্রজেক্টে টাকা আরও বেশি লাগবে। সেখানে টাকা সাশ্রয় হবে, সময় বাঁচবে, এটা বোধহয় আমাদের সমালোচকদের পছন্দ না।
তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সরকারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, আমরা গ্রাম পর্যায়ে রাস্তা, ব্রিজ, সেতু নির্মাণ করে দিচ্ছি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষকে যেখানে কাদা পায়ে হাঁটতে হতো, এখন তা হয় না। সেই রাস্তাঘাট করে দিচ্ছি। বোধহয় এটাও তাদের কাছে অপরাধ।
সাধারণ মানুষের জন্য সরকার গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিনা মূল্যে বই দিচ্ছি। দুই কোটি ৩০ লাখের মতো ছেলে-মেয়ে বৃত্তি ও উপবৃত্তি পাচ্ছে। মায়ের নামে মোবাইলের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে যাচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তার টাকাও মোবাইলের মাধ্যমের পৌঁছে যাচ্ছে।
দারিদ্র বিমোচনে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাকালীন সময়েও আমাদের দেশের দারিদ্রের হার হ্রাস পেয়েছে। আমরা বহুকাজ আমরা করে যাচ্ছি। আমার প্রশ্নটা হচ্ছে আমরা যে কাজগুলো করে যাচ্ছি, এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে। গ্রামের মানুষ উপকার পাচ্ছে। তারা যে সরকার উৎখাত করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যটা কি? মানুষগুলোকে এই সমস্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে দেওয়া? এটাই তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। সেই জন্যই তাদের শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করতে হবে।
বিরোধীদের কাছে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধটা কি করেছি এখানে? তারা লুটপাট করে খেয়েছে, মানুষ খুন করেছে। তাদের হাতে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী খুন হয়েছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে জীবন্ত মানুষকে হত্যা করেছে। ২০১৩ সালের কথা সকলের মনে আছে। ২০১৫ সালে কিভাবে মানুষকে হত্যা করেছে।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কায়দায় দেশে অত্যাচার ও নির্যাতন করেছিলো বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বের কাছে যখন আমরা উন্নয়নের রোল মডেল, তখন আমাদের দেশের কিছু মানুষ, বিদেশের কাছে নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে ব্যস্ত। সরকার উৎখাতে ব্যস্ত। খুব ভালো কথা, তাদের কর্মসূচি জনগণের কাছে তুলে ধরুক। যে, দেশের মানুষের জন্য তারা কি করবে।
আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষের জন্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বলে জানান এই সময় প্রধানমন্ত্রী। কর্মসূচির মধ্যে ডেল্টা প্ল্যান, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ের কথা তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, কৃষক লীগকে যখনই যে কাজ করতে বলেছি। তারা সেইভাবে করেছেন। আগামীতেও আপনারা কৃষকের পাশে থাকবেন। কৃষকের সুখ-দুঃখের সাথী হবে সংগঠনটি বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, নতুন নতুন দাবি তোলা লাগবে না, এই দেশের কৃষকের জন্য কিসে মঙ্গল, সেটা আমরা ভালোভাবে জানি এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। বাংলার কৃষকই আমাদের প্রাণ শক্তি।
এবার ধান কাটার সময় আবারও কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে কৃষক লীগকে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।