ঢাকা | জুলাই ২৭, ২০২৪ - ৬:০৯ পূর্বাহ্ন

রাজশাহীতে আশীর্বাদ হয়ে এলো বৃষ্টি

  • আপডেট: Wednesday, April 20, 2022 - 8:20 pm

 

স্টাফ রিপোর্টার: শেষবার কবে বৃষ্টি হয়েছিল তা ভুলেই গিয়েছিলেন রাজশাহীর মানুষ। কখনও তীব্র, কখনও মাঝারি তাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল প্রাণিকূল। খরার কবলে পড়ে পুড়ছিল বরেন্দ্রর ফসলের খেত, ঝরে পড়ছিল গাছের আম। একটু বৃষ্টির জন্য আকাশপানে চেয়ে ছিলেন চাষী। অবশেষে রাজশাহীতে সেই স্বস্তির বৃষ্টি নেমেছে।

বুধবার ভোর ৪টা ৪৩ মিনিটে বৃষ্টি শুরু হয়। চলে ৫টা ৮ মিনিট পর্যন্ত। এই ২৫ মিনিটে ১৭ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। কোন এলাকায় ২৪ ঘণ্টায় ১০ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ‘মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত’ বলে। রাজশাহীতে এই বৃষ্টিই হয়েছে। এই বৃষ্টিটাই আমের জন্য ‘টনিক’ বলছেন গবেষকেরা।

বৃষ্টির পর গাছের আম যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সতেজ হয়ে উঠেছে লিচুর গুটিও। এখন গাছে গাছে চকচকে সবুজ পাতার ফাঁকে আমগুলোকেও সুন্দর দেখাচ্ছে। তাই বৃষ্টি হওয়ায় উৎফুল্ল চাষিরা। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মিলিকবাঘা গ্রামের আমচাষি রফিকুল ইসলাম জানান, খরার কারণে ছোট ছোট আম ঝরে ঝরে পড়ছিল। বড় হচ্ছিল না। এখন দ্রুত আম বড় হবে। ঝরে পড়বে না। এ রকম একটা বৃষ্টির জন্য আমের গুটি আসার পর থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন তিনি।

বৃষ্টির পর সকালে বাগানে বাগানে আম দেখতে বেরিয়েছিলেন রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আবদুল আলীম। বৃষ্টি কেমন হলো জানতে চাইলে বললেন, ‘এটা তো আমের জন্য টনিক হয়ে গেল। শক্তিবর্ধক টনিক যেমন মানুষের উপকার করে, তেমনি এই বৃষ্টিও আমের জন্য তাই। টানা খরার পর এ রকম বৃষ্টি খুব উপকারী। এখন আম খুব দ্রুত বড় হবে।’ তিনি বলেন, খরা হলে আমরা চাষিদের গাছের গোড়ায় পানি দিতে বলি। কিন্তু প্রাকৃতিক পানির আলাদা একটা গুণ আছে।’ তিনি জানান, রাজশাহীতে এবার গাছে আম কম। খরায় কিছু গুটি ঝরেছেও। তাও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে তিনি আশা করছেন। কারণ, বাগান বেড়েছে। তাছাড়া গাছে আম কম থাকলে তা আকারে বড় হয়। এখন বৃষ্টি হওয়ায় আমের এই বড় হওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে।

বৃষ্টিতে অন্য ফসলের চাষিদেরও উপকার হয়েছে। কিছু জায়গায় ধান কিছুটা হেলে পড়লেও ক্ষতির চেয়ে উপকার বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ‘বোরো ধানে তো প্রচুর পানি লাগে। প্রাকৃতিক পানি পেয়ে যাওয়ায় চাষির খরচ কমল। তাছাড়া অনেক জায়গাতেই লম্বা সিরিয়াল ছাড়া সেচের পানি পাওয়া যায় না। বৃষ্টিতে সবাই পানি পেলেন।’

তিনি জানান, বৃষ্টিতে সবজি চাষীদেরও উপকার হয়েছে। যে সমস্ত এলাকায় সেচের ব্যবস্থা নেই সেখানেও পাট এবং তিলের চাষ হয়। প্রাকৃতিক বৃষ্টির অভাবে পাট ও তিলবীজ ছিটানো যাচ্ছিল না। এখন চাষিরা পাট ও তিলবীজ ছিটিয়ে দেবেন। মোজদার হোসেন বলেন, এখন কয়েকদিন তাপমাত্রা শীতল থাকবে। টানা খরার পর এটাও কৃষির জন্য খুব উপকার। কৃষকের জন্য আশীর্বাদ হয়েই এসেছে এই বৃষ্টি।

এদিকে কয়েকদিন আগেই রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। বৃষ্টির পর শীতল আবহাওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরেছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, মঙ্গলবারও রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টির পর বুধবার ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পাওয়া গেছে ২০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন কয়েকদিন তাপমাত্রা সহনীয় থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।